তুরস্কে সেনা-সরকার উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০বর্তমান পরিস্থিতি
এমতাবস্থায় দেশটির সেনা প্রধান এবং রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক থেকে সংকট নিরসনের ঘোষণা দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার৷ আর এর কয়েক ঘণ্টা পরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে শীর্ষ তিন সন্দেহভাজন কর্মকর্তাকে৷ তবে এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে ঐ ষড়যন্ত্রের জন্য বিচারের সম্মুখীন করা হবে কি না তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি৷ সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, এসব কর্মকর্তা বিদেশে পলায়ন করবেন এমন আশঙ্কা না থাকায় তাঁদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন দেশটির সাবেক নৌ এবং বিমান বাহিনী প্রধান ওজডেন ওরনেক এবং ইব্রাহিম ফিরটিনা, এবং সাবেক সেনা উপ-প্রধান এরগিন সাইগুন৷
মুক্তিপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার ভাষ্য
মুক্তি পাওয়ার পর ইব্রাহিম ফিরটিনা সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘‘কিছু তথ্য এবং ঘটনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির বিষয় পরিষ্কার কর তুলে ধরতেই আমি এখানে এসেছিলাম৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই ব্যাপারে আমি সফল হয়েছি এবং এখন আমি আপনাদের মাঝেই রয়েছি৷'' সরকারের উপ-প্রধান কৌঁসুলি টুরান কোলাকাডি জানান, ‘‘গত ডিসেম্বরে আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম৷ তখন থেকেই ঘটনার আলামত নষ্ট করার জন্য কোন কিছু তাঁরা করেননি৷ যেহেতু তাঁরা এখনও একই ঠিকানায় বাস করছেন৷ তাই তাঁরা দেশ ছেড়ে পলায়ন করবেন না এমন শর্তেই তাঁদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷''
সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ
এর আগে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান আব্দুল্লাহ গুল, প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তাইইপ এরদোয়ান এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ইলকার বাসবুগ একটি যৌথ বিবৃতিতে ‘সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধান করা হবে' বলে ঘোষণা করেন৷ এই তিন শীর্ষ কর্তার বৈঠক সম্পর্কে বেশি কিছু না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান বলেন, ‘‘এটা খুব ভালো বৈঠক হয়েছে৷'' রাষ্ট্রপ্রধান গুল বলেন, ‘‘আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেজন্য প্রত্যেককে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে৷''
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে ইসলামপন্থী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে গত সোমবার সাবেক এবং বর্তমান প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ এরপর থেকেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে৷ তবে বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সেনা কর্মকর্তার বৈঠক এবং তিনজনের মুক্তির ফলে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের৷ আদালতের সূত্র অনুযায়ী, আটককৃতদের মধ্যে ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া ১২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্যরা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন৷
তুরস্কের উগ্রপন্থী দলের সদস্য গ্রেপ্তার
এদিকে, জার্মান পুলিশ তুরস্কের নিষিদ্ধ ঘোষিত বাম দলের দুই জন ঊর্ধ্বতন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বৃহস্পতিবার৷ ফেডারেল সরকারের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, কোলন এবং ডুসেলডর্ফ শহরের সাতটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এই দুই সদস্যকে আটক করা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত বিপ্লবী জনতা মুক্তি জোট - আরপিএলএফ এর উচ্চ পর্যায়ের সদস্য বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া, তুরস্কের কুর্দিস্তান শ্রমিক দল - পিকেকে'র একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডাচ পুলিশ৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়