1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিপসিদের দেখাশোনায় ‘বিশ্বের চিকিৎসক’

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০

ফরাসি সরকার গত কয়েক মাসে রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আসা ৮ হাজারের মত জিপসিকে তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে৷ ফলে রাজনৈতিক সমস্যার সাথে সাথে প্রচন্ড মানবিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দিয়েছে সেখানে৷

https://p.dw.com/p/POFP
ছবি: picture-alliance/dpa

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সার্কোজির মতে জিপসিদের ক্যাম্পগুলো অপরাধিদের এক বড় আখড়া৷ তাই তাঁরা যেখান থেকে এসেছেন সেখানেই চলে যাওয়া উচিত৷ যেই কথা সেই কাজ৷ কারণ, সার্কোজির এই কথার পর সঙ্গে সঙ্গেই জিপসিদের ক্যাম্প খালি করার সরকারি নির্দেশ এসে যায়৷

এরপর থেকেই দলে দলে জিপসিদের তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো থেকে রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷ ফলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক মানবিক সমস্যা৷ জিপসিদের এই ভাবে বিতাড়ন করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে৷ বলা হচ্ছে জিপসিরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক, তাই তাদের বহিষ্কার করাটা নাগরিক স্বাধীনতার পরিপন্থি৷ খোদ ফ্রান্সেই হাজার হাজার মানুষ সরকারের এই ধরণের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷ স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় সংসদে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও হয়ে গেল৷

জিপসিরা ফ্রান্সের বড় বড় শহরের এক প্রান্তে দারিদ্র্যে জর্জড়িত অবস্থায় দিন কাটান৷ বেশ কয়েক বছর ধরে ‘বিশ্বের চিকিৎসক' নামে এক বেসরকারি সংস্থা তাঁদের দেখাশোনা করছে৷ চিকিৎসা করছে নানা রোগ ব্যাধির৷ এই সংস্থার পক্ষ থেকে ডাক্তার ও নার্সদের একটি টিম প্রতি সপ্তাহে স্ট্রাসবুর্গের জিপসিদের শিবিরগুলিতে চিকিৎসার জন্য যায়৷

Roma Siedlung in Zagreb
ফ্রান্সে রোমা জিপসিদের অস্থায়ী আবাসছবি: DW

এমনি একটি দিনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক এখন৷ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের একটি দল চিকিৎসার সাজসরঞ্জাম ও ওষুধপত্র নিয়ে একটি গাড়িতে করে জিপসিদের ক্যাম্পগুলির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন৷ পুরানো বিমানবন্দর ও তার আশেপাশে ক্যাম্পিং গাড়ি নিয়ে বসতি গেড়েছেন রুমেনিয়াও বুলগেরিয়া থেকে আসা জিপসিরা৷ বিশেষ করে নারী ও শিশুরাই এই মেডিকেল টিমটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন৷ তাদের ক্যাম্পে পানি ও বিদ্যুতের অভাব প্রকট৷

ডাক্তার ফিলিপ হাসলার গাড়ির ভেতর চাপাচাপির মধ্যেই রোগীদের চিকিৎসা করছেন৷ তিনি জানান, ‘‘সেদিন একটি বাচ্চা ছেলে এলো পাকস্থলীর সংক্রমণ নিয়ে৷ এক মহিলা এসেছিলেন দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগে৷ আমি তাঁদের ওষুধপত্র দিলাম৷ প্রেসক্রিপশন দিলে কোনো লাভ হত না, কেননা তাঁদের কোনো চিকিৎসা বিমা করা নেই৷ কখনও কখনও আমরা তাঁদের জন্য সাবান, দাড়ি কামানোর রেজার, দাঁতের ব্রাস এসবও নিয়ে আসি৷''

একটি ক্যাম্প থেকে দ্রুত কাজ সেরে আরেকটিতে যেতে হয় মেডিকেল টিমটিকে৷ জিপসিদের এরকম ৬ টা ক্যাম্প রয়েছে স্ট্রাসবুর্গে৷ ফ্রান্সের অ্যালসাস প্রদেশে সব মিলিয়ে জিপসিদের সংখ্যা ২৫০-এর মত হবে৷ জিপসিরা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন বলে তাঁদের সংখ্যাটাও ওঠা নামা করে৷

হাইওয়ের ঠিক নীচে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন জিপসিদের কয়েকজন৷ তাঁদের একজন স্টেফানা স্টানেস্কু৷ ৬০-এর ওপরে বয়স হবে তাঁর৷ ফরাসি সরকারের চাপের মুখে রুমেনিয়ায় ফিরে যেতে প্রস্তুত তিনি৷ তাঁর ভাষায় ‘‘যথেষ্ট হয়েছে৷ আমি এখন রুমেনিয়ায় আমার ছেলেমেয়েদের কাছে ফিরে যেতে চাই৷ সরকার যে দেশে ফেরার টিকিট দেবেন বলেছেন, সে সুযোগটা আমি নেব৷ যাই হোক আমার মেরুদণ্ডের চিকিৎসাটা তো হয়ে গেছে৷ রুমেনিয়ায় এই অপারেশনের খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না৷''

ফরাসি সরকারের কাছে এটা কোনো বহিষ্কার নয়, বরং স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়া৷ কিছুদিন আগে পুলিশ এসে এক জিপসি পরিবারের পুরুষটিকে রুমেনিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়৷ থেকে যান তাঁর স্ত্রী ও চার বছরের নাতি৷ এ প্রসঙ্গে হতচকিত মহিলাটি বলেন, ‘‘তারা বার বার আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে৷ তারপর হঠাৎ আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আমি একা চার বছরের নাতিটাকে নিয়ে পড়ে থাকি৷''

এইভাবে জিপসিদের পিংপং বলের মত রুমেনিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ছোড়াছুড়ি করা হচ্ছে৷ পরিবারগুলি হচ্ছে ছত্রভঙ্গ৷ চিকিৎসক দলটির সঙ্গে আসা তরুণী ধাত্রী তানিয়ার কাছে এই অসহায় মানুষগুলো দুঃখের কথা বলে কিছুটা হালকা হতে চান৷ তানিয়া বলেন, ‘‘এই সব মানুষ নানা চিন্তাভাবনায় জর্জড়িত৷ নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে মাথা ঘামানোর মত অবস্থা নেই তাঁদের৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবরতি গুহ