1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তেলের খনিতে হারাতে বসেছে মরুর সবুজ

১৯ আগস্ট ২০১০

যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সচল করতে তেল উত্তোলন বাড়াতে মনোযোগী এখন ইরাক সরকার৷ আর এর বলি হচ্ছে কৃষিজমি৷ জমি হারানোর আশঙ্কায় অন্ধকার দেখছেন অনেক ইরাকি কৃষক৷

https://p.dw.com/p/Or4F
জমির নিচে তেল থাকলেই তা সরকারের?ছবি: dpa - Bildarchiv

সেই ১৯৭০ সাল থেকে বসরায় নিজের জমিতে চাষ করে আসছিলেন জলিল জাবের আল পারতুসি৷ তার জমি ভাসছে তেলের খনির ওপর৷ সেটাই হয়েছে তার কাল৷ দেশের সমৃদ্ধির জন্য এখন জমি ছাড়তে হচ্ছে তাকে৷ এই অবস্থা এখন অনেক কৃষকের৷ যত পারা যায়, তেল তুলতে হবে৷ মাটির নিচে ফেলে রাখা যাবে না৷ আর তাতেই হারিয়ে যেতে বসেছে ওপরের সবুজ৷ আর অন্ধকার করে তুলছে জলিলদের জীবন৷

খনি এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে তা তেল কোম্পানিগুলোর কাছে তুলে দিচ্ছে সরকার৷ এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা জলিলের কথায়ই স্পষ্ট৷ ‘‘৪০ বছর ধরে এখানে আছি, বেড়ে উঠেছি এখানে৷ চাষবাস, ঘরবাড়ি মিলিয়ে এটাই আমার জীবন৷ এখন তা যদি নিয়ে যায়, তাহলে আর কিছুই আমার থাকবে না'', বললেন জলিল৷ সরকার অবশ্য বলছে, খনি এলাকার সব জমির মালিক রাষ্ট্র৷ সুতরাং সরকার চাইলে এই সব এলাকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে৷ তবে ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে৷ এ কথা জানালেন ইরাকের তেলসম্পদ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আসিম জিহাদ৷ তাঁর কথা হল- ‘‘নিচে তেল থাকলে তার ওপরের কৃষিভূমিই থাক, কিংবা বসত বাড়ি- তা রাষ্ট্রের৷'' জলিল তার জমিতে চাষ করেছিলেন টমেটো আর শসা৷ তা জমি থেকে ঘরে উঠবে কি না, তা এখন অনিশ্চিত৷

স্থানীয় জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মরুর বুক সবুজ করে আসছিল ফসল ফলিয়ে৷ তবে তেলের খনি আবিষ্কারের পর থেকে কৃষিজমি হারিয়ে তাঁরা কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে৷ যুদ্ধ শুরুর আগে সাদ্দাম হোসেনের সময় থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে৷ কৃষিজমি হারানোর ক্ষতিপূরণ চেয়ে এক স্থানীয় নেতা মামলাও করেছিলেন৷ তবে সাদ্দামের সময় খনি এলাকায় জমিতে কৃষিকাজের অনুমতি দেওয়া হত৷ এখন তা আর দেওয়া হচ্ছে না৷ কারণ উৎপাদন বাড়াতে বাড়ছে তেলকূপের সংখ্যাও৷

বসরারই আরেকটি এলাকার ওয়াসিম ফাহাদ আল মেইয়াত অভিযোগ করলেন, তাদের গ্রাম থেকে উঠিয়ে দিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে তেল কোম্পানিগুলো৷ তবে এত সহজে উঠতে নারাজ তারা৷ এবরা নামে ওই গ্রামের বাসিন্দারা পণ করেছেন, ক্ষতিপূরণ না নিয়ে তারা জমি ছাড়বেন না৷ এখন দেখা যাক কী হয়৷

তেলের মজুদের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ ইরাক৷ যুদ্ধের পর অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে এখন সরকারের নজর তেল উত্তোলন বাড়ানোর দিকে৷ তেলকে তেল হিসেবে ফেলে রাখলে চলবে না, ডলারে রূপ দিতে হবে৷ সরকারের এই আশা একরাশ হতাশা বয়ে আনছে কৃষিজীবনে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন