আইনমন্ত্রীকে নিয়ে জলঘোলা
২৪ জানুয়ারি ২০১৪দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার এবং মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে কংগ্রেস, বিজেপি এবং মহিলা সংগঠনগুলি৷ এই দাবি নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি বিধায়করা দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙের সঙ্গে মিলিত হন৷ যে ঘটনাকে ঘিরে আইনমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি উঠেছে, সেই ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত হয়েছে দিল্লির এক দায়রা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি. এল গর্গের নেতৃত্বে এক বিচার বিভাগীয় কমিশন৷ মহিলা সংগঠনগুলির এক বিশেষ প্যানেলও ঐ ঘটনার তদন্ত করবে আলাদাভাবে৷ ভারতীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন জারি করা হবে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালও দেখা করেন দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙের সঙ্গে৷
আইনমন্ত্রী ভারতীকে নিয়ে যেভাবে জল ঘোলা হচ্ছে, তাতে আম আদমি পার্টির সরকারের কাছে উনি এক বোঝা হয়ে পড়েছেন৷ বিপাকে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল৷ এর একটা সন্তোষজনক বিহিত করতে না পারলে মার খাবে আম আদমি পার্টির জাতীয় স্তরে জনসমর্থন৷ আইনমন্ত্রীর সমর্থনে দু'দিনের ধরনার কারণে আমজনতাকে যেভাবে নাকাল হতে হয়, তাতে কেজরিওয়ালের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে নাগরিক সমাজ অখুশি৷
আইনমন্ত্রী ভারতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এক নয়, একাধিক৷ আইনমন্ত্রী হয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে হেয় করা, অশালীন ভাষা ব্যবহার করা এবং আইনমন্ত্রী হিসেবে মহিলা নিগ্রহের সাক্ষী থাকা৷ ১৫ই জানুয়ারির মধ্যরাতে দক্ষিণ দিল্লির এক পাড়ায় আফ্রিকান নাগরিকের বাড়িতে ঢুকে তল্লাসি চালায় তাঁর দলের লোকেরা৷ তাতে উগান্ডার কয়েকজন মহিলাকে হেনস্থা হতে হয়৷
উগান্ডার পাঁচজন মহিলা আইনমন্ত্রী ভারতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন দিল্লির মহিলা কমিশন এবং পুলিশের কাছে৷ আইনমন্ত্রীর সন্দেহ, ঐ বাড়িতে অবাধে পুলিশের নাকের ডগায় চলে ড্রাগ ও দেহব্যবসা৷ এর আগে, আইনমন্ত্রী পুলিশকে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিলে পুলিশ জানায় বিনা ওয়ারেন্টে তা করা সম্ভব নয়৷ সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করার ইস্যু নিয়ে কেজরিওয়াল সরকার এবং দিল্লি পুলিশের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত৷ কারণ দিল্লি পুলিশ রাজ্য সরকারের অধীনে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে৷
দ্বিতীয় অভিযোগ তিনি নাকি অরুণ জেটলির মতো বিজেপির শীর্ষ নেতা এবং হরিশ সালভের মতো নাম করা আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে ‘‘মুখে থুথু দেয়ার'' মতো অভব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন এমনটাই বলা হচ্ছে৷ আইনমন্ত্রী ইস্তফা দিলে অন্তত এই বার্তা যাবে যে, কেজরিওয়াল নিজেদের ভুল সংশোধনে পিছ পা নয়৷ ভারতীর আচার আচরণে মধ্যবিত্তদের কিছুটা হলেও মোহভঙ্গ হোয়েছে৷ তবে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের আস্থা আছে অটুট৷ রাস্তার রাজনীতি ছেড়ে আন্তরিকভাবে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনের শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে সেটাও হারাবে আম আদমি পার্টি৷ জাতীয় স্তরে একটা রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে৷