বার্সাকে বাঁচাবেন ক্লপ!
১৮ এপ্রিল ২০১৪বায়ার্ন যদি পেপ গুয়ার্দিওলাকে সুদূর নিউ ইয়র্কে তাঁর স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে তুলে আনতে পারে মিউনিখের আলিয়ানৎস অ্যারেনায়, তাহলে বার্সাই বা বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে পাবার চেষ্টা করবে না কেন? বায়ার্ন কোচ পদে পেপের পূর্বসূরি ইয়ুপ হাইনকেস-ও রেয়ালে ছিলেন এককালে৷ বের্ন্ড শুস্টারের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল৷
বলতে কি, স্পেন আর জার্মানির ফুটবল কুটুম্বিতা উভয় দেশের পক্ষে চিরকাল লাভজনক হয়ে এসেছে: স্পেনের ফুটবলারদের যেন জার্মানদের কাছ থেকে এবং জার্মান ফুটবলারদের স্পেনের ফুটবল সংস্কৃতি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ তবে ইয়ুর্গেন ক্লপ ঠিক জার্মান ফুটবল কোচিং-এর প্রতিভূ নন, তিনি একটি নিজস্ব মার্কা৷ ইংরিজিতে বলতে হলে বলতে হয়, ক্লপ হলেন সেই মহার্ঘ বস্তু: একজন চূড়ান্ত ‘মোটিভেটর' বা প্রেরণাদায়ক৷ তা না হলে ইনজুরি বিধ্বস্ত ডর্টমুন্ড পর পর রেয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে, সবশেষে জার্মান কাপের সেমিফাইনালে ভল্ফসবুর্গকে হারিয়ে ফাইনালে বায়ার্নের বিরুদ্ধে আবার মাঠে নামার অধিকার অর্জন করতে পারতো না – এক কথায়, এরকম মাথা উঁচু করে সিজন শেষ করতে পারতো না৷ ডর্টমুন্ডের এই প্রেরণার উৎস হলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, সেটাই তাঁর ব্যক্তিত্ব, সেটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য, সেটাই তাঁর পরিচয়৷ ওদিকে বার্সার প্রয়োজন ঠিক এই ধরনের একটি ব্যক্তির, এই ধরনের একটি কোচের৷
মাত্র সাতদিনের ব্যাপার, তারই মধ্যে যেন ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন বার্সা সাফল্যের শিখর থেকে হড়কে রূঢ় বাস্তবে নেমে এলো: ভ্যালেন্সিয়ায় রেয়াল মাদ্রিদের কাছে হারল ২-১ গোলে; অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ১-০ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিল এবং আরো লজ্জার কথা, দীনহীন গ্রানাডার কাছে ১-০ গোলে হেরে লা লিগার পয়েন্টের তালিকায় তৃতীয় স্থানে নেমে এলো৷
অবশ্য বার্সার মরশুমটা এমনিতেই ভালো যাচ্ছিল না৷ কোচ টিটো ভিলানোভা গত জুলাই মাসে বিদায় নিতে বাধ্য হলেন গলার ক্যানসারের কারণে৷ এ বছরের জানুয়ারিতে ক্লাব প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রোসেল নেইমারকে সই করানো সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির দরুণ গদি ছাড়লেন৷ সেই সঙ্গে ছিল আবার বার্সার সুবিখ্যাত লা মাসিয়া ইয়ুথ অ্যাকাডেমিতে আন্ডার-এজ, অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক প্লেয়ার নেওয়া নিয়ে ফিফার তরফে ট্রান্সফার ব্যান৷
সব মিলিয়ে ঐ অভিশপ্ত সাতদিনে বার্সার যা দশা হলো, তা হলো এই: ইনজুরির ফলে দুর্বল ডিফেন্স; এককালের রাজকীয় মিডফিল্ড যেন মাঝবুড়ো ও মন্থর; এমনকি মেসি-নেইমারের সেই ক্ষুরধার অ্যাটাকও যেন ভোঁতা এবং অনুমেয়৷ কোপা দেল রাই-তে রেয়ালের হাতে পরাজয়ের পর ‘স্পোর্ট' লিখল: ‘‘রেয়াল দুঃখী বার্সাকে কবর দিল''৷ ওদিকে কাতালান মিডিয়ার যতো রাগ, তার অর্ধেকটা বার্সার স্পোর্টিং ডাইরেক্টর আন্দোনি জুবিজারেতার উপর৷ তবে যার ‘শির লাও', ‘মুন্ডু আনো' বলে চেঁচামেচি শুরু হয়েছে, তিনি হলেন আসলে কোচ মার্তিনো৷
এখন প্রশ্ন হলো: ডর্টমুন্ডের ইয়ুর্গেন ক্লপ বার্সেলোনার ফেবারিট হতে পারেন, কিন্তু ক্লপ এই দন্তহীন সিংহের দায়িত্ব নিতে চাইবেন কি? ক্লপের পরবর্তী পদক্ষেপ একমাত্র হতে পারে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে, কেননা বুন্ডেসলিগায় তিনি অপর যে পদটি অলঙ্কৃত করতে পারতেন, সেটি হলো বায়ার্নের কোচের পদ, যে পদে গুয়ার্দিওলা অধিষ্ঠিত৷
তাই হয়ত সফল জার্মান কোচকে যেতে হতে পারে স্পেনে, যেমন আরেক সফল স্পেনীয় কোচকে জার্মানি আসতে হয়েছিল৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)