1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির রুর অঞ্চলে ‘‘বিশ্ব থিয়েটার’’ উৎসব

২০ জুলাই ২০১০

জার্মানির থিয়েটার উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান উৎসব হচ্ছে ‘‘থিয়েটার ডেয়ার ভেল্ট’’ বা বিশ্ব থিয়েটার৷ এর যাত্রা শুরু ১৯৮১ সালে৷ তারপর থেকে প্রতি ২/৩ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব৷

https://p.dw.com/p/OPfs
সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম থিয়েটারছবি: DW

এ বছর ম্যুলহাইম ও এসেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব৷ এসেছিলেন বিশ্বের নানা দেশের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী৷ ৩০ শে জুন থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত জার্মানির রুর অঞ্চলকে সরগরম করে রেখেছিল বিশ্ব থিয়েটার উৎসব৷ এবার রুর অঞ্চল ইউরোপের অন্যতম সাংস্কৃতিক রাজধানী৷ সেই আয়োজনের অংশ হিসেবেই বিশ্ব থিয়েটার৷ যোগ দিয়েছিলেন ২৫টি দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোনো ও নতুন শিল্পীরা৷ উপস্থাপন করেছেন তাঁদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ভান্ডার৷ পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা সুযোগ এনে দেয় এই থিয়েটার উৎসব৷ দর্শকরা পেতে পারেন ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির স্বাদ৷

উৎসবের পরিচালক বেলজিয়ামের ফ্রি লেইসেন এক থিয়েটার পাগল মানুষ৷ অবশ্য চিরাচরিত থিয়েটারের বাইরে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও প্রকল্প গড়ে তোলায় ব্যস্ত তিনি৷ স্বদেশ বেলজিয়াম থেকে শুরু করে আরবের বিভিন্ন দেশে তাঁর পদচারণা৷ প্রিটোরিয়া, বুয়েনস আইরেস বা টোকিওর তরুণ শিল্পীদের কাজকর্ম, তাদের থিয়েটার সম্পর্কে ব্যাপক উৎসাহ তাঁর৷ জার্মান থিয়েটার ও মিউজিয়ামগুলি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বহুদিন ধরে কাজ করলেও ফ্রি-র কাছে তা অসম্পূর্ণ মনে হয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘পশ্চিমি সংস্কৃতির বাইরে ভিন্ন দেশের সমকালীন সংস্কৃতির সঙ্গে খুব কমই পরিচিত হয় জার্মানির মানুষ৷'' তাই ফ্রি লেইসেন চুপ করে বসে থাকেননি৷ ২৫টি দেশের ৩২টি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি রুর অঞ্চলের বিশ্ব থিয়েটার উৎসবে৷ সব মিলিয়ে এসেছিলেন ৩৮৫ জন শিল্পী৷ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বলে তাঁর পক্ষে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা সহজ হয়েছে৷ জার্মান দর্শকদের দৃষ্টির সীমা প্রসার করতে চান তিনি৷ তাঁরা যেন মিশর, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, রাশিয়া এমনকি সামোয়ার সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে পারে, এটাই লেইসেনের লক্ষ্য৷ তিনি বলেন, ‘‘এই উৎসবে যে কথাটি বার বার উঠে এসেছে, তা হল ‘ভিন্ন চোখে দেখা'৷ কয়েক শ বছর ধরে আমরা শেক্সপিয়ার বা বাইবেল নিয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়েছি এবং সেখানকার মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করেছি, ‘এগুলো পড়ুন তাহলেই আপনি সভ্য হয়ে যাবেন'৷ কিন্তু সেসব দেশের মানুষরা কী রকম, তাদের সাহিত্য, সংগীত ও ইতিহাসই বা কেমন, সে সম্পর্কে জানার জন্য কোনো সময় ব্যয় করিনি আমরা৷''

শুধু থিয়েটার নয়, নাচ, অপেরা, ছায়াছবি, চিত্রকলা সংস্কৃতি জগতের প্রায় সব কিছুরইআয়োজন ছিল এই উৎসবে৷ আর এসব অনুষ্ঠিত হয়েছে থিয়েটার ও সিনেমা হলে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা পরিত্যক্ত কোনো কয়লা খনির অফিস ঘরে৷

উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল মনটেজুমা অপেরার মঞ্চায়ন৷ ১৭৫৫ সালে জার্মানির কার্ল হাইনরিশ গ্রাউন রচিত এই অপেরায় মেক্সিকোতে স্প্যানিশ দখলদারির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, দেখানো হয়েছে, কী ভাবে আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে৷ মেক্সিকোর নির্দেশক ক্লাউডিও কুরির পরিচালনায় ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার তরুণ শিল্পীদের অভিনয় ও সংগীতে অনবদ্য হয়ে উঠেছিল অপেরাটি৷ এ প্রসঙ্গে এক দর্শক জানান, ‘‘চীনের কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকার শিল্পীরা ইউরোপীয় সংগীত এত সুন্দর ভাবে আয়ত্ত করতে পারায় বলা যায়, সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে৷ এখন আর বলা যায়না যে, এই সংস্কৃতিটা আমাদের৷ এই ধরনের অপেরা সংগীতের বিকাশ হয়েছে ইউরোপে৷ কিন্তু এখন তা সবারই৷ ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষরা ইউরোপীয় সংস্কৃতিটা এত ভাল ভাবে তুলে ধরতে পারায়, বলা যায় এটি এখন বিশ্ব সংগীতে পরিণত হয়েছে৷''

থাইল্যান্ডের ছায়ানাট্য কিংবা লিথুয়েনিয়ান ভাষান্তরে আন্তন চেখভের ড্রামা -চেরি বাগান দর্শকদের মুগ্ধ করেছে৷ এক দর্শক বলেন, ‘‘মিশরের অ্যানিমেশন ফিল্মটি আমার দেখতেই হবে৷ এটা খুব উত্তেজনাকর৷ আবার আমার একটু শংকাও হয়, যদি এখানকার প্রতিষ্ঠিত থিয়েটার দেখার জন্য আর টাকা না থাকে? স্থানীয় থিয়েটারও দেখতে যাই আমি আগ্রহ ভরে৷'' ফ্রি লেইসেনের এতে আপত্তি থাকার কথা নয়৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক