1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন ব্লগারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩১ মার্চ ২০১৫

একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় মুক্ত চিন্তা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে ইচ্ছুকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ অন্তত আরো তিনজন ব্লগারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত৷

https://p.dw.com/p/1F02o
Bangladesch Polizisten beim Generalstreik am 21.01.2015 in Dhaka
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

এদিকে, বিশ্লেষক ও ব্লগাররা মনে করেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা না গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷

সোমবার ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যার পর এটা এখন নিশ্চিত যে তাঁকেও ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হত্যা করেছে৷ আর ব্লগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর' লেখালেখির অভিযোগেই তাঁকে হত্যা করা হয় বলে আটক মাদ্রাসার দুজন ছাত্র স্বীকার করেছে৷ এই ঘটনায় তারা মোট চারজন জড়িত বলে জানিয়েছে৷ তাদের মধ্যে দুজন আবু তাহের এবং মাসুম পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়৷ তারা পালিয়ে গেলেও সোমবার ঘটনাস্থল থেকে মাদ্রাসা ছাত্র জিকরুল্লাহ এবং আরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়৷

তাদের আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ নিহত ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন বাদি হয়ে ওই চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন৷

পরবর্তী টার্গেট?

বাংলাদেশে ব্লগাররা যে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন তা এখন স্পষ্ট৷ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এরকম আরো তিনজন ব্লগারকে চিহ্নিত করেছে যাদের নতুন করে টার্গেট করা হয়েছে৷ উগ্রবাদীরা এই তিনজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে তাদের খোঁজ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ ডিবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে তিন ব্লগার এবং তাদের যারা টার্গেট করেছে সেই উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে৷

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার আগাম ব্যবস্থা নিতে আমরা চেষ্টা করছি৷ এজন্য যারা টার্গেটে পরিণত হয়েছেন তাদের নিরাপত্তা ও আগাম সতর্কতার পাশাপাশি উগ্রবাদীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে৷''

ব্লগাররা আতঙ্কে

লেখক ও ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সী বাধন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে এখন আমাদের মধ্যে সার্বক্ষণিকভাবে এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে৷ আমরা যখন অফিসে যাই বা কাজে বাইরে যাই তখন আমরা ধরেই নিই যে আমাদের ওপর হামলা হতে পারে৷ কারণ সরকার বা পুলিশ প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা বা উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘একমাস আগে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০১৩ সালে হত্যা করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হয়দারকে৷ আসিফ মহিউদ্দীনের ওপর হামলার পর সে প্রাণে বেঁচে যায়৷ আরো অনেক ব্লগারের ওপর হামলা হয়েছে৷ এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে হয়তো নতুন কোনো দুঃখজনক ঘটনা ঘটতোনা৷''

উগ্রবাদীরা আরো অনেক ব্লগারকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে বলে জানান মাহমুদুল হক মুন্সী৷

তিনি বলেন, ‘‘যারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত তারা মাদ্রাসা ছাত্র অথবা উগ্রবাদী৷ তাই আমাদের শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন প্রয়োজন৷ কাউকে হত্যা করা, আঘাত করা যে ধর্মরক্ষা নয়, তা তাদের বোঝাতে হবে৷ সমাজের অন্ধকার দিকগুলো দূর করা না গেলে উগ্রবাদও দূর করা যাবে না৷ আর স্বাধীন চিন্তা যে প্রগতির জন্যই প্রয়োজন তা বোঝাতে হবে৷''

মাহমুদুল হক মুন্সী বলেন, ‘‘একটি মহল ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে, উস্কানি দিচ্ছে৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷ এর আগে হামলার শিকার ব্লগারদের উল্টো গ্রেপ্তারেরও একাধিক ঘটনা আছে৷ সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার হওয়া দরকার৷''

হত্যার বিচার না হওয়া একটি কারণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করছে৷ তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷ আরো অনেক ব্লগারের জীবন আশঙ্কার মুখে পড়তে পারে৷ তাই সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এখনই এই ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷''

তিনি বলেন, ‘‘ভিন্ন চিন্তা বা ভিন্ন মতের জবাব কখনো হত্যা নয়৷ মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তা মানুষের অধিকার৷ আর হত্যা একটি জঘন্যতম অপরাধ৷ ভিন্ন মতের প্রতি যে সমাজ সহনশীল নয়, সেটাকে আমরা সভ্য সমাজ বলি না৷''

সফিউল আলম বলেন, ‘‘অতীতে ব্লগারদের ওপর আক্রমণ এবং হত্যার বিচার না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷''

প্রসঙ্গত, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷

২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে৷

এর আগে ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার সময় প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা৷ পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জার্মানিতে তার মৃত্যু হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য