1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিউনিশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার নারীরা

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১

টিউনিশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে এসেছে বিশাল পরিবর্তন৷ একনায়ক জয়নাল আবেদিন বেন আলিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছে টিউনিশিয়ার সাধারণ মানুষ৷ এই বিক্ষোভে টিউনিশিয়ার নারীরাও অংশগ্রহণ করেছিল৷

https://p.dw.com/p/10GAY
টিউনিশিয়ায় বিক্ষোভে নারীরাও অংশ নিয়েছিলছবি: picture alliance/dpa

রাজধানী টিউনিসের রাস্তায় বেন আলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল হাজার হাজার নারী৷ যেভাবেই হোক একনায়ক প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে উৎখাত করতে হবে৷ অল্পবয়সি মেয়ে, প্রাপ্তবয়স্কা নারী, মধ্য বয়সি, বৃদ্ধা সবার পরনে ছিল কালো বোরখা৷ কাঁধে কালো ব্যাজ৷ সবাই চিৎকার করে শুধু একটি স্লোগানই দিচ্ছিল৷ তাদের দাবি ছিল একটিই – তা হল একনায়ক বেন আলির হাত থেকে টিউনিশিয়াকে রক্ষা করা৷ এদের কারো মাথাই কালো স্কার্ফে ঢাকা ছিল না৷ পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ছিল সোচ্চার৷ তারাও অংশগ্রহণ করেছে সক্রিয়ভাবে৷

পিছিয়ে নেই কেউ

৩৬ বছরের ইরগুই নাজেত তর্ক করছিল পুরুষদের সঙ্গে৷ মেয়েটি দেশের অন্যান্য নেতাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিল৷ যেসব পুরুষ মেয়েটির কথা শুনছিল, তারাও বেশ অবাক হয়েছিল এই দেখে যে মেয়েটি দেশের রাজনীতি এবং নেতাদের খবরাখবর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ অনেকেই বলছিল, মেয়েটির উচিত দেশের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া৷ এর অর্থ দাঁড়ায় এটাই যে, টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট একজন মহিলা – তা মেনে নিতে কারো আপত্তি নেই৷ একজন মহিলা বলে আরে সে পিছিয়ে থাকতে পারে না – তাই বুঝিয়ে দিয়েছে পুরুষরা৷

NO FLASH Unruhen in Tunesien
বেন আলি’র ছবি ছেঁড়া দেখে উল্লসিত টিউনিশিয়ার দুই মহিলাছবি: AP

নাজেত পেশায় একজন আইনজীবী৷ টিউনিশিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে সে হাজির হয় ট্যাক্সিতে৷ টিউনিশিয়ার নারীদের সঙ্গে অন্যান্য আরব দেশের নারীদের পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন,‘‘আমরা অন্য যে কোন আরব দেশের নারীদের থেকে অনেক বেশি অগ্রগামী, প্রগতিশীল৷ আমাদের এই বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদের সময় অন্য আরব দেশের মহিলাদের জন্য আফসোস করছি৷ কারণ তাদের স্বাধীনতা নেই৷ লিবিয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে৷ তারা কখনোই স্কার্ফ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারে না৷ অপরিচিত কোন পুরুষের সঙ্গে কথাও বলতে পারে না৷ তা একেবারে নিষিদ্ধ৷''

আদালত প্রাঙ্গনে মহিলারা

নাজাতের সঙ্গে দেখা হয় আদালতের অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে৷ সবাই টিউনিশিয়ার আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত৷ অনেক মহিলাও রয়েছেন আলোচনায়৷ সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় হল গোটা টিউনিশিয়ায় যত বিচারক কাজ করছে তার এক তৃতীয়াংশ হল মহিলা৷ টিউনিশিয়ার মহিলারা স্বামীদের প্রয়োজনে তালাক দিতে পারেন এবং বহুবিবাহ দেশটিতে নিষিদ্ধ৷ ১৯৬২ সাল থেকে নারীরা পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ১৯৯৫ সাল থেকে গর্ভপাতের অধিকারও দেওয়া হয়েছে নারীদের৷ এর মাত্র আট বছর আগে অ্যামেরিকায় গর্ভপাতের অধিকার দেওয়া হয় নারীদের৷ বেন আলি ইসলামি উগ্রপন্থী দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন৷ টিউনিশিয়ার অনেক মহিলার মনে একটিই ভয়, আর তা হল এবার হয়তো এই দলগুলো ফিরে আসবে রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ কিন্তু ৩১ বছর বয়স্ক আরেক আইনজীবী আসমা বেলকাসেম জানান তিনি মোটেই ভীত নন৷ আসমা বললেন,‘‘যা নিশ্চিত তা হল আমাদের অর্থাৎ নারীদের অধিকার রয়েছে৷ আর এই অধিকার কখনোই কেউ হরণ করতে পারবে না৷ কোন ইসলামি দলের পক্ষেও তা সম্ভব নয়৷''

NO FLASH Tunesien Proteste Aufstände
ছবি: picture-alliance/dpa

টিউনিশিয়ার আইনে ১৯৫৬ সাল থেকে মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷ তাদের স্বাধীনতা, সমানাধিকারসহ উচ্চশিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে তখনই৷ সেই সময় টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাবিব বুরগিবা৷ তিনিই ফ্রান্সের হাত থেকে টিউনিশিয়াকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন৷ তিনিই নারীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, দেশ গড়তে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের জন্য৷ কিন্তু বেন আলিকে কেউই কোন ধরণের কৃতিত্ব দিতে রাজি নয়৷

নারীবাদী খাদিজা শেরিফ জানান, একনায়কতন্ত্রের পতনের পর তিনি আবারো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবেন৷ প্রতিটি নারীর সমস্যার কথা তিনি শুনতে পারবেন৷ যে কেউই যে কোন ধরণের সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসতে পারবে৷ খাদিজা জানান,‘‘টিউনিশিয়ার নারীবাদি দলের যে কোন কাজ কখনোই – গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ সুশীল সমাজ গঠন থেকে দূরে ছিলনা, আলাদা ছিল না৷ আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো৷ এই সংগ্রামের মূল লক্ষ্য হল – ধর্মকে যেভাবেই হোক দেশের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, আলাদা রাখা৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক