দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ জয়ের পথে বাংলাদেশ!
৪ অক্টোবর ২০১৬এটাকে বাংলাদেশের একটি অর্জন বলে অভিহিত করেছে বিশ্বব্যাংক৷ আর বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ আয় বৃদ্ধির হারের চেয়ে অতিদরিদ্রদের আয় বৃদ্ধির হার এখন বেশি৷
‘টেকিং অন ইন-ইকোয়ালটি' শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ হতদরিদ্র লোক ছিল৷ চলতি অর্থবছরে তা ২ কোটিতে নেমে এসেছে৷'' বিশ্বব্যাংকের মতে, যাদের মাসিক আয় ১ হাজার ২৯৭ টাকার নীচে তারা হতদরিদ্র অথবা অতিদরিদ্র৷
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের আয়ের সক্ষতমা বেড়েছে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা ও সফল পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করেছে৷ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও এসব কর্মসূচি ভূমিকা রাখছে৷ সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার, এনজিও, সুশীল সমাজের ভূমিকা আছে৷ আর এটা বাংলাদেশের একটি অর্জন৷
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে৷ প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ হবে৷
এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে৷ আর ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাসের ধারা বজায় রাখতে হলে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে৷ বাংলাদেশে যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ে তাহলে দারিদ্র্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমে৷ গত অর্থবছরে অর্জিত ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অতিদারিদ্র্যের হার হিসাব করেছে৷
বাংলাদেশের উন্নয়ন গবেষণা (বিআইডিএস) প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে কম মাত্রায় হলেও বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে আসছে৷ সাধারণ আয় বৃদ্ধির হারের চেয়ে অতিদরিদ্রদের আয় বৃদ্ধির হার শতকরা ০.৪ ভাগ বেশি৷ এর কারণ হলো, হতদরিদ্রদের কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় তাদের হাতে যখন কোনো কাজ থাকে না, তখন সরকারের উদ্যোগে কাজের ব্যবস্থা করা হয়৷ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তাদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷ বজেটে তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ এবং বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের মনিটরিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা হয়েছে৷ এ সবের সুফল পাওয়া যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এর বাইরেও কাজের সুযোগ বেড়েছে৷ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নানা ধরণের আয় বর্ধক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন অতি দরিদ্ররা৷ অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বেড়েছে৷ বিশেষ করে গ্রামে কৃষি ভিত্তিক নানা কাজের সুযোগ বেড়েছে৷ তা একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ আর কিছুটা হলেও বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দারিদ্র্য বিমোচনে৷ কিন্তু এই অতি দরিদ্রের হার কমছে, তারও একটি ইতিবাচক প্রভাব ধীরে ধীরে পড়বে৷ তখন দুই ধরনের ইতিবাচক প্রভাবে অর্থনীতি আরো এগোবে৷''
তবে ড. হেলাল উদ্দিন মনে করেন, ‘‘এটাও দেখার বিষয় যে গ্রামের অতিদরিদ্র মানুষ শহরে আসার কারণে আয় বেড়েছে কিনা৷ যদি তেমন হয়, তাহলে রাজধানীসহ অন্যান্য নগরে এক ধরনের নুতন চাপ সৃষ্টি হবে৷''
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি হতদরিদ্র অধ্যূষিত দেশের একটি হলো বাংলাদেশ৷ তালিকার শীর্ষে থাকা ভারতে প্রায় ২৫ কোটি লোক অতি দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে৷ বাংলাদেশ হতদরিদ্রদের উন্নয়নে ভারত, পাকিস্তান এবং ভুটানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে৷
বন্ধুরা, আপনিও কি মনে করেন বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে আসছে? লিখুন নীচের ঘরে৷