জার্মানির হেমন্ত আমাদের শরৎ নয়!
গ্রীষ্মের শেষে যখন গাছের পাতায় রং ধরে, প্রকৃতি হয়ে দাঁড়ায় চিত্রপট, হেমন্ত তখন রং-তুলি হাতে এক পাগল শিল্পী!
হেমন্তের গোধুলি
গাঢ় লাল, আগুনে কমলা রং, গায়ে হলুদের হলদে: এই সব আভা মিলিয়ে গ্রীষ্মের বিদায়, হেমন্তের আগমন৷ একেই বলে ‘ইন্ডিয়ান সামার’, যদিও ইঙ্গিতটা উত্তর অ্যামেরিকার ‘ইন্ডিয়ান’ উপজাতিদের প্রতি৷ জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গেও ঠিক সেইরকম রঙের খেলা দেখতে পাওয়া যায় – অবশ্য হেমন্ত এলে৷
রূপকথায় বলে...
হেমন্তে যুক্তরাষ্ট্র অথবা ক্যানাডার মেপল গাছগুলোর পাতা লাল হয়ে যায়৷ উত্তর অ্যামেরিকার আদিবাসী ‘রেড ইন্ডিয়ানদের’ কিংবদন্তি অনুযায়ী এক বিশাল ভাল্লুক শিকারিদের তাড়া খেয়ে আকাশে পালিয়েছিল৷ পরে শিকারিরা যখন তাকে শিকার করে, তখন সেই ভাল্লুকের রক্ত ফোঁটা ফোঁটা হয়ে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে গাছের পাতাগুলোকে লাল করে দেয়৷
সোনার ফসল
জার্মানিতে হেমন্ত হলো ক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তোলার দিন: নানা ধরনের কুল, ফুলকপি-বাঁধাকপি, শাঁকালু, সব কিছু পেকে ওঠে৷ এর্ন্টেডাঙ্কফেস্ট হলো জার্মানদের থ্যাংক্সগিভিং বা নবান্ন৷ হেমন্তের এই উৎসবটিতে সম্বৎসরের ফসলের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ফল-ফুল-শাক-সবজি দিয়ে সাজানো মিছিল ও মেলায় ধন্যবাদ জানানো হয়৷
বেগুনি আঁচল
জার্মানিতে বহু ন্যাশনাল পার্ক আছে, যেমন ব্রান্ডেনবুর্গের এই ‘হাইডে’ বা তৃণভূমি, হেমন্তে যেখানে ‘গর্স’ আর অন্যান্য বুনোফুল ফুটে থাকে৷
গলায় ঘণ্টা বাঁধা
গরুদের এখন গোষ্ঠ থেকে গোয়ালে ফেরার সময়, কেননা সামনে শীত৷ দক্ষিণ জার্মানির বাভেরিয়ায় সেটাই একটা উৎসব: পাহাড়ের উপত্যকা থেকে গরুর পালকে খেদিয়ে সমতলে নিয়ে আসা হয়৷ সেজন্য গরুদের মাথায় ফুলের সাজ আর গলায় বিশাল ঘণ্টা বাঁধা হয়৷
দক্ষিণায়ন
শুধু সূর্যেরই নয়, মরশুমি পাখিদেরও বটে৷ জার্মানিতে গ্রীষ্ম কাটানোর পর অক্টোবরে মরশুমি পাখিরা শীতের আঁচ পেয়ে দক্ষিণমুখি হয়৷ এই স্টার্লিং গোত্রীয় শালিক পাখিরা বালটিক সাগরের তীর ধরে উড়ছে৷
শহরে হেমন্ত
প্রথমে রং ধরা, তারপর পাতা ঝরা৷ এ সব দেখবার জন্য শহর ছেড়ে গ্রামে যাবার কোনো দরকার নেই৷ রাজধানী বার্লিনেও হেমন্ত আসে, এই ধরুন সংসদ আর চ্যান্সেলরের দপ্তরের মধ্যে...৷