ঠিকমতো ঘুম না হলে কী হয়?
৮ মার্চ ২০১৪বুধবার ভোর, ছয়টার মতো বাজে৷ ডানিয়েলা স্পেট বিছানা ত্যাগ করছেন৷ আগামী ৩৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকবেন তিনি৷ এটা একটা পরীক্ষা, যাতে স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ পেশায় সাংবাদিক ডানিয়েলা স্পেট এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি ঘুমাতে ভালোবাসি৷ ফলে লম্বা সময় জেগে থাকাটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে৷ এমন নয় যে আমি কখনো রাত জাগিনি৷ কিন্তু তখন সকালে ঘুমিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছি৷ তবে এবার আমি সকালেও ঘুমাবো না৷ চেষ্টা করবো কাল সন্ধ্যা অবধি সজাগ থাকতে৷ শরীরের উপর বেশিক্ষণ জেগে থাকার প্রভাব দেখতে চাই৷''
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. লেনার্ট ক্নাক গবেষণার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ এই চিকিৎসক সাধারণত তাঁর রোগীদের ভালোভাবে ঘুমাতে সহায়তা করেন৷ তবে এবার বিপরীতটা জানতে আগ্রহী তিনি৷ ইচ্ছাকৃতভাবে না ঘুমানোর মাধ্যমে তা জানা যেতে পারে৷
স্বাভাবিক অবস্থায় পরীক্ষা
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার পরিণতি জানতে ড. ক্নাক শুরুতে ডানিয়েলাকে স্বাভাবিক অবস্থায় পরীক্ষা করছেন৷ তিনি অনিয়মিত সিগন্যাল দেখতে এতটা সময় নিচ্ছেন তা মাপা হচ্ছে৷ দশ মিনিটের পরীক্ষা৷ এই বিষয়ে ড. ক্নাকে বলেন, ‘‘স্বাভাবিক অবস্থার ফলাফল বেশ ভালো এসেছে৷ তবে আগামীকাল একই পরীক্ষায় কী ফলাফল আসে তা আমি দেখতে আগ্রহী৷ এরপর দুটো ফলাফল তুলনা করবো৷''
না ঘুমিয়ে থাকা
একটানা ষোল ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকা কোনো ব্যাপার নয়৷ অধিকাংশ মানুষই এই সময়টা না ঘুমিয়ে কাটায়৷ তবে দুপুরে খাওয়ার পর অনেকের ঘুম আসে৷ সন্ধ্যায় বেড়াতে যাওয়া, কফি পান আর ছবি দেখে ঘুম থেকে দূরে থাকা যায়৷ কিন্তু তারপর? ডানিয়েলা কিন্তু না ঘুমিয়ে থাকতে বদ্ধপরিকর৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রায় ভোর চারটা বাজে৷ আমি জেগে থাকার জন্য আর কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না৷ তবে আমি সজাগ থাকবোই৷''
পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন
গত ত্রিশ ঘণ্টা ধরে না ঘুমিয়ে আছেন ডানিয়েলা৷ তাঁকে দেখলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে৷ তাঁর এখন ঘুম দরকার৷ শরীরের যাবতীয় কার্যকলাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে, শক্তি ফিরে পেতে এটা দরকার৷
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ নানা রকম ভুল করতে পারে, অসুখ হতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ যে নিয়মিত কম ঘুমায় তার স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷ ড. লেনার্ট ক্নাক এর কথায়, ‘‘ঘুমের অভাবে শরীরে মূলত দু'ধরনের বড় জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ প্রথমত হৃদযন্ত্রে সমস্যা, মাথা ব্যথা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা স্ট্রোক হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত বিষণ্ণতা এবং ভয়ের প্রবণতা বাড়তে পারে কম ঘুমের কারণে৷''
সজাগ শুয়ে থাকা
আবারও পরীক্ষা৷ ডানিয়েলাকে এবার একটি অন্ধকার ঘরে বিশ মিনিট সজাগ শুয়ে থাকতে হবে৷ এই টেস্টে যে পাশ করবে, সে হয়তো গাড়িও চালাতে পারবে৷ কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই মনিটরের সিগন্যালে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে৷ ডানিয়েলা ঘুমিয়ে পড়েছে৷ অথচ রিঅ্যাকশন টেস্ট তখনো বাকি৷ তাই তাঁকে ঘুম থেকে তুলতে হলো৷ এই পরীক্ষায় প্রথমবার ডানিয়েলা গড়ে ২২০ মিলিসেকেন্ডে সাড়া দিয়েছিল৷ কিন্তু এখন?
ড. ক্নাক বলেন, ‘‘গতকালের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি আস্তে সাড়া দিচ্ছেন ডানিয়েলা৷ আমাদের মনে হয় পরীক্ষায় ইতি টানা উচিত৷ কারণ এর চেয়ে খারাপ ফলাফল আর হতে পারে না৷''
পরিকল্পিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই ডানিয়েলা স্পেট এর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে৷ ৩৫ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকা একটা অভিজ্ঞতা বটে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷