1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক নারীর দুঃস্বপ্ন!

নাহিদা আরেফিন
১১ জুলাই ২০১৭

আমার বেড়ে ওঠা মফস্বল শহরে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ঢাকায় আসি৷ পরে পড়াশোনা-চাকরি মিলিয়ে ৭-৮ বছর এ শহরে থেকেছি৷ চাকরি নিয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যাতায়াতের জন্য বাসকেই বেছে নিতাম৷ একটি অভিজ্ঞতার কারণে তা হয়নি৷

https://p.dw.com/p/2g5tz
Bangladesch - Landesweiter Streik der Bus- und LKW Fahrer
ছবি: bdnews24.com

ঢাকায় নারীরা কোথায় কোথায় বিড়ম্বনার শিকার – এর একটি তালিকা করলে তালিকাটা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে৷ তার চেয়ে কোথায় হয় না সে চিন্তা করাই ভালো৷ তবে তাতেও ঝামেলা মেটে না৷ কারণ এ রকম জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ যে নিপীড়ন করবে, সে যেখানে যেতে পারবে, সেখানেই সে তা করবে৷

নারীরা তাই নিজেদরেক গুটিয়ে রাখেন৷ বহু জায়গা থেকে প্রত্যাহার করে নেন নিজেদের, যার জন্য অনেক সুযোগও ছাড়তে হয়৷ আপোষ করতে হয় অনেক কিছুর সঙ্গে৷

কিন্তু একজন কর্মজীবী নারীকে ঘর থেকে বের হতে হবে, গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হবে৷ নয়ত জীবন চলবে না৷ অথচ এখানে নারীর জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কগুলোর একটি অপেক্ষা করে৷

বাংলাদেশ এমনিতেই জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়ছে৷ তার উপর ঢাকায় এই ভার আরো বেশি৷ এখানকার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা প্রয়োজনে এই শহরে আসা মানুষেরাও ভিড় করেন গণপরিবহণ৷ এই চাপ সামলানোর কোনো পরিকল্পনা নেই দেশে৷

নাহিদা আরেফিন নিতু
নাহিদা আরেফিন নিতু, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: privat

তাই ঢাকা শহরেগণপরিবহণ, বিশেষ করে বাসে চলাচল মানেই প্রত্যেকের কম-বেশি ভোগান্তির অভিজ্ঞতা৷ তবে নারীদের জন্য এ অভিজ্ঞতা কেবল ভোগান্তিরই নয়, রীতিমতো আতঙ্কের৷ ব্যক্তিগত জীবনে ঢাকার বাসে চলাচলের অভিজ্ঞতা আমার কাছে এক দুঃস্বপ্নের মতো৷

তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম৷ থাকতাম একটি আবাসিক হলে৷ একবার দাওয়াত পড়ে এক আত্মীয়ের বাসায়৷ যেতে হবে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে৷ পথের বিড়ম্বনা যাতে কম হয়, সে জন্য ঠিকানা দেয়ার সাথে সাথে একটি বাসের নামও বলে দেয়া হয়, যেটি ঢাকায় মোটামুটি সিটিং সার্ভিস হিসেবে পরিচিত৷

তখনও বাসযাত্রা আমি সাধারণত এড়িয়েই চলতাম৷ হয়ত বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে উঠতাম৷ কিন্তু একা সাধারণত উঠতাম না৷ বাসে চড়ার অভ্যাস কম থাকলেও সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে ওই বাসে যাবারই পরিকল্পনা করি৷ লাইনে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরও ভিড় থাকায় পরপর দুই বাসে উঠতে পারিনি৷ তৃতীয় বাসটিতে উঠতে পারলেও বসার কোনো জায়গা ছিল না৷ আমার পর যারা বাসে উঠে, তারা সবাই পুরুষ (!) যাত্রী৷ তাদের মধ্যে এক ৪০/৪৫ বছরের লোক রীতিমতো আমার গা ঘেঁসে এসে দাঁড়ায়৷

সেখান থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো উপায় ছিল না৷  পাশে দাঁড়ানো মধ্যবয়সি লোকটির হাত ও কনুই থেকে নিজেকে বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম৷ কোনোরকমে নিজের ব্যাগ দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলাম৷ কিন্তু কতজনকে আর থামানো যায়৷ আমার পেছন দিকে দাঁড়ানো ৩০/৩২ বছরের পুরুষটি (!) তার পুরো শরীর আমার গায়ের সাথে মিশিয়ে দিয়ে দাঁড়ায়৷

যতটা বাজেভাবে ভিড়ের সুযোগ কাজে লাগানো যায়, তার পুরোটাই করার চেষ্টায় তার কোনো ত্রূটি ছিল না৷ যখন আমি পিছন ফিরে লোকটিকে সরে দাঁড়াতে বললাম৷ তখন বাজেভাবে একটা হাসি দিয়ে আমাকে জানাল, খুব ভিড়, তাই সে সরে দাঁড়াতে পারছে না৷ দ্বিতীয়বার লোকটিকে সরে দাঁড়াতে বলার পর পুরো বাসে জনমত আদায়ের স্বরে চিৎকার করে সে বলে ওঠে, ‘‘মেয়ে মানুষ বাসে উঠলেই সমস্যা করে৷ ভিড়ে যাইতে না পারলে গাড়ি কিনে ব্যবহার করলেই হয়৷''

তারপর থেকে যেন বাসের সকল যাত্রীর চোখই ছিল আমার উপর৷ মুখে না বললেও সব পুরুষ যাত্রীর চোখে যেন ওই বাজে লোকটার দৃষ্টিই ছিল৷ আর সেই সাথে আরো যেন  বাজেভাবে শারীরিকভাবে বিব্রত করতে উদ্যমী হয় ওই পুরুষটি৷ আমার পক্ষে ওই বাসে চড়ে পুরো পথ যাওয়া আর সম্ভব ছিল না৷ আমার জন্য আশীর্বাদ ছিল তখন ঢাকার যানজট৷

বাস তখন যানজটে থেমে যায়৷ আর আমিওভয়ঙ্কর বাজে সেই অভিজ্ঞতানিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ি৷ ওই মুহূর্তে আমার কেন জানি রাগের অনুভূতি হচ্ছিল না৷ শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল৷ আজও আমার কাছে ওই ঘটনা এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো৷ আর এই ঘটনার পর আমি কোনোদিনই ঢাকার গণপরিবহণে উঠিনি৷

বন্ধু, লেখাটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য