Tiefe Trauer um Tugce
৩ ডিসেম্বর ২০১৪দুর্বলের সাহায্য করতে গিয়ে তুর্কি বংশোদ্ভূত ছাত্রী টুচে-কে নিজের প্রাণের মূল্য দিতে হলো৷ হৃদয়ের তাড়নায় একদল মারমুখী তরুণ ও একটি অসহায় মেয়ের মাঝে পড়ে সে নিজেই মৃত্যুর শিকার হলো৷ মারাত্মক হামলার পরিণাম হিসেবে নিজের ২৩তম জন্মদিনেই প্রাণ হারালো টুচে৷ সারা দেশ এই সাহসী প্রাণোচ্ছল তরুণীর মৃত্যুতে শোকাহত৷ তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জার্মানির মাথা নত হয়ে গেছে৷
টুচে-র মৃত্যুর দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনে কয়েক'শ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন৷ ‘লাইফ সাপোর্ট' বন্ধ করা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে ছিলেন৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ সামাজিক নেটওয়ার্কে তাঁদের সমবেদনা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ রাজনীতি জগতেও এমন সমবেদনা দেখা গেছে৷ মর্মাহত জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক টুচে-র বাবা-মাকে শুধু একটি চিঠি লেখেন নি, তিনি সাহসিকতার জন্য এই তরুণীকে মরণোত্তর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘বুন্ডেসফ্যারডিনস্টক্রয়েৎস' দেবার কথা ভাবছেন৷
ডমিনিক ব্রুনার-এর ঘটনা
এই তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যু পাঁচ বছর আগে আরেকটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ কিন্তু এবারের ঘটনার সঙ্গে তার অনেক পার্থক্য রয়েছে৷ সেবার ডমিনিক ব্রুনার নামের এক ম্যানেজার ট্রেনের মধ্যে অসহায় ছাত্রদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন৷ আততায়ীদের মারে তাঁর মৃত্যু হয়৷ দুর্বলদের সুরক্ষায় তাঁর এই আচরণের জের ধরে গোটা দেশে নাগরিক সচেতনতা ও সাহসিকতার মূল্য ও অর্থ সম্পর্কে বিতর্ক শুরু হয়৷ ডমিনিক ব্রুনার-এর প্রতিও শ্রদ্ধাবোধের ঢেউ দেখা গিয়েছিল৷
সেবারের মতো এখনও প্রত্যেকে নিজের কাছে এই প্রশ্ন রাখতে পারেন – ‘‘কোনো দুর্বল মানুষ বিপন্ন হলে আমি কী করতাম? আমি কি বিপদ সত্ত্বেও এতটা ঝুঁকি নিয়ে এমন সাহস দেখাতে পারতাম?'' এখনও প্রচলিত মত হলো, ঝুঁকি সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়াই উচিত, এমনকি পরিস্থিতি খারাপ হলে বড় মূল্য চোকাতে হলেও৷ ডমিনিক ব্রুনার-এর ঘটনা দ্রুত সংবাদ শিরোনাম থেকে সরে গিয়েছিল৷ টুচে-র মৃত্যুও কি এমনভাবে ভুলে যাবে মানুষ? আশা করি এমনটা হবে না৷ ডমিনিক ব্রুনার-এর ঘটনার সঙ্গে অনেক মিল সত্ত্বেও এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ টুচে-র মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্যে একটি সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ কারণ অভিবাসীদের নিয়ে যে বর্তমানে যে নেতিবাচক বিতর্ক চলছে, সে বিষয়ে আমাদের মত বদলে যেতে পারে৷
জার্মানিতে ‘ইন্টিগ্রেটেড' বিদেশিদের প্রয়োজন
জার্মানিতে অভিবাসন নিয়ে বেশিরভাগ আলোচনাই সমস্যা ও হাতে গোনা কিছু নেতিবাচক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ যে সব বিদেশিরা সমাজের মূল স্রোতের অংশ না হয়ে সমান্তরাল সমাজে থাকতে চান, তাদের নিয়েই বেশি কথা হয়৷ এবারের ‘হিরো' নিজেই অভিবাসী পরিবারের মেয়ে৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত এই তরুণীর মনে শিক্ষক হয়ে ওঠার, সমাজে এগিয়ে চলার বাসনা ছিল৷ ছাত্রী হিসেবে সে শান্তিপূর্ণ পারস্পরিক আচরণ পছন্দ করতো৷ বিদেশি বংশোদ্ভূত বেশিরভাগ মানুষের মতোই সেও জার্মান সমাজের বিকাশে অবদান রাখতে চেয়েছিল৷ এই মানুষগুলি নানা ভাবে জার্মানিকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন৷ জনসংখ্যা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি – বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান যে অনস্বীকার্য, অসংখ্য গবেষণায় তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এই ধরনের আবেগতাড়িত আলোচনার ক্ষেত্রে তথ্য-পরিসংখ্যানের তেমন প্রভাব থাকে না৷ এক একটি মানুষের ঘটনাই আমাদের বেশি নাড়া দেয়৷ যেমন এই সাহসী, সুন্দরী তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান তরুণী, যে এখন জার্মানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে৷