থাইল্যান্ডে রক্তশূন্য ‘রক্তাক্ত’ বিক্ষোভ
১৭ মার্চ ২০১০ক্ষমতাচ্যুত এবং বর্তমানে স্বেচ্ছানির্বাসনরত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থকরা এমনিতেই ‘‘রেড শার্ট'' বা লাল কামিজধারী বলে পরিচিত৷ মঙ্গলবার তারা তাঁবুর সামনে লাইন করে দাঁড়িয়ে রক্ত দিয়েছে৷ স্বাস্থ্য দপ্তর আপত্তি করার সুযোগ পায়নি, কেননা রক্ত নিয়েছেন ডাক্তাররা, এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে হাজার লিটার রক্ত সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল - শেষমেষ যোগাড় হয়েছে ৩০০ লিটার৷ সেই রক্ত পাঁচ লিটারের জলের বোতলে পুরে নিয়ে যাওয়া হয় গভর্নমেন্ট হাউসে, বিকেলের দিকে৷ এবং সেখানে গেটের বাইরে তার একাংশ ঢেলে দেওয়া হয়৷ এক হিন্দু পুরোহিত এসে সেই রক্ত হাতে মেখে মন্ত্রোচ্চারণ করেন৷ - পরে প্রধানমন্ত্রী অভিসিত ভেজ্জাজিভা'র গণতান্ত্রিক দলের পার্টি অফিসের সামনেও কিছু রক্ত ঢালা হয়৷
নাটকের সংলাপ
‘শক ট্যাকটিক্স', নাটকীয় মুদ্রা অথবা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক নাটক হিসেবে এই ‘রক্তপাতের' মূল্য কতোটা, তা বলা শক্ত, কেননা একদিকে বিশ্বের মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু অপরদিকে আন্দোলনকারীরা তাদের মূল লক্ষ্যে পৌঁছনোর দিকে বিশেষ অগ্রসর হতে পারেনি৷ বিরোধী নেতা জাতুপর্ন্ প্রম্পান যেমন বলেছেন: ‘‘আমরা পরের রক্তপাত ঘটাইনি, বরং আমাদের প্রতিবাদের জন্য নিজেদের রক্ত বইয়েছি৷ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংগ্রাম করা বলপ্রয়োগের চেয়ে ভালো৷'' - সঙ্গে সঙ্গে জবাব এসেছে প্রধানমন্ত্রী ভেজ্জাজিভা'র কাছ থেকে: ‘‘আন্দোলনকারীরা রক্তপাতের কথা বলছে, কিন্তু তা সঠিক নয়, কারণ সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগও করবে না, অথবা তাদের রক্তও ঝরাবে না৷''
কুয়ো ভাদিস?
অপরদিকে ভেজ্জাজিভা বিক্ষোভকারীদের সব দাবীই প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি পদত্যাগও করছেন না, সংসদও ভেঙে দিচ্ছেন না৷ বলেছেন যে, তিনি বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য শুনতে রাজি - ঐ পর্যন্ত৷ ওদিকে সোমবারের এক লক্ষ বিক্ষোভকারী কিন্তু বুধবার সকালের মধ্যে বেশ কিছুটা কমে এসেছে - যদিও তারা এ'দিন ভেজ্জাজিভা'র বাসভবন অভিমুখে মিছিল করার পরিকল্পনা করছে৷ কিন্তু তা'তেও কোনো লাভ হবে কি? ভেজ্জাজিভা তো বলছেন, বিক্ষোভকারী এবং সরকারের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না, কেননা তা সারা দেশকে প্রভাবিত করবে৷ নয়তো ভেজ্জাজিভা এবং তাঁর সরকার একটি সেনা ছাউনিতে৷ মঙ্গলবার সংসদের উভয় কক্ষের যে যৌথ অধিবেশন হবার কথা ছিল, তা'ও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ থাকসিন স্বয়ং সপ্তাহান্তে ছিলেন ইউরোপে, মন্টেনিগ্রো'তে৷ সেখান থেকেই ভিডিও লিংকে গরম গরম বক্তৃতা দিয়েছেন৷ কিন্তু ব্যাংককে সাংবাদিকরা যখন বিক্ষোভকারীদের এক নেতা ভীরা মুসিকাপং-কে প্রশ্ন করেন: এর পরে বিক্ষোভ কোন পথে যাবে? মুসিকাপং উত্তর দেন: ‘‘আমি নিজেই সেটা জানতে চাই৷''
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার