1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌দেখো রে’ - কলকাতার নতুন আড্ডা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩ মে ২০১৭

কলকাতার বিখ্যাত লাল দিঘির পাড়ে প্রতি সপ্তাহ শেষে বসছে বাঙালি খাবার আর বাঙালি সংস্কৃতির আসর ‘‌দেখো রে’, কলকাতা পুরসভা আর রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে৷

https://p.dw.com/p/2cGNj
Kolkata Food Festival
ছবি: Sirsho Bandopadhyay

কোনও জায়গা যদি প্রাণচঞ্চল না থাকে, তা হলে সেই জায়গা সজীব থাকে না৷ যে কারণে ঐতিহ্যবাহী এলাকাতেও এমন আয়োজন রাখতে হয়, যাতে যেখানে নিয়মিত মানুষের পা পড়ে৷ সেই যাতায়াতেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এক একটি অঞ্চল৷ এটি মূলত ইউরোপীয় ধারণা, যেখানে শহরের ঐতিহ্য-এলাকাগুলি সহজেই মিলেমিশে থাকে নগরজীবনের সঙ্গে৷ অবশেষে কলকাতাতেও সেই উদ্যোগ নেওয়া হলো৷ শহরের অফিসপাড়া বলে পরিচিত যে অংশ, সেই ডালহৌসি, যার এখনকার নাম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের তিন বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশের নামে, সংক্ষেপে বিবাদী বাগ, সেই অঞ্চল পুনরুজ্জীবিত হলো এই বাংলা নতুন বছর থেকে৷

এই বিবাদী বাগের মধ্যমণি হচ্ছে ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং, বা মহাকরণ, যা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে রাজ্যের সদর প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল৷ এখানেই মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবেরা বসতেন৷ এখান থেকেই যাবতীয় সরকারি কাজ পরিচালনা করা হতো৷ এই মহাকরণের ঠিক সামনেই লাল দিঘি, যা আরেক ঐতিহ্যবাহী এলাকা৷ মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়, মহাকরণ ভবন থেকে প্রশাসনিক সদর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ঐতিহ্য ইমারত হিসেবে ঘোষিত এই ভবনের আমূল সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে৷ তার আগেই অবশ্য এই গোটা এলাকা কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল৷ নতুন সরকারের সিদ্ধান্তে প্রশাসনিক কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় হুগলি নদীর অন্য পাড়ে ‘‌নবান্ন’ ভবনে এবং রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সংস্কার, তাকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়৷

কিন্তু সেই সময় থেকেই ঝিমিয়ে পড়েছিল একদা শহরের ব্যস্ততম এই এলাকা৷ আবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগে এই অঞ্চলের প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসছে গত পয়লা বৈশাখ থেকে৷ লালদিঘির পাড়ে প্রতি সপ্তাহান্তে শুরু হয়েছে বাঙালি সুখাদ্যের মেলা৷ শহরের ১৮টি সুখাদ্য প্রতিষ্ঠান প্রতি শনি-রবিবার এখানে স্টল চালু করেছেন, যেখানে থাকছে রসনাতৃপ্তির আয়োজন৷ এছাড়াও তৈরি হয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ, যেখানে সান্ধ্য অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হচ্ছে বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে৷ বাউল গান, ছৌ নাচের মতো আত্মিকভাবে বাঙালি সংস্কৃতির এক আসর বসছে নিয়মিত৷ সঙ্গে থাকছে বাংলা লোকশিল্প, নানা ঘরানার হস্তশিল্পের পশরা৷ সব মিলিয়ে বাঙালিয়ানায় জমজমাট থাকছে প্রতিটি সপ্তাহশেষের সন্ধে৷

কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য পর্যটন দপ্তর এই সাপ্তাহিক উৎসবের উদ্যোক্তা, যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘‌দেখো রে’৷ হ্যাঁ, পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছোটদের সিনেমা ‘‌গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর গান ‘‌দেখো রে, নয়ন মেলে, জগতের বাহার’ থেকেই ধার করা হয়েছে নামটি, যেখানে জগত না হলেও বাংলার বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা হচ্ছে মানুষের সামনে৷ এবং শহর কলকাতা তো বটেই, শহরতলীর লোকেরাও শনি-রবির ছুটির দিন উজিয়ে আসছেন অফিসপাড়ায়৷ খবর পেয়ে আসছেন বিদেশি পর্যটকরা৷ সপ্তাহ শেষের সন্ধ্যায় যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ঘুমিয়ে পড়া অফিসপাড়া৷ কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই বাঙালি সুখাদ্য ও সংস্কৃতি উৎসব এখন চলবে৷ ভবিষ্যতে সম্ভবত আয়তনে, আয়োজনে আরও বৃদ্ধি পাবে৷ কলকাতার বাসিন্দা এবং এই শহরের অতিথিদের নতুন আড্ডার জায়গা হয়ে উঠবে ‘‌দেখো রে’৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...