জার্মানির কিয়স্কগুলোর অবস্থা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪৫২ বছর বয়সি ইরানি বংশোদ্ভূত শিরিন মাজানদানানি ভোরে উঠেই ছোটেন বন স্টেশন সংলগ্ন কিয়স্কটি খুলতে৷ নিয়মিত আসা খদ্দেরদের চেনেন তিনি, তাঁদের খোঁজখবর নেন, হাসিঠাট্টা করেন৷ কিন্তু ইদানীং কাজটায় তেমন আনন্দ পাচ্ছেন না কিয়স্কের মালিক শিরিন মাজানদানানি৷ জীবন ধারণের জন্য কোনো রকমে চালিয়ে যাচ্ছেন দোকানটি৷ এখন আর তেমন আয়ও হয়না৷ ‘‘কয়েক বছর আগেও দোকানের আয় থেকে মোটামুটি ভালই চলতো,'' বলেন শিরিন মাজানদানানি৷
মূলত অর্থনৈতিক সংকটই দায়ী
এজন্য মূলত অর্থনৈতিক সংকটই দায়ী৷ ‘‘তারপর আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি৷ এছাড়া সবকিছুর খরচও বেড়ে গিয়েছে৷ গত কয়েক বছরে আমাদের লাভের পরিমাণ কমে গিয়েছে৷ দোকানের ভাড়াও বেড়েছে৷'' জানান শিরিন মাজানদানানি৷
এছাড়া প্রতিযোগীদের সংখ্যাও কম নয়৷ বন স্টেশন সংলগ্ন কয়েক মিটারের মধ্যে রয়েছে চারটি কিয়স্ক৷ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক খুব মধুর বলা চলে না৷ কেননা প্রত্যেককেই টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷ তার ওপর আবার প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে সুপারমার্কেটগুলির সঙ্গেও৷ ২০০৬ সাল থেকে জার্মানিতে সুপারমার্কেট খোলা রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে শেষ মুহূর্তে যারা কিছু কিনতে চান, তাদের আর কিয়স্কের ওপর ভরসা করতে হয় না৷
উদ্বিগ্ন হওয়ার মত নয়
মার্কেটিং-এর প্রফেসর সাবিনে ম্যোলার মনে করেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা কিছুটা পড়ে গেলেও খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের অনুমান, জার্মানিতে ৩৮,০০০-এর মতো কিয়স্ক রয়েছে৷ লাভ না করতে পারায় কোনো কোনো দোকান উঠে যায়৷ কিন্তু অন্যদিকে তখন আবার আরেকটি দাঁড়িয়ে যায়৷''
এছাড়া দোকানের পসরার ব্যাপারেও নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে৷ জার্মানিতে ধূমপানের পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচ্ছে৷ পত্রপত্রিকা অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে৷ শুধু মিষ্টি জাতীয় জিনিস দিয়ে তেমন লাভ করা যায় না, মনে করেন ম্যোলার৷
কিন্তু শিরিনের দোকানে বিক্রিত সামগ্রীর ৬০ শতাংশই সিগারেট৷ তবে সিগারেটের ওপর কর বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে অনেক কম হয়৷ জানান শিরিন মাজানদানানি৷
স্টেশন সংলগ্ন হওয়ায় চোখে পড়ে মানুষের
বন স্টেশনের কাছে হওয়ায় কিছুটা সুবিধাও হয় তাঁর৷ কিছু খদ্দের আসেন নিয়মিত৷ অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে ওঠে৷ এজন্য বড় বড় সুলভ মূল্যের ডিসকাউন্টারে না গিয়ে ছোটখাট জিনিস কেনার জন্য ক্ষুদ্র কিয়স্কে যান অনেকে৷
প্রফেসর ম্যোলার মনে করেন, মালিকরা কিছু উদ্যোগ নিলে আবার নতুন হাওয়া লাগতে পারে কিয়স্কে৷ এই সব দোকানের চিরাচরিত সম্ভার মানুষকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না৷ তাই এই দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার মালিকদের৷ অন্যদিকে অনেক খদ্দের এখন শনিবার সকালে দূরের সুপারমার্কেটের বদলে আশেপাশের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে চান৷ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন কিয়স্কের মালিকরা৷ আর তাহলে ব্যবসার বাজারে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কিয়স্কগুলি৷
তাজা খাদ্যদ্রব্যও আছে
শিরিন মাজানদানানি তাঁর দোকানে অনেক তাজা খাদ্যদ্রব্যও রাখেন৷ তা সত্ত্বেও রীতিমত প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে তাঁকে৷ কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন এই নারী৷ কমপক্ষে আরো ১০ বছর এই ব্যবসাটা চালিয়ে যেতে চান তিনি৷ ‘‘আমার ছেলের লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত৷'' বলেন কিয়স্কের মালিক মাজানদানানি৷