তেল পুড়িয়ে তেল বিপর্যয় রোখার চেষ্টা
২৯ এপ্রিল ২০১০কিন্তু বর্তমানে এই তেল পোড়ানো হল দৃশ্যত মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে একমাত্র পন্থা৷ তার কারণ আবার প্রকৃতি স্বয়ং৷ তবে সে প্রসঙ্গে দেখার আগে দেখা যাক মেক্সিকো উপসাগরে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম সংস্থার তেলের প্ল্যাটফর্মটি ডোবা যাবৎ আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি কি করতে পেরেছে অথবা পারেনি৷
প্রথমত, ডীপওয়াটার হোরাইজন রিগটি বিস্ফোরণ ঘটে ডুবে যাবার পর তার রাইজার পাইপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১,৬০,০০০ লিটার তেল নির্গত হচ্ছে - যা বস্তুত হবারই কথা নয়, কেননা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে একটি ১৫০ টন ওজনের ভ্যাল্ভ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে উৎসমুখটি আটকে দেওয়ার কথা৷ এক্ষেত্রে এই ব্লোআউট প্রিভেন্টারটি শুধুমাত্র তেলের প্রবাহ অংশত কমাতে পেরেছে৷
বিপি এই রিগটি লীজ করেছে যে ট্রান্সওসেন সংস্থার কাছ থেকে, তারা আরো একটি রিগ পাঠিয়েছে, যে রিগটি থেকে আরো দু'টি বিকল্প ‘কুপ' খনন করে তেলের প্রবাহ সেদিকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করা হবে৷ মুশকিল এই যে, এ'কাজে তিন মাস অবধি সময় লাগবে৷
ইতিমধ্যে বিপি চারটি রোবোট ডুবোজাহাজ পাঠিয়ে ১,৫০০ মিটার সমুদ্রগর্ভে দুর্ঘটনায় পতিত ‘কুপের' উৎসমুখটি বন্ধ করার চেষ্টা করছে - কিন্তু এযাবৎ বিশেষ সফল হতে পারেনি৷ আরো একটি ব্যাক-আপ প্রচেষ্টায় ইঞ্জিনীয়াররা একটি সুবিশাল ঘেরাটোপ বানানোর চেষ্টা করছেন, যা উৎসমুখের উপর বসিয়ে সেই ঘোরাটোপে তেল জমা করা হবে, এবং পরে সেই তেল পাম্প করে সরিয়ে নেওয়া হবে৷ মুশকিল এই যে, এ'কাজে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগবে৷
ওদিকে মিসিসিপির ব-দ্বীপ অঞ্চলকে ঘিরে মাইলের পর মাইল বাতাস-পোরা রাবারের ‘বুম' বা ভেলা দিয়ে লুইজিয়ানার উপকুলকে বাঁচানোর চেষ্টা চলেছে৷ স্কিমিং জাহাজ দিয়ে সাগরেই তেল সেঁচা হচ্ছে, বা জলে রাসায়নিক ফেলে তাকে উপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ বাধ সেধেছে শুধু আবহাওয়ার পূর্বাভাস: বৃহস্পতিবার থেকে নাকি বাতাস আবার দিক পাল্টে উপকুলের দিকে বইবে, আরো জোর গতিতে৷ অথচ প্রায় হাজার কিলোমিটার পরিধির তেলের গালিচাটি এখন উপকুল থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে৷
কাজেই এখন শেষ প্রচেষ্টা দু'টি স্কিমিং জাহাজ পাঠিয়ে তেলের গালিচার ঠিক মাঝখানে তেল ঠেলে ঠেলে একত্রিত করে, সেই তেল একটি আগুন ধরে না, এমন একটি ১৫০ মিটার লম্বা বুম দিয়ে ঘেরা৷ পরে সেই বুম ৮০ কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে তা'তে একটি বিশেষ ফ্লোট বা ভেলা থেকে আগুন ধরানো হচ্ছে: এই পন্থায় নাকি ঐ তেলের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বিনষ্ট করা যাবে৷
এখনা দেখা যাক, প্রকৃতি বনাম প্রযুক্তির লড়াইতে মানুষ জেতে না হারে৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম