1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অবস্থা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৭ নভেম্বর ২০১৪

প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী৷ দলটির আমিরসহ চার শীর্ষ নেতার মাথার ওপর ঝুলছে ফাঁসির দণ্ড৷

https://p.dw.com/p/1Diyc
Dhaka Protest gegen Blogger
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

দলটির আধ্যাত্মিক নেতা গোলাম আযমও ৯০ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে মুত্যুবরণ করেছেন৷ এছাড়া বর্তমান কর্মপরিষদের ২২ জনের ৯ জন আছেন কারাগারে৷ বাকিরা হয় নিষ্ক্রিয়, নয় পলাতক৷

গত সপ্তাহের কর্মদিবসের চারদিনই ছিল জামায়াতের হরতাল৷ আর একদিন ছিল আশুরার সরকারি ছুটি৷ জামায়াত এই চার দিনসহ মোট পাঁচদিন হরতাল করেছে তাদের দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে৷ কিন্তু এবার হরতালে নেতা-কর্মীদের রাজপথে দেখা যায়নি৷ জনজীবনে পড়েনি তেমন কোনো প্রভাব৷ হরতাল ডাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ অনেকেই ৫ জানুযারির নির্বাচনের আগে জামায়াতের হরতাল বা আন্দোলনের সঙ্গে এবারের হরতালকে মেলাতে পারেননি৷ জামায়াতের এই ‘হোমিওপ্যাথিক' হরতাল তাদের বিস্মিত করেছে৷

আরেক দিকে জামায়াতের দীর্ঘদনের রাজনৈতিক বন্ধু এবং একই জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি জামায়াতের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে৷ জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে দেয়া ফাঁসির দণ্ডের রায়ের পরও বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না৷ এমনকি বাংলাদেশে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা এবং আধ্যাত্মিক গুরু গোলাম আযমের মৃত্যুর পরও বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি৷

জামায়াতের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই জামায়াতের দুর্দিন শুরু৷ একের পর এক আটক হতে থাকেন দলের শীর্ষ নেতারা৷ ১৯৭১ সালে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়৷ কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে তারা আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে শুরু করে৷ বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালে দলটি সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়৷ তারা সংসদে ১৭টি আসন পায় এবং জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মন্ত্রিত্ব পান৷ দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় যায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার৷ বিএনপি জামায়াতের জোট এখনো অটুট, কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিশেষ করে কাদের মোল্লা এবং সাঈদীর দণ্ডের পর জামায়াত-শিবির যে সহিংসতা দেখায় তা বিপাকে ফেলে বিএনপিকে৷ ৫ জানয়ারির একতরফা নির্বাচনের মতোই এই সহিংসতা দেশে, বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে৷ তাই এই দায় এড়াতে বিএনপি জামায়াতের কাছ থেকে ‘পোশাকি' দূরত্ব বজায় রাখছে৷

জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদের ২২ সদস্যের ৯ জনই এখন কারাগারে৷ বাইরে থাকা ১৩ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন একাধিক মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে৷ দুজন আদালত অবমাননার অপরাধে দণ্ডিত হয়ে পলাতক৷ বাকিরা অসুস্থ, নয়তো রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়৷ একজন বিদেশে৷

কর্মপরিষদেরও একই অবস্থা৷ ১৪ জন কারাগারে৷ বাকিরা গ্রেপ্তার, পলাতক নয়তো রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়৷ পাঁচ নায়েবে আমিরের দুইজনের মৃত্যু হয়েছে৷ অন্যরা কারাগারে, নয়তো পলাতক৷ এ পরিস্থিতিতে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমানকে নায়েবে আমির পদে পদোন্নতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করা হচ্ছে৷

জামায়াতের নিজস্ব হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাদের মোল্লার রায়ের পর থেকে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন শতাধিক নেতাকর্মীর প্রাণ গেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ও সহিংসতায়৷ ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন তৃণমূলের ৩৭ নেতাকর্মী৷ রাজপথে সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ৪৪ হাজার নেতাকর্মী৷ এদের বড় অংশ এখনও কারাগারে৷

মহানগরে রাজপথে দলকে সক্রিয় রাখার দায়িত্বে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, শিবিরের সাবেক সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের মতো তরুণ নেতারা৷ তাঁরা দুজনই গত আগস্ট থেকে কারাগারে৷ মহানগরের নায়েবে আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম ছিলেন সামনের সারিতে৷ তিনিও গ্রেপ্তার হয়েছেন৷

জামায়াত নেতাদের বক্তব্য

জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘‘জামায়ত তার ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসময় পার করছে৷ কেন্দ্র থেকে তাই সবাইকে ধৈর্য্য ধারণের জন্য বলা হয়েছে৷ আর বিএনপির আচরণ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷'' কারাগারের বাইরে থাকা জামায়াতের নেতারা এখন সহিংস আচরণ না করার কৌশল নিয়েছে৷ কারণ তাঁরা মনে করেন, নতুন করে সহিংসতা করলে জামায়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করতে সরকারের সুবিধা হবে৷ আর তাহলে জামায়াতের অস্তিত্বই নাজুক হয়ে যেতে পারে৷ কারণ এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ আর যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরু হতে পারে৷ এজন্য সরকার ট্রাইবুন্যাল আইন সংশোধনেরও চিন্তা করছে৷ নেতারা চাইছেন এই অবস্থায় অন্তত জামায়াতকে দল হিসেবে রক্ষা করতে৷ নোয়াখালী জামায়াতের নায়েবে আমির জানান, ‘‘কেন্দ্র থেকে আমাদের ধৈর্য্য ধারণের জন্য বলা হয়েছে৷''

আর জামায়াতের মুখপাত্র সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘জামায়াতের প্রতিক্রিয়া দেখানো বা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষমতা আছে৷ কিন্তু জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশের কারণে তারা মাঠে নামতে পারছে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত বিপাকে আছে সত্য কিন্তু জামায়াত নিঃশেষ হয়ে গেছে এই ধারণা ভুল৷ সময় হলেই জামায়াত তার অবস্থান সংহত করবে৷''

বিএনপি যা বলছে

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো আদর্শিক ঐক্য নেই৷ এটি একটি নির্বাচনি জোট৷ তাই জামায়াতের অভ্যন্তরীণ সংকটে বিএনপির কোনো করণীয় নেই৷ এটা জামায়াতের নিজস্ব ব্যাপার৷'' তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতারা দণ্ডিত হয়েছেন, কারোর দণ্ড কার্যকর হয়েছে, গোলাম আযম মারা গেছেন এগুলো বিএনপি'র বা জোটের কোনো বিষয় নয়, তাই বিএনপি কোনো বিবৃতি, প্রতিবাদ বা শোক প্রকাশ করেনি, দেখায়নি কোনো প্রতিক্রিয়া৷'' তবে তিনি মনে করেন, ‘‘এই কারণে বিএনপি-জামায়াতের জোটগত সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না৷ জোট আছে, থাকবে৷''

আওয়ামী লীগের বক্তব্য

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘বিএনপি জামায়াতের সম্পর্ক অটুট আছে৷ তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে মাত্র৷ এখন তারা গোপনে যোগাযোগ রাখছে৷ বিএনপি দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালে গোপনে সম্পর্ক ঠিক রাখছে৷'' তিনি অবশ্য জামায়াতের সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো গোপন চুক্তি বা সমঝোতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য