দুর্নীতি বন্ধ করতে ভারতে অভিনব প্রচার
২ মার্চ ২০১০ভারতের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘‘ফিফথ পিলার'' দেশটিতে দুর্নীতি বন্ধ করতে এই অভিযান চালাচ্ছে৷ সরকারি কোন অফিসে কাজ করাতে হলে ঘুষ দেয়াটা প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেই অলিখিত প্রথা ভাঙতেই এই প্রচার৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অনুপমা ঝা বলেন, ভারতে পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, আদালতের কর্মী পর্যন্ত প্রায় সবার কাছ থেকে কাজ পেতে হলে ঘুষ দেয়াটা সাধারণ এক রেয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ শতকরা ৯৫ শতাংশ ভারতীয় নাগরিকদের তাদের প্রয়োজনীয় কাজ আদায় করতে গুনতে হয় অর্থ৷ আর এই অর্থে ভরে ওঠে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট৷
অনুপমা ঝা জানান, সারা দেশে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে৷ তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এই দুর্নীতি দারিদ্র্যের ওপরেওত প্রভাব ফেলছে, বাড়াচ্ছে দরিদ্রদশা৷ তবে দেশের যে মানুষগুলো দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুযায়ী ২০০৮ সালে ভারতের দরিদ্র মানুষদের মৌলিক পরিষেবাগুলো পেতে প্রায় ২০ কোটি ডলার ঘুষ দিতে হয়৷ অনুপমা ঝা জানান, শিক্ষা বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা, হাসপাতাল, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা, পানি, বিদ্যুৎ, জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা স্কীম এবং আরও বহু রকমের পরিষেবা যা তাদের বিনামূল্যেই পাবার কথা তা তাদের ঘুষ দিয়ে পেতে হচ্ছে৷
বিভিন্ন এনজিও-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন তথ্য বিনা মূল্যেই জনসাধারণের পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এই আইন সম্পর্কে জানেন না৷ আর তার সুযোগ নিচ্ছে পুলিশ, সরকারি অফিস ও আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা৷
দুর্নীতি বন্ধ করার কাজে নিয়োজিত এনজিওগুলোর মধ্যে ‘ফিফথ পিলার' অন্যতম৷ দুই বছর আগে এই সংস্থাটি ৫০ রূপির নোটের আদলে নোট ছাপানো শুরু করে৷ তবে, তার মূল্যমান শূন্য৷ এই জিরো রূপির নোটের সামনের দিকে লেখা রয়েছে, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি ঘুষ দেবও না নেবও না'৷ আর শূন্য মূল্যমানের এই নোটের এক মিলিয়ন কপি বিতরণ করা হয়৷
এই নোটটি শুধু তখনই ব্যবহার করা হবে যখন কোন কর্মকর্তা কর্মচারিরা ঘুষ চাইবেন৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রেসিডেন্ট বিজয় আনন্দ মেরি নামের একজন শিক্ষার্থীর উদাহারণ দিয়ে বলেন, ভারতের দক্ষিণের শহর পন্ডিচেরিতে স্কুটার চালিয়ে যাবার সময় এক ট্রাফিক পুলিশ মেরিকে থামায় এবং তার কাছে ৫০ রূপি চায়৷ মেরি তাকে বলে যে তিনি মনে করেন না যে তাকে অর্থ দেয়া প্রয়োজন কারণ তার কাগজপত্র ও লাইসেন্স ঠিক মত রয়েছে৷ এরপর তিনি জিরো রূপির নোটটি সেই ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন৷ এরপর সে লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়৷
বিজয় আনন্দ আরও জানান, যারা ঘুষ নেন তাদের বুঝতে হবে যে জনগণ এখন অর্ধৈয হয়ে উঠেছে এবং এখন তারা আর ঘুষ দিতে চান না৷ তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে তারা গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ঘুষের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ এরপর থেকে যখন মানুষ জিরো রূপির নোটটি ব্যবহার করবে তখন ঘুষ ছাড়া যারা কাজ করতেন না তারা বিনা বাক্যে কাজ করে দিতে বাধ্য হবেন বলে তিনি মনে করেন৷
ফিফথ পিলার এনজিওটি স্কুলগুলোতেও প্রচারণা শুরু করেছে৷ তবে, একাজে আরও সময় লাগবে৷ ভারতের বিশাল জনসংখ্যার কাছে মাত্র এক মিলিয়ন ছাপানো জিরো রূপির নোট অনেক কম৷ বর্তমানে এনজিওটি আরও বেশি সংখ্যক এই ঘুশবিরোধী প্রচারনোট ছাপাবার অর্থ জোগাড় করছে৷
প্রতিবেদক : আসফারা হক
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক