1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাড়ছে সাইবার মবিং

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০

দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী৷ আর এর সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক সাইবার মবিং৷ অনলাইনে আক্রমণ৷ সম্প্রতি জার্মান এক লেখিকাও হয়েছেন এর শিকার৷

https://p.dw.com/p/M9kC
সাইবার মবিং-এর শিকার হয়েছেন জার্মান লেখিকা ভেরা হোলাইটারছবি: Kim Sung-ryong

দক্ষিণ কোরিয়ার ১০ থেকে ৩৯ বছর বয়সিদের ৯৯ শতাংশই নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷ সমাজে যাই ঘটুক না কেন অনলাইনে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া চলে আসে, আর এর বেশিরভাগই আসে অনামা ব্যক্তিদের কাছ থেকে৷ প্রায়ই দেখা যায় যে, এই সব মন্তব্য বেশ আক্রমণাত্মক, অশালীন তার ভাষা৷ আর এর কারণেই অনেক কোরিয়ান অভিনেত্রী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন৷ কারণ তারা এ ধরণের সাইবার মবিং আর সহ্য করতে পারছিলেন না৷

দেশটির সরকার অনলাইনে কারও মানহানির চেষ্টা বন্ধ করার উদ্দেশ্য একটি বিল পাশ করে৷ এ ধরণের অপরাধের শাস্তি হিসেবে তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই বিলে৷ কিন্তু এর হাত ধরে সেন্সরশিপ চালু হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বিরোধীরা বিলটি আটকে দেয়৷ সম্প্রতি জার্মান লেখিকা ভেরা হোলাইটারও দক্ষিণ কোরিয়ার এই ইন্টারনেট গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷

গত নভেম্বর মাসে এক টিভি শো-তে কোরিয়ান এক তরুণী বলে ফেলেছিলেন, খর্বকায় পুরুষরা সব সময় হেরোদের দলে৷ সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে তার বিরুদ্ধে শুরু হয়ে যায় ক্রুদ্ধ অভিয়োগের বন্যা৷ পরে তার নাম ও ঠিকানা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি এমনকি জনসমক্ষে ক্ষমা চান৷ ঐ টিভি শোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির মেয়ে ভেরা হোলাইটারও৷

World Cyber Games Seoul Süd-Korea 2003
২০০৩ সালে কম্পিউটার-পাগল দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব সাইবার গেমসছবি: AP

হোলাইটার বলেন, ‘‘এটা একটা বড় ধরণের সমস্যা এবং কোরিয়ান গণমাধ্যমগুলো এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছে৷ তবে দেখা গেছে যে, কোরিয়ায় নোংরা মন্তব্য করা ইনটারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা খুবই কম, আর তা ১ শতাংশেরও নিচে৷ আসলে কোরিয়ান গণমাধ্যম এই ইন্টারনেট ভিত্তিক কেলেঙ্কারিকে বড্ড বেশি বাড়িয়ে প্রকাশ করছে৷''

লেখিকা হোলাইটার সোলে তার জীবন যাপনের কাহিনি নিয়ে একটি বই লেখেন৷ এই বইটিতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সাবওয়ে, খাবার থেকে শুরু করে ভয়ঙ্কর শাশুড়িদের নিয়ে তাঁর প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতার ছবি তুলে ধরেছেন৷ হোলাইটার লিখেছেন তাঁর নিজের মত করে৷ অনেক কোরিয়ানই মনে করেন, তিনি জাতি হিসেবে তাদের গর্বের জায়গাগুলোকে আঘাত করেছেন৷

তিনি বলেন, তিনি অনেক দিন ধরেই কোরিয়ায় বসবাস করছেন৷ তিনি ধরে নিয়েছিলেন, এই বইটি প্রকাশের পর এমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷ অনেক সাংবাদিক তাঁকে বলেছিলেন, বই লেখার সময় তিনি কি ভাবেননি যে তাঁর মতামত এরকম ঝড় তুলতে পারে৷ তাঁর সাবধানে লেখা উচিৎ ছিল ও এত সরাসরি লেখা ঠিক হয়েছে কিনা৷ তিনি এর উত্তরে বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে ভাবতে চাননি কারণ ভাবলে তিনি অতিরিক্ত সাবধানী হয়ে পড়তেন এবং বইটি ভাল হত না৷

হোলাইটারের বই-এর শিরোনাম ‘‘সোলে নির্ঘুম''৷ জুলাই মাসে তা জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয় প্রকাশিত হবার পর জার্মানিতে পড়াশুনারত এক কোরিয়ান শিক্ষার্থী এই বইটির কিছু অংশ অনুবাদ করে তার ব্লগে প্রকাশ করে৷ তবে তার এই অনুবাদটিতে বেশ ভুলও ছিল৷আর এরপরই ভেরা হোলাইটার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যবিন্দু হয়ে ওঠেন৷

তিনি আরও জানান, ব্যাপারটা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন তিনি খুব কমই জনসমক্ষে বের হতেন৷শুধুমাত্র রেডিওতে কাজ করার জন্য তিনি বাইরে যেতেন৷ কোথাও যেতে হলে তাকে ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করতে হত৷ তাঁর কোরিয়ান বন্ধুবান্ধবরা তাকে নিয়ে ভয়ে থাকতেন সাবওয়ে ব্যবহার করাও তাঁর জন্য নিরাপদ ছিলনা৷

লেখিকা মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছেন৷ কিছু কোরিয়ান অবশ্য তাঁর পক্ষও নেন৷ বইটার প্রকাশক এই বইটি কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে, বইটি যখন প্রকাশিত হবে তখন অনেকেরই হয়ত ব্যাপারটার প্রতি আর্কষণ থাকবে না৷ ইতোমধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে৷ লেখিকা হোলাইটার এখন সোলের রাস্তায় নিরাপদেই চলাফেরা করছেন৷

প্রতিবেদক : আসফারা হক, সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক