1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌দূষিত বরফ দিয়ে পানীয়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১ মে ২০১৭

খাবারে ভেজালের কথা অনেক শোনা যায়, কিন্তু মর্গে ব্যবহার্য, মৃতদেহ সংরক্ষণের বরফ দিয়ে পানীয় তৈরি!‌ এমন ঘটনা হইচই ফেলল খাস কলকাতা শহরে৷

https://p.dw.com/p/2cBoO
Indien Kalkutta - Summer Drinks
বিক্রেতারা মর্গে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার্য বরফ পানীয়ে মেশাচ্ছেন বলে অভিযোগছবি: DW/P. Samanta

বরফ দু ধরনের হয়৷ পরিশ্রুত পানীয় জল হিমায়িত করে তৈরি বরফ, যা খাওয়ার যোগ্য৷ আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস, যা কল-কারখানা থেকে শুরু করে নানা শিল্পক্ষেত্রে, মূলত ঠান্ডা করার কাজে ব্যবহার হয়৷ এই বরফ মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত নয়৷ যেহেতু অপরিশোধিত জল থেকে তৈরি, এই বরফ পানীয়ে মেশালে, সেই পানীয় খেয়ে লোকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন৷ জন্ডিস, টাইফয়েড থেকে শুরু করে নানা ধরনের জলবাহিত রোগ হতে পারে এই বরফ খেলে৷

Indien Kalkutta Sot Drink
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সম্প্রতি কলকাতায় হইচই পড়ে গেছে যে রাস্তার ধারের একাধিক পানীয় বিক্রেতা, যাদের এই গরমের মরশুমে ব্যবসা বহুগুণ বেড়ে যায়, তারা মর্গে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার্য বরফ পানীয়ে মেশাচ্ছে৷ কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ আচমকা পরিদর্শনে বেরিয়ে নিউ মার্কেট এলাকার অন্তত ১০ জন পানীয় বিক্রেতাকে হাতেনাতে ধরেছেন, যারা এই বরফ ব্যবহার করছিল৷ পুরসভা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে এদের বিরুদ্ধে৷ পাশাপাশি এলাকার একটি বরফের দোকানেও যান অতীন ঘোষ, যেখান থেকে পানীয় বিক্রেতারা বরফ সংগ্রহ করে৷ এবং সেটা মানুষের খাওয়ার অযোগ্য, অনেক সস্তাদরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস৷ মেয়র পারিষদ এরপর নিয়ম জারি করেছেন, এবার থেকে ওইসব দোকানের সামনে নোটিস ঝুলিয়ে জানাতে হবে যে, এই বরফ মানুষের খাওয়ার জন্য নয়৷ নজর রাখা হবে পানীয় বিক্রেতাদের ওপর৷ কিন্তু পুরসভার এই অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে, যাঁরা অনেকেই রাস্তার ধার থেকে এরকম বরফ দেওয়া রঙিন পানীয় কিনে খান৷

‘সংবাদমাধ্যমে বরফ নিয়ে কিছুটা অকারণ আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে’

ডয়চে ভেলেকে মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানালেন, সংবাদ মাধ্যমে এই বরফ নিয়ে কিছুটা অকারণ আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, মর্গে ব্যবহারের বরফ, ইত্যাদি বলে৷ হ্যাঁ, আরও অনেক প্রয়োজনের মতো, মর্গে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রয়োজনেও এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস ব্যবহার করা হয়৷ সেই বরফ কিছু অসাধু পানীয় বিক্রেতা ব্যবহারও করছে, কিন্তু মর্গের সঙ্গে এর সরাসরি কোনো সংযোগ নেই৷ বাজারে মাছ, সবজি সংরক্ষণের জন্যও এই একই বরফ ব্যবহৃত হয়৷ শুধু এই বরফ খাওয়া যায় না৷

তবে অতীন ঘোষ জানালেন, সংবাদ মাধ্যমের সুবাদেই বিষয়টি লোকের নজরে পড়েছে এবং তাঁরা আশা করছেন যে, সবাই এ থেকে আরও সচেতন হবেন৷ রাস্তার ধার থেকে পানীয় কিনে খাওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হবেন৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, শহরের রাস্তায়, গরমকালে, অন্তত দুটি পানীয়ের ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইসের ঢালাও ব্যবহার হয় এবং সাধারণ মানুষ বেখেয়ালেই সেই দূষিত বরফ দেওয়া পানীয় খান৷ একটি আখের রস এবং অন্যটি দইয়ের ঘোল, বা লস্যি৷ অত্যন্ত অভিজাত এলাকাতেও লস্যি তৈরির ক্ষেত্রে এই অশুদ্ধ বরফ ব্যবহার করা হয়৷ মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ নিজেই এরকম একটি দোকানে গিয়ে, দোকানের মালিককে ডেকে বলেছিলেন, তার নিজের তৈরি এক গেলাস লস্যি খেতে৷ কিন্তু সেই দোকানদার সেই সাহস দেখাতে পারেননি৷ অতীন ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানালেন, কলকাতা পুরসভায় আগে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনও নিয়মই মেনে চলা হতো না৷ ২০০৬ সাল থেকে এই সব নিয়ম চালু হয়েছে, নিয়ম না মানলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার নিয়ম হয়েছে৷ তবে এসবের পাশাপাশি মানুষও একটু সতর্ক হোন, চাইছে পুরসভা৷ গরমের দিনে ঠান্ডা শরবতের গেলাসে চুমুক দেওয়ার আগে খদ্দেরই যেন জানতে চান, তাঁর পানীয়ে কোন বরফ মেশানো হয়েছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...