জার্মান ফুটবল দলে চোট সমস্যা এবং সমাধান
ব্রাজিল বিশ্বকাপ জার্মানির জন্য আসছে ২৪ বছরের ট্রফি খরা কাটানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে৷ অথচ দলের তারকা খেলোয়াড়রা ভুগছেন চোট সমস্যায়৷ অবশ্য তরুণরা উঠে আসছেন আশার আলো হয়ে৷
স্যামি খেদিরা
২০১০ বিশ্বকাপে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে জার্মান দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন স্যামি খেদিরা৷ কিন্তু ২০১৪-র ব্রাজিল বিশ্বকাপে কি খেলতে পারবেন? শঙ্কা জাগিয়ে রেখেছে ইনজুরি৷ রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলা খেদিরা গত মাসেই ইতালি-জার্মানি প্রীতি ম্যাচে চোট পেয়েছেন হাঁটুতে৷ চোট সারাতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে৷
বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার
জার্মান দলের আরেক অপরিহার্য মিডফিল্ডার বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার৷ তাঁর প্রায় পুরো মৌসুমটাই গেছে চোটের সঙ্গে লড়াই করে৷ ক'দিন আগে চর্তুথবারের মতো অস্ত্রোপচার করাতে হলো অ্যাংকেলে৷ নতুন বছর শুরুর আগে তাই মাঠে ফেরার সম্ভাবনা নেই৷ জার্মান ফুটবলে তরুণ মুখের যে মিছিল শুরু হয়েছে, তা দেখে শোয়াইনস্টাইগারের এ মুহূর্তে কিছুটা দুশ্চিন্তাতেই থাকার কথা৷
ইলকায় গুনডোয়ান
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটির আগে জার্মানির জার্সি গায়ে গুনডোয়ানকে শেষ কবে দেখা গিয়েছিল বলতে বললে অনেক ভক্তই হয়তো মুশকিলে পড়ে যাবেন৷ আগস্টের সেই ম্যাচেও সদ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই ফুটবলার প্রথমার্ধটাই ঠিকমতো খেলতে পারেননি৷ ম্যাচের আধ ঘণ্টা হবার আগেই পিঠে ব্যথা নিয়ে আবার মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে৷ ঘন ঘন চোটগ্রস্ত হবার অভ্যেসটা তাঁকেও পেয়ে বসেছে ৷
হোলগার বাডশ্টুবার
২০১০ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জার্মানির রক্ষণভাগে তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক৷ ২৪ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডারও প্রায় এক বছর ধরে ভুগছেন চোট সমস্যায়৷ তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরার আশায় ক'দিন আগে তাঁকেও চতুর্থবারের মতো যেতে হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে৷ এ অস্ত্রোপচারের পর অবশ্য অনেকে মনে করছেন জার্মানি বিশ্বকাপের সময়টায় তাঁকে চাঙ্গা অবস্থাতেই পাবে৷
লুকাস পোডলস্কি
জার্মান দল তো বটেই, এমনকি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালও আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে৷ এবার আর্সেনালে যোগ দেয়া জার্মান জাতীয় দলের আরেক ফুটবলার মেসুট ওজিলের সঙ্গে ইংলিশ লিগ মাতানোর কথা লুকাস পোডোলস্কির৷ কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যাটা ২৮ বছর বয়সি এ ফুটবলারকে এতটাই ভোগাচ্ছে যে জার্মান দলে ফেরাটা তাঁর জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে৷
মিরোস্লাভ ক্লোজে আর মারিও গোমেজ
জার্মান দলের মূল ফরোয়ার্ড হিসেবে এ দুজনের একজনকে অন্তত পেলে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতে পারতেন কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ কিন্তু আজ ক্লোজে ইনজুরিতে তো, কাল গোমেজ৷ দুজনকে একসঙ্গে দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসার সুযোগই পাচ্ছেন না ল্যোভ৷ এখনও ক্লোজে লড়ছেন তাঁর বয়স (৩৫) আর ফিরে ফিরে আসা চোটের সঙ্গে৷ এদিকে অফ সিজনে ইতালির ফিওরেন্তিনায় যোগ দেয়ার পর থেকে গোমেজও ভুগছেন ফিটনেস সমস্যায়৷
মাক্স ক্রুজ
মিরোস্লাভ ক্লোজে আর মারিও গোমেজের অনুপস্থিতির সুযোগে জাতীয় দলে সুযোগ করে নিয়েছেন মাক্স ক্রুজ৷ গত মে মাসে ইকুয়েডরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার আগে ফ্রাইবুর্গে খেলতেন৷ তারপর থেকে নতুন ক্লাব মুনশেনগ্লাডবাখের হয়েও রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে৷ ১২ ম্যাচে ৭ গোল তেমন ইঙ্গিতই দেয়৷ অভিজ্ঞ ক্লোজে এবং গোমেজের বিকল্প হিসেবে ক্রুজকে গুরুত্ব দিতেই পারেন জার্মানির কোচ ল্যোভ৷
স্ভেন আর লার্স বেনডার
খেদিরার বিকল্প খুঁজে পাবেন কিনা এ নিয়ে কোচ ল্যোভকে বেশি ভাবতে দেননি বেনডার পরিবারের দুই ছেলে সভেন আর লার্স৷ দু ভাইয়ের মধ্যে লার্সই জার্মান দলে সুযোগ পেয়েছেন বেশি৷ ২০১২-র ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সহ-অধিনায়কের মর্যাদাও দেয়া হয়েছিল তাঁকে৷ বুন্ডেসলিগায় লার্স খেলেন লেভারকুজেনের হয়ে আর স্ভেন বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে৷
ফিলিপ লাম
মাঝমাঠের দুই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় খেদিরা আর শোয়াইনস্টাইগারের অভাবটা অধিনায়ক ফিলিপ লামকে দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করতে পারেন ল্যোভ৷ বায়ার্ন মিউনিখে তো ডিফেন্ডার থেকে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হয়েও ভালোই খেলেছেন লাম৷ ইতালির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জার্মানির হয়েও একই পজিশনে খেলেছেন৷ অবশ্য মাঝমাঠ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলে বিশ্বকাপে লামকে তাঁর ‘আসল জায়গা’ রক্ষণভাগেই দেখতে চাইবেন কোচ৷
রোমান ভাইডেনফেলার
৩৩ বছর বয়সে গোলরক্ষক হিসেবে জার্মান দলে সুযোগ পেয়েছেন ভাইডেনফেলার৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের গোলপোস্টের অতন্ত্র প্রহরী জাতীয় দলে একই দায়িত্ব পেয়েছেন স্রেফ নিজের যোগ্যতা দিয়ে৷ ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত খেলার পুরস্কার হিসেবেই ডাক পেয়েছেন জার্মান দলে৷ দলের প্রথম গোলরক্ষক অবশ্যই মানুয়েল নয়্যার৷ কিন্তু নয়্যার খেলতে না পারলে কী হবে – এই প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন ল্যোভ৷ ভাইডেনফেলার তো আছেনই!