1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিউনিশিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়

গ্যোবেল আলেকজান্ডার / আরবি১৩ মে ২০১৩

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার খুব বেশি সম্পদ নেই৷ কিন্তু ফসফেট রপ্তানিকারক হিসেবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে দেশটি৷ সেখানকার বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানায় ফসফরিক অ্যাসিড তৈরি করা হচ্ছে, যা ব্যবহার করা হচ্ছে নানাভাবে৷

https://p.dw.com/p/18WAC
ছবি: ddp images/AP Photo/Oded Balilty

এই অ্যাসিড দিয়ে প্রস্তুত হয় সার৷ এছাড়া খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও সফট ড্রিংকে ঝাঁঝালো স্বাদ বাড়ানোর জন্যও ব্যবহার করা হয় ফসফরিক অ্যাসিড৷ কিন্তু এসব প্রস্তুত করার সময় যে বর্জ্য বের হয়, তা অত্যন্ত বিষাক্ত৷ এতে হালকা তেজষ্ক্রিয়তাও থাকে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷

বিষাক্ত পদার্থের প্রাচুর্য

তিউনিশিয়ার উপকূলীয় শহর গাবেস এর সরকারি রাসায়নিক কারখানা থেকে প্রতিদিন ১৩ হাজার টন বিষাক্ত আবর্জনা সাগরে ফেলা হয়৷ প্রায় দেড় লক্ষ জনবসতির এই শহরটি পরিবেশ দূষণের এক নির্মম শিকার৷ অ্যামোনিয়ার বিকট দুর্গন্ধ বাতাসে ভরা৷ কারখানার কালো আঠালো তরল বর্জ্য বয়ে যায় সাগরে৷

গাবেস শহরের এক পুরুষ নার্স মোনধের জানান, ‘‘আগে রাতের খাবারে প্রায়ই মাছ থাকতো৷ সাগর এতো কাছে যে, কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতে গেলেই মাছ খুঁজে পেতেন৷ মাছগুলি ভেসে আসতো ডাঙায়৷ ছোটবেলায় মাছ ও বড় বড় চিংড়ির সঙ্গে সাঁতারও কেটেছি আমি৷''

Tunesien - Golf von Gabes
গাবেস উপকূলছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber

রাসায়নিক কারখানার দাপট

কিন্তু সত্তরের দশকের প্রথম দিকে একটি বড় রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করা হয় গাবেসে৷ তারপর থেকে এই অঞ্চলে চাষাবাদ কমতে থাকে৷ সাগর থেকে উপকূলে ভেসে আসে কিছু মরা মাছ কিংবা যন্ত্রণায় মৃত্যু হওয়া কচ্ছপ৷

পাশের কারখানার চত্বরে দেখা যায় পাহাড় সমান উঁচু ফসফেটের স্তূপ৷ দেশের খনিজ অঞ্চলগুলি থেকে এসব আনা হয় গাবেসে৷ তারপর এগুলি রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে সারা বিশ্বে পাঠানো হয়৷

ইতোমধ্যে অবশ্য পরিবেশ দূষণ কমানোর ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে সেখানে৷ নেওয়া হচ্ছে নানা রকম উদ্যোগ৷ রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বিষয়ের দায়িত্ব রয়েছেন নুরেদ্দিন ট্রাবেলসি৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে পরিবেশসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তা অস্বীকার করবো না৷ তবে এটাও বলতে হয় যে, কয়েক বছর ধরে কারখানাটিকে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা৷ যার অভাব ছিল আগে৷ এখন বিপ্লবের পর সরকারও সহযোগিতা করছে আমাদের৷ এই সুযোগটা হাত ছাড়া করা আমাদের ঠিক হবে না৷''

পরিবেশ বাঁচানোর জন্য একটি প্রকল্প হলো, কারখানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় রাসায়নিক বর্জ্য মাটির নীচে জমা করা৷ কিন্তু কাছাকাছি গ্রামের মানুষজন এই খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামছেন৷ প্রতিবাদ করছেন ব্যারিকেড দিয়ে৷ তাদের ভয়, তারাই এখন বিষাক্ত আবর্জনা ও তেজষ্ক্রিয়তার শিকার হবেন৷

প্রয়োজন প্রচুর অর্থ

এই প্রকল্পের জন্য ২০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হবে৷ কিন্তু রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানটির এতো অর্থ নেই৷ নানা সমস্যার ভারে জর্জরিত এটি৷ শ্রমিক ও কর্মচারিদের অনবরত ধর্মঘটের ফলে উত্পাদন প্রক্রিয়া প্রায়ই বন্ধ থাকে৷ তাই ক্রেতারা অন্যদিকে চলে যান৷ খোঁজেন নতুন মাল সরবরাহকারী৷ ফলে পরিবেশের জন্য অতিরিক্ত কোনো অর্থ থাকেনা৷

ট্রাবেলসি আশা করেন, এক্ষেত্রে ইউরোপীয় উন্নয়ন সাহায্য ব্যাংক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে৷ এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে বছর তিনেক লাগতে পারে৷ গাবেস শহর ও তার পাশের সাগরকে উঠে দাঁড়াতে হলে আরো অনেক বছর গড়িয়ে যেতে পারে৷ জানান গাবেস বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউটের প্রধান মোনিকা গুইজা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘২০ বছর পর আমরা হয়তো প্রথম উদ্ভিদটি আবার এখানে দেখতে পাবো৷ হঠাৎ করে তা ঘটবে না৷ কেননা ক্ষতির পরিমাণ বিশাল৷ আমাদের সন্তানদের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন সাগর রেখে যেতে পারলে ভালো হতো৷ কেননা এটাই গাবেসের সম্পদ৷''

শুধু সমুদ্রই নয়, চাষাবাদ ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও পড়ছে রাসায়নিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব৷ হচ্ছে অ্যাসিড বৃষ্টি৷ বিষাক্ত পদার্থ ভূগর্ভস্থ পানিতেও মিশেছে৷

নার্স মোনধের তাঁর কর্মক্ষেত্রে হাঁপানি, চর্মরোগ, ক্যানসার ও বিকলাঙ্গতা ইত্যাদির প্রাচুর্যতা লক্ষ্য করছেন৷ তিনি জানান, ‘‘মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে৷ আজ যে শিশুটির জন্ম হয়েছে, সে ৪০ কিংবা ৫০ বছর বয়সে এমন সব অসুখে মারা যাবে, যা আগে প্রায় ছিলই না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য