জার্মান শব্দভাণ্ডারে ১০টি নতুন সংযোজন
বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করেছে বাংলাদেশ৷ এতে তারুণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ আসলে তরুণ সমাজ, সে বাংলাদেশের হোক অথবা অন্য দেশের, ভাষায় ভালো-মন্দ প্রয়োগ নিয়ে এসেছে বরাবরই৷ জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়...৷
ম্যার্কেল্ন
রাজনীতি থেকে পপ-কালচার – জার্মানির তরুণ সমাজ কোনো কিছুকেই বাদ দিতে চায় না৷ তাই চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নামটিকে ব্যঙ্গ করে ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহার করতেও পিছ-পা নয় তারা৷ ম্যার্কেল থেকে ‘ম্যার্কেল্ন’ – এ শব্দটি আজকাল ব্যবহার হচ্ছে এমন মানুষকে বোঝাতে, যাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অথবা নিজ মতামত দেওয়ার ক্ষমতা নেই৷ জার্মান চ্যান্সেলর নিশ্চয় এতে বিশেষ খুশি নন!
রুম্-অক্সিডিয়েরেন
‘অক্সিডেশন’ – এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটা তখন ঘটে, যখন অক্সিজেন-এর অণু অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মিলিত হয়৷ অক্সিডেশন থেকেই তৈরি হয়েছে ‘রুম্-অক্সিডিয়েরেন’ কথাটি৷ তরুণ প্রজন্ম এটা ব্যবহার করছে অনেকটা ইংরেজি শব্দ ‘চিল’-এর মতো৷ মানে আড্ডা দেওয়া, মানুষের সঙ্গে মেশা – এই আর কি! অবশ্য খুব বেশি অক্সিজেন যেমন ওয়াইনকে টক করে দেয়, তেমন খুব বেশি আড্ডা মারার বিপদটাও জানে তারা৷
ক্রিমেন
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উঠে এসেছে শব্দটি৷ ইউক্রেন রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও ক্রাইমিয়ায় রুশ নাগরিকদের ঢল বন্ধ হয়নি৷ তাই ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া যখন ‘রাশিয়ায় ফিরে যায়’, তখন খুশি হন অনেকেই৷ কিন্তু জার্মানদের চোখে এটা কেড়ে নেওয়া৷ ক্রাইমিয়াকে জার্মান ভাষায় বলা হয় ‘ক্রিম’, আর সেই থেকেই ‘ক্রিমেন’৷ এর অর্থ – অন্যকে দেওয়া জিনিস আবার নিজের বলে কেড়ে নেওয়া৷
স্কাইলার্ন
এই শব্দটি এসেছে ‘পপ-কালচার’ থেকে৷ আরো খুলে বললে, মার্কিন টেলিভিশন সিরিয়াল ‘ব্রেকিং ব্যাড’ থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে৷ সিরিয়ালটিতে একটি নারী চরিত্রের নাম ‘স্কাইলার’৷ মহিলা সবসময় তাঁর স্বামীর পিছনে লেগে থাকেন, বিরক্ত করেন৷ তাই কারুর অন্যের পিছনে লাগার অভ্যাস থাকলে – জার্মানির তরুণরা তাকে বলে –এত ‘স্কাইলার্ন’ করিস না! মানে, এত বিরক্ত করিস না৷
আর্থ পর্ন
পর্নোগ্রাফি শুধু নারী-পুরুষের শরীরকেন্দ্রিক হবে কেন? আমাদের চোখের সামনে প্রকৃতির এমন অনেক নিদর্শন করেছে, যেগুলিকে ‘ফ্যালাস সিম্বল’ বললে হয়ত ভুল হবে না৷ আর তাই তো, জার্মান তরুণরা এ ধরনের ‘সিনারি’ অথবা প্রাকৃতিক ছবিকেও পর্নোগ্রাফির মধ্যে ফেলতে চায়৷ আর এই সব নিদর্শন যেহেতু আমার-আপনার নয়, পৃথিবীর বা প্রকৃতিসৃষ্ট – তাই তাদের নাম রাখা হয়েছে ‘আর্থ পর্ন’৷
স্মম্বি
‘স্মার্টফোন’ এবং ‘জম্বি’ – এই দুটি শব্দের মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে ‘স্মম্বি’ শব্দটি৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানির তরুণরাও আজকাল স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল৷ এই যন্ত্রটি না হলে যেন চলে না৷ তাছাড়া আজকাল অনেককেই ফোনে কথা বলতে বলতে অথবা ফেসবুক করতে করতে রাস্তা পার হতে দেখা যায়৷ কোনোদিকে হুঁশ নেই, খেয়াল নেই, অনেকটা জম্বির মতো৷ তাই এই নামকরণ৷
টিন্ডারেলা
‘টিন্ডারেলা’ শব্দটি শুনতে অনেকটা ‘সিন্ডারেলা’-র মতো, সেই রূপকথার মেয়ে, যে তার স্বপ্নসঙ্গী পাওয়ার জন্য কত কী করেছিল! পরীর আশীর্বাদে পেয়েছিল আশ্চর্য জুতো আর পোশাক৷ জার্মানির অন্যতম ‘অনলাইন ডেটিং প্ল্যাটফর্ম’ খুলে যে সব মেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের ‘প্রিন্স চার্মিং’-এর স্বপ্ন দেখে – তাদের জন্যই জার্মান তরুণরা খুঁজে বের করেছে এই ব্যঙ্গাত্মক নামটি: টিন্ডারেলা৷
শোয়াগেটারিয়ার
নিরামিষ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা শুধুমাত্র লোকদেখানোর জন্য নিরামিষ খান, অন্যদের সামনে নিজেকে মহৎ ও পরিবেশবান্ধব বলে জাহির করতে৷ জার্মানির তরুণ প্রজন্ম এমন লোকদেখানো স্বভাব যাদের, তাদের চিহ্নিত করেছে ‘শোয়াগেটারিয়ার’ হিসেবে, যা কিনা জার্মানে ‘শোয়াগার’ বা বড়াই এবং ‘ভেগেটারিয়ার’ বা নিরামিষাশীর সংমিশ্রণ৷
ডিস্কোপাম্পার
‘বডি-বিল্ডিং’ করার মধ্যে খারাপ কিছু নেই৷ কিন্তু তাই বলে শরীর সর্বস্ব মানুষ? হ্যাঁ, এ রকম মানুষও কিন্তু আছে, যারা শরীরচর্চা করে শুধুমাত্র পার্টি বা ডিস্কোতে মেয়েদের নজর কাড়ার জন্য৷ মুগুর ভেঁজে বুকের ছাতি আর ‘বাইসেপস’ বাড়ায় বলে এদের নাম রাখা হয়েছে ডিস্কোপাম্পার৷
বাম্বুস
জার্মান ভাষায় বাঁশকে বলে ‘বাম্বুস’৷ বেড়া, দেওয়াল, সিঁড়ি, মাচা – কত কিছুই তো তৈরি হয় বাঁশ দিয়ে৷ এমনকি গালাগালিতেও এ শব্দটি ব্যবহার করি আমরা৷ এবার জার্মানিতেও কথাটিটি চালু হয়েছে৷ ভালো-মন্দ সব অর্থেই আজকাল বলা হয়: ‘বাম্বুস’৷ মানে ‘দারুণ’ কিংবা ‘হেভি’!