1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

থ্রি-স্টার হোটেলে থেকে পড়াশোনা

৩০ মে ২০১১

জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য চাই যথাযথ থাকার জায়গা৷ ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রীর থাকার জায়গা এখন কোন হল নয় বরং একটি হোটেল৷ ছাত্র-ছাত্রীরা থাকছে থ্রি স্টার হোটেলে৷ কেউ খুশি কেউ আবার পছন্দ করছে না৷

https://p.dw.com/p/11QRD
বিভিন্ন দেশ আর ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রীরা জার্মানিতে আসেন পড়াশোনা করতেছবি: DW

জার্মানিতে গ্রীষ্মকালীন সেমেস্টার শুরু হয়ে গেছে অথচ অনেক ছাত্র-ছাত্রীর এখনো থাকার জায়গা নেই৷ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে আগামী বছর থেকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে৷ তাই স্টুডেন্ট ডর্ম বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে, হলের সংখ্যা বাড়াতে কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হচ্ছে না কারণ প্রবল অর্থসঙ্কট৷ তাই হোস্টেল নয় বরং হোটেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো৷ আর আনন্দের সঙ্গে হোটেলে উঠে আসছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷

ইয়েন্স জানাল,‘‘হোটেলের এই রুমটা বেশ বড়, ঝকঝকে৷ আমি আজ সকালে আমার বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলের রুমে উঠেছি৷ আমার বান্ধবীও ঠিক এরকম একটা রুম পেয়েছে৷ আমরা অবশ্য অন্য কাউকে দেখিনি৷ সেই জন্য সবচেয়ে বড় রুম দুটি আমরা নিতে পেরেছি৷ এই রুম দুটোর ভাড়াও সবচেয়ে বেশি৷''

ইয়েন্স পাজেন তার পড়ার টেবিল পরিষ্কার করছে৷ সে মুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছে৷ রুমটি নতুন করে সাজানো হয়েছে, দেয়ালে নতুন রঙ শোভা পাচ্ছে৷ রুমের সঙ্গে অত্যন্ত গোছানো একটি বাথরুম৷ হোস্টেল অথবা হোটেল যাই বলা হোক না কেন এর নাম ‘হোটেল বকহর্ন'৷ রয়েছে বিশাল একটি লবি৷ ইয়েন্স আরো বলল,‘‘আমার একটি স্টুডেন্ট ডর্মে থাকার কথা ছিল, আমি ডর্মটি দেখেও এসেছি৷ কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে গিয়ে দেখি পুরো ডর্মটি ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে৷ তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করি, ‘তাহলে আমি কোথায় থাকবো?'৷ তখন তারা আমাকে এই ঠিকানাটি দেয়৷ আমার রুমও আগে থেকে ঠিক করা ছিল৷''

Theologenausbildung
ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: Bischöfliche Priesterseminar Borromaeum Münster

প্রয়োজন পাঁচ হাজার ফাঁকা রুম

ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ হোটেল বকহর্ন পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছে৷ ম্যুন্সটার শহরের তিনটি হোটেল প্রায় সারা বছরই খালি থাকে৷ তাই সেগুলো বেছে নেয়া হয়েছে ছাত্রাবাস হিসেবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে থাকার জন্য জায়গা দিতে হলে প্রয়োজন পাঁচ হাজার রুমের৷ অথচ এই মুহূর্তে এত ফাঁকা রুম যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র গিসব্যার্ট স্মিট্স বললেন,‘‘আমরা ধরে নিয়েছি যে হোটেলগুলোতে অন্ততপক্ষে এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে থাকার জায়গা করে দেয়া যেতে পারে৷ এর পাশাপাশি আমাদের এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অ্যাপ্লায়েড ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভাবতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ আরো ছাত্র-ছাত্রী আসছে৷ আর কিছুদিনের মধ্যে কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন আমরা হবো তা এখনই বলতে পারছি না৷''

গত দশ বছরে ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয় ৬০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে৷ এর বেশিরভাগই ছিল ছাত্রাবাস তৈরির জন্য৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি৷ শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই জানা গেছে এই তথ্য৷ ধরে নেয়া হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমবে অথচ বাস্তবে হয়েছে এর উল্টো৷ বিশেষ করে ম্যুন্সটার শহরে এই সমস্যা শীর্ষে অবস্থান করছে৷ গিসব্যার্ট আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান,‘‘বেশ কিছু শহর আছে যাদের এই চাপ নেই৷ ম্যুন্সটারের প্রায় ১২ শতাংশ দখল করে রেখেছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷ তারা বিভিন্ন বাড়িতে, হোটেলে এবং হোস্টেলে রয়েছে৷ অন্যান্য শহরে যা মাত্র ছয় থেকে দশ শতাংশ৷ পড়াশোনার জন্য ম্যুন্সটার সবসময়ই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম পছন্দ৷ একারণেই এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় বেশি৷''

হোটেল মানেই আনন্দ? মোটেই তা নয়!

হোটেল বকহর্নে রয়েছে মাত্র ১৭টি কামরা৷ বেজিং-এর ছাত্র লিও ওয়ান্তাও একটি রুম পেয়েছে হোটেল বকহর্নে৷ ছাত্র লিও ওয়ান্তাও-এর আক্ষেপ,‘‘আমার রুমটি মাত্র ১৩ বর্গমিটার৷ মাসিক ভাড়া ২৭৭ ইউরো৷ আমার জন্য তা একটু বেশি৷ এর আগে আমি হানোফারে থাকতাম৷ সেখানে রুমের ভাড়া ছিল মাসে মাত্র ১৯০ ইউরো৷''

সেন্ট্রাল স্টেশনের খুব কাছে হওয়ায় সারাক্ষণই ট্রেনের শব্দ ভেসে আসছে হোটেলে৷ তাই চীনের এই ছাত্রের হোটেলটি পছন্দ নয়৷ রান্নাঘরটি খুব ছোট৷ সবাই একসঙ্গে রান্না করতে এলে সমস্যা হবে৷ লাইন ধরে দাঁড়াতে হবে৷ তবে অনেকেই খুশি কারণ অন্ততপক্ষে থাকার একটি জায়গা পাওয়া গেছে৷ শ্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইয়েন্স বলল,‘‘ম্যুন্সটারে থাকার জায়গা পাওয়া কঠিন৷ শহরের বাইরে কিছু থাকার জায়গা আছে কিন্তু সেখানে ভাড়া আরো অনেক বেশি৷ থাকার জায়গা খুঁজছে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী তাই বাড়িওয়ালারও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কেউ যদি মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই পেয়ে যায় তাহলে সে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক