ঢাকায় হে উত্সব
১৬ নভেম্বর ২০১৩আড়াই দশক আগে যুক্তরাজ্যের হে শহরের বাসিন্দারা তাদের শহরের নামেই আয়োজন করেছিলেন সাহিত্য উত্সবের৷ আর সেই উত্সব এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এমনকি বাংলাদেশেও৷
হে শহরের নামে কেন এই সাহিত্য উত্সব? আরও কত শহরতো আছে৷ জানা গেল যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ছোট এই শহরটিতে হাজার দেড়েক লোকের বসবাস হলেও এখানে বইয়ের দোকান আছে অর্ধশত৷ তাই শহরটি বইয়ের শহর নামেও পরিচিত৷ আর সেই শহরের বাসিন্দারা বইপ্রেমী, সাহিত্যপ্রেমী হবেন এটাই স্বাভাবিক৷ তারা তাই ২৫ বছর আগে তাদের শহরের নামে যে সাহিত্য উত্সবের আয়োজন করেছিলেন তা এখন আন্তর্জাতিক সাহিত্য উত্সবে পরিণত হয়েছে৷
ঢাকায় প্রথমবারের মত হে উত্সব হয় ২০১১ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলে৷ আর গত বছর তিন দিনব্যাপী এই উত্সবের আয়োজন হয়েছিল বাংলা একাডেমিতে৷ আর তারই ধারাবাহিকতায় এবার ১৪ থেকে ১৬ই নভেম্বর এই তিন দিনের হে উত্সব আয়োজন করা হয় বাংলা একাডেমিতে৷ আন্তর্জাতিক হে উত্সব কমিটির আয়েজনে এর টাইটেল স্পন্সর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার৷ আর সহ আয়োজক বাংলা একাডেমি৷
হে উত্সবে অংশ নিয়েছেন এগারোটি দেশের সাহিত্যিকেরা৷ বাংলা একাডেমি চত্বর সাজানো হয় দেশি-বিদেশি প্রকাশক আর লেখকদের বইয়ের স্টল দিয়ে৷ আর প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই উত্সবে ভিড় করেন সাহিত্যানুরাগীরা৷ আলোচনা, স্মৃতিচারণ আর বিশ্ব সাহিত্যের নানা দিক উঠে আসে হে উত্সবে৷
হে উত্সবে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘‘এই উত্সবের মধ্য দিয়ে বিশ্ব আমাদের আরো কাছে এসেছে৷ উত্সবে খ্যাতিমান লেখক, শিল্পী, চিন্তাবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ ও মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷''
শুধু সাহিত্য আর বইয়ের আলোচনা নয়৷ পালা গান, লোক সংগীতের আসর আর পাপেট শো ঢাকার হে উত্সবকে ভিন্ন মাত্রা দেয়৷ পাপেট তৈরির গল্প আর টেলিভিশনে দেখা সিসিমপুরের চরিত্রগুলো মঞ্চে দেখে উল্লসিত হয় শিশুরাও৷
এই উত্সবে আসা সাহিত্যানুরাগীদের মধ্যে বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা গেছে৷ তারা জানার চেষ্টা করেছেন বিশ্বের কোথায় কি ধরনের সাহিত্য চর্চা হচ্ছে৷ আর সেই আগ্রহীদের মধ্যে তরুণরাও পিছিয়ে নেই৷ ঢাকার তরুণ সাঈদ ইকবাল বলেন, সাহিত্যে তাঁর ঝোক আছে৷ আছে বিশ্ব সাহিত্যে আগ্রহ৷ সেই সাথে বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যের সঙ্গে বিশ্ব সাহিত্য তিনি মিলিয়ে দেখতে চান৷ তিন দিনের এই আয়োজনে নানা দেশের বই আর আলোচনার মধ্য দিয়ে তিনি তা বোঝার চেষ্টা করেছেন৷ বিদেশি সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে৷ তাদের চিন্তার কথা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন৷
আলোচনায় বাংলাদেশ ভারত আর পাকিস্তানের ইতিহাস উঠে এসেছে৷ এসেছে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের কথা৷ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পাকিস্তানি সাহিত্যিক তারিক আলি বলেছেন, ‘‘১৯৬৮-৬৯ এর স্বাধীকার আন্দোলন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেবে তা তিনি তখনই বুঝেছিলেন৷ আর এখন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে৷''
আর হে উত্সব নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন৷ তিনি জানান, এই ধরনের আয়োজন খুব বেশি প্রয়োজন৷ কারণ এতে সবাই লাভবান হয়৷ দিতে পারেন, নিতে পারেন৷ এর মধ্য দিয়ে নিজেরা যেমন সমৃদ্ধ হওয়ায় যায় তেমনি আন্তর্জাতিক সাহিত্যও সমৃদ্ধ হয়৷ আয়োজকরা জানান, প্রতি বছর এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে৷