1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক

১৯ জুন ২০১৭

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, একজন ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়েনি৷ এটি সে দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2eu91
Shafiul Islam Mohiuddin - Präsident der FBCCI
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনছবি: bdnews24.com

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন ব্যবসায়ী মার্কিন প্রশাসনের প্রধান নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছিলেন৷ নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর এফবিসিসিআই-এর তৎকালীন সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশে ডিডাব্লিউর কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, একজন ব‌্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তিনি আনন্দিত৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘...তাই আমাদের হারানোর কিছু নেই৷''

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর জুন মাসে পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ ও শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছিল ওবামা প্রশাসন৷ সেই সুবিধা এখনও ফিরে পায়নি বাংলাদেশ৷ অবশ্য পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের কথা বলা হলেও এই খাত এমনিতেই জিএসপি সুবিধা পেতো না৷ তবে এই সুবিধা না থাকায় কয়েকটি রপ্তানি পণ্যের খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷

এছাড়া এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক খাতকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়নি৷

এইসব বিবেচনায় এফবিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট মাতলুব মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মধ‌্য দিয়ে বাণিজ‌্যের বিচারে বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন সূচনার সুযোগ হয়েছে৷

কিন্তু ট্রাম্প (২০ জানুয়ারি, ২০১৭) ক্ষমতা গ্রহণের  পাঁচ মাস পর বর্তমান এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রধান ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একজন হওয়ায় ঐ প্রশাসন ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে৷ কিন্তু এখনও দুই দেশের মধ্যে সেরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি৷ অ্যামেরিকাতে তো আমাদের ব্যবসা বাড়ছে না৷ আমরা তো প্রধানত অ্যাপারেল রপ্তানি করি৷ সেখানে ছয় শতাংশের বেশি নেগেটিভ গ্রোথ দেখা যাচ্ছে৷’’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনও শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ সুবিধা না পাওয়ায় হতাশ তিনি৷ ‘‘আমাদের যেটা দীর্ঘদিন থেকে ওদের সাথে হচ্ছে না, সেটা হলো শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ - যা এলডিসির সদস্য হিসেবে আমাদের পাওয়ার কথা৷ কিন্তু লেবার স্ট্যান্ডার্ড, সেফটি ইত্যাদির নামে তারা আমাদের সেটা দিচ্ছে না,’’ বলেন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন৷ বিজিএমইএ-র সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন মে মাসের মাঝামাঝি এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷

তিনি অবশ্য মনে করছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকায় হয়ত বাণিজ্যের বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়ার সময় এখনও পায়নি৷

তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার মতো বিভিন্ন সুযোগ আছে বলে মনে করেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘অ্যামেরিকায় টেক্সটাইলসহ যে সানসেট ইন্ডাস্ট্রিগুলো (পুরনো ও ক্ষয়ে যাওয়া শিল্প) আছে সেগুলো আমরা যৌথভাবে এক্সপ্লোর করতে পারি৷’’

‘‘যখনই আলোচনা করতে যাওয়া হয়, তখনই তারা একটা করে ইস্যু নিয়ে আসে’’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী, বাংলাদেশ কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করছে৷ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দেয়ায় তাদের সমালোচনা করেছেন তিনি৷ ‘‘(দুই দেশের মধ্যে) আলোচনার সময় ওরা সঠিক কারণ বলতে পারে না৷ যেমন শিকাগোতে ‘শোয়েটশপ’ (যে কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ গ্রহণযোগ্য নয়) আছে, কিন্তু আমাদের এখানে একটা শোয়েটশপ থাকলেই ওটা নিয়ে অনেক আলোচনা করে,’’ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন মহিউদ্দিন৷

উল্লেখ্য, গত মাসের ১৭ তারিখ ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে জিএসপি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু৷

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে কেন জিএসপিসহ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায় করা যাচ্ছে না, সে প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷ ট্রাম্প প্রশাসন যদি মনে করে বাংলাদেশ একটি অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র, তাহলে হয়ত হতে পারে৷ আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ একটা ‘ডিসপ্রপোর্শনেটলি অ্যাফেক্টেড কান্ট্রি’, মানে যেটা ডিজার্ভ করে সেটা পায় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘যখনই আলোচনা করতে যাওয়া হয়, তখনই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একটা করে ইস্যু নিয়ে আসে, ইন্ডিভিজুয়াল দু-একটা ইস্যুকে দাঁড় করিয়ে দিতে চায়৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...