1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌জালিকাট্টু'‌ বৈধ করতে অধ্যাদেশ?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ জানুয়ারি ২০১৭

ষাঁড়কে বশ মানানোর খেলা ‘‌জালিকাট্টু'‌ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের যে রায়, তাকে খারিজ করতে অধ্যাদেশ আনছে তামিলনাড়ু এবং কেন্দ্র, দুই সরকারই৷

https://p.dw.com/p/2W7Et
জালিকাট্টু
ছবি: UNI

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর রাজধানী শহর চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে জালিকাট্টুর সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে গত দু'‌দিন ধরে৷ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নন, এই সমাবেশে সামিল হাজার হাজার তরুণ, যুবক, যাঁরা মনে করছেন, ষাঁড়কে বশ মানানোর খেলা ‘‌জালিকাট্টু'‌ তামিল সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ প্রতি বছর নবান্ন উৎসব ‘‌পোঙ্গল'‌-এর আগে এই খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু বছরের ‘‌ফার্টিলিটি কাল্ট'‌৷ কাজেই পশুদের প্রতি মানবিক আচরণের দাবিতে সোচ্চার সংগঠন ‘‌পেটা'‌-র আর্জিতে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জালিকাট্টু নিষিদ্ধ করার যে রায় দিয়েছিল, তাকে বাতিল করতে হবে৷ গত বুধবার থেকে চেন্নাইতে এই নিয়ে যে জনসমাবেশ, তা শুক্রবার আরও ব্যাপক চেহারা নেয়৷ বহু ছেলে-মেয়ে, যাঁরা অনেকেই বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী, তাঁরা অফিস ছুটি নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে যোগ দেন৷ তাঁদের অনেকেই বলতে থাকেন, তথাকথিত ‘‌আরব বসন্ত'‌-এর মতোই বৈপ্লবিক এই স্বতঃস্ফূর্ত গণবিক্ষোভ, যা সামাল না দিলে বিদ্রোহের চেহারা নেবে!‌

এর পরই শনিবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও.‌ পনিরসেলভম আর্জি জানালেন, বিক্ষোভ বন্ধ করে সবাই যেন ঘরে ফিরে যান৷ কারণ সুপ্রিম কোর্টের ঐ রায়ের বিপক্ষে গিয়ে রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করে জালিকাট্টুকে বৈধ ঘোষণা করবে৷ আগামী দু'‌দিনের মধ্যে এই অধ্যাদেশ জারি হবে৷ বুধবার রাতের খবর ছিল, কেন্দ্র সরকারও এই প্রশ্নে তামিলনাড়ু সরকারের পাশেই থাকছে৷ তামিল মানুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রশ্নে একমত নরেন্দ্র মোদীর সরকারও৷ কাজেই রাজ্য সরকার অধ্যাদেশ জারি করলে তাতে কেন্দ্র সরকারের সায় থাকবে৷ এ প্রসঙ্গে শনিবার ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি জানালেন, এমনও হতে পারে যে কেন্দ্র সরকারও সমধর্মী একটি অধ্যাদেশ জারি করল৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, তামিলনাড়ু সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো অধ্যাদেশ জারি করলে তাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্মতি প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রপতি এই মুহূর্তে কলকাতা সফরে৷ তবে শুক্রবার রাতেই তিনি রাজধানী ফিরে যাচ্ছেন৷ সম্ভবত সেই কারণেই অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, এক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে৷

তামিলনাড়ুর মানুষেরও দাবি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক৷ কারণ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে গত বছরও রাজ্যে জালিকাট্টু নিয়ে সমস্যা হয়েছিল৷ এ বছরও পুলিশ জালিকাট্টুর কয়েকজন উদ্যোক্তাকে গ্রেপ্তার করে, যার থেকে এত প্রতিবাদ, বিক্ষোভের শুরু৷ তামিল জনতার নয়নমনি, তামিল ছবির সুপারস্টারও এদিন নীরব প্রতিবাদে সামিল হন৷ অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার এ আর রহমানও জানান, তিনি দিনটি উপবাসে কাটিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন৷ আন্তর্জাতিক দাবার প্রাক্তন গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দও জানিয়েছেন যে, তিনি জালিকাট্টুর পক্ষে৷ এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা যে অমান্য হবেই, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন এডিএমকে দলের বরিষ্ঠ নেতা এম থাম্বিদুরাই দলীয় সাংসদদের নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন৷ তিনি এদিন জানালেন, খুব সম্ভবত রবিবারই অধ্যাদেশ জারি হয়ে যাবে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভামকে জানিয়েছেন, তামিল ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাতেই কেন্দ্রের সায় আছে৷

এদিকে পশু অধিকার সুরক্ষা সংগঠন ‘‌পেটা'‌-কে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে তামিলনাড়ুতে৷ কিন্তু পেটা নিজেদের অবস্থানে অনড়৷ তাদের আপত্তি, খ্যাপা ষাঁড়কে পোষ মানানোর এই প্রচলিত রীতিতে, ষাঁড়কে খ্যাপানোর জন্য তার চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, ধারালো জিনিস দিয়ে খোঁচা মারা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা, কিছুই বাদ থাকে না৷ এবং সহজে যাতে ষাঁড়কে বশে আনা যায়, তার জন্য মাদক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় ষাঁড়গুলিকে৷ জালিকাট্টু আদতে একটি বর্বর, মধ্যযুগীয় প্রথা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ পেটা এদিন জানিয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি বন্যপ্রাণ মন্ত্রকের তরফ থেকেও এক বিজ্ঞপ্তিতে জালিকাট্টুকে ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পেটা৷ এবারও যদি অধ্যাদেশ জারি হয়, তার বিরুদ্ধে ফের আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷

আপনার কী মনে হয়? ‘‌জালিকাট্টু'‌ কি সত্যিই নিষিদ্ধ করা উচিত? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান