সরকার ইঙ্গিত দিলেই পাক সেনাদের তদন্ত
২৩ জানুয়ারি ২০১৭তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, দেশি যুদ্ধাপরাধীদের তদন্ত করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের অপরাধের কিছু তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে চলে এসেছে, যা তারা সংরক্ষণ করছেন৷ তবে এ মুহূর্তে তদন্ত শুরু হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে৷
আব্দুল হান্নান খান জানান, অন্তত দু'জন বাঙালি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে গেছে৷ এদের মধ্যে শহীদুল্লাহ নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে৷ এছাড়া আরো একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হচ্ছে৷ তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে৷ তাদের বাড়ি রংপুরে৷
বলা বাহুল্য একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাতবছর আগে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর, এই প্রথম কোনো সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো৷ একাত্তরের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি নিধন শুরুর পর প্রতিরোধ যুদ্ধে বাঙালি অনেক সেনা সদস্য যুক্ত হয়েছিলেন৷ তবে পাকিস্তানেও আটকা পড়েন অনেক সেনা কর্মকর্তা৷ একাত্তরে বেসামরিক রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর পাশাপাশি বাঙালি সেনা সদস্যদের কেউ কেউ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন৷
আব্দুল হান্নান খানের কথায়, ‘‘একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তাদের সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি৷ এদের অনেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিলে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন৷'' তিনি বলেন, একটি ঘটনা আমরা জেনেছি....ঐ সময় রংপুরে একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল৷ সেখানে কয়েকজন বাঙালি অফিসারের সম্পৃক্ততা ছিল৷ এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ হয়েছে জানিয়ে হান্নান খান জানান, দু'জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, অপরজন পলাতক৷
বিষয়টি তদন্তাধীন বলে এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তদন্ত সংস্থার প্রধান৷ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিষ্পত্তির পর এ পর্যন্ত ছ'জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ এরা সবাই রাজনীতিক – পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর নেতা, একজন বিএনপির৷ এছাড়া আর যারা দণ্ডিত, তারাও জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতা৷
অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী শুধু ১৯৫ জন নয়, আরো যদি কোনো সেনা কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে, তাদের বিচারও এখানে করা সম্ভব৷ কিন্তু এই বিচার করার জন্য সরকারের ইঙ্গিত প্রয়োজন৷ সেই ধরনের কোনো ইঙ্গিত আমরা এখনও পায়নি৷ কারণ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপার আছে৷ তবে সরকার চাইলে আমাদের সেই ধরনের প্রস্তুতি আছে৷ আমরা যে কোনো সময় শুরু হতে পারব৷''
জামায়াতের নতুন আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে জানিয়ে আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, এ বিষয়ে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত আমরা পাবো৷''
অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের নিয়েও তদন্ত চলছে৷ বাগেরহাটের এমন ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত রবিবার প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা৷ বাগেরহাটের কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে এই ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রস্তুত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালের ৪৫তম প্রতিবেদন৷ এই ১৪ জনের মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ বাকি ১০ জন পলাতক৷ এরা হলেন – খান আশরাফ আলী, সুলতান আলী খান, রুস্তম আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, শেখ ইদ্রিস আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, মনিরুজ্জামান হাওলাদার, হাশেম আলী শেখ ও আজহার আলী শিকদার৷ এছাড়া যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা হলেন – খান আকরাম হোসেন, শেখ উকিল উদ্দিন, আব্দুল মকবুল মোল্লা ও ইদ্রিস আলী মোল্লা৷
এ বিষয়ে আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷