1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির ‘নেৎস’ সংস্থার ফোরামে বাংলাদেশ

২০ মে ২০১১

বাংলাদেশে সক্রিয় জার্মান সাহায্য সংস্থা ‘নেৎস’এর তিন দিনের এক সেমিনার হয়ে গেল কাসেল শহরে৷ আলোচিত বিষয় – বাংলাদেশ : স্বাধীনতার ৪০ বছর৷ এই পটভূমিকায় দেবারতি গুহ’র ব্যক্তিগত অনুষঙ্গে লেখা প্রতিবেদন৷

https://p.dw.com/p/11KDW
Bangladesh, Bangladesch, NETZ, Debarati Guha
বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জার্মান সাহায্য সংস্থা ‘নেৎস’ছবি: DW

আমার জীবনে এই প্রথম কি-নোট স্পিচ' দিতে গিয়েছিলাম ‘নেৎস'এর ফোরামে৷ তিন দিনের এক সেমিনার৷ সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আমার জীবনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দেশভাগ ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে আমার ছিন্নমূল পরিবারের ইতিহাস এবং তার প্রভাব সম্পর্কে কিছু বলার জন্য৷ বলা হয়েছিল, আমার মননে দেশের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের চিত্রটা ঠিক কী রকম – তার একটা রূপরেখা টানতে৷

Seminar, Debarati Guha
সেমিনারকক্ষে বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করছে অংশগ্রহণকারীরাছবি: DW

১৩ই মে, শুক্রবার, কাসেল শহরের ইউথ হোস্টেলের সেমিনার হলে অকপটে বলেছিলাম আমার মায়ের এক-ধাক্কায় গুঁড়িয়ে পড়া শৈশবের কথা, বলেছিলাম স্বজন-বন্ধুহীন ১৯৬৯ সালের সেই কলকাতা শহরে এসে আমার বাবার রোদ-জলে পোড়া জীবনযুদ্ধের কথা, বলেছিলাম ১৯৭১'এ দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে কচুরিপানার মধ্যে দিয়ে আমার দিদা (নানি)'র নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া আর পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে আমার দাদু (নানা)'র আশ্চর্যজনকভাবে ফিরে আসার কথাও৷ বলেছিলাম আমার দুই মামার কথাও – একজন কীভাবে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল আর অন্যজনকে কীভাবে ধরে-বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল জল্লাদরা৷ বলেছিলাম বাবার মামা জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে হত্যার কথাও৷ বলেছিলাম, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর কীভাবে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমার মাকে চলে আসতে হয়েছিল কলকাতায়, তার কথা৷ বলেছিলাম কেন আমার জন্ম বাংলাদেশে নয় – সেই কথাও৷

Habibur Rahman Chowdhury, Leiter des NETZ-Teams, Dhaka, Debarati Guha
নিজের জীবনের কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশে ‘নেৎস'এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান চৌধুরীওছবি: DW

নিজের জীবনের কথা তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশে ‘নেৎস'এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান চৌধুরী৷ তাঁর বাবাকে নৃশংস হত্যা ও মা-বোন'কে পাকিস্তান বাহিনীর তুলে নেওয়ার কথা শুনে আমাদের অনেকের চোখেই জল এসে গিয়েছিল৷ তারপরও, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ও ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলাপচারিতায় কোনো রকম ঘাটতি ছিল না৷

Ingo Ritz, Geschäftsführer, Debarati Guha
জার্মান সাহায্য সংস্থা ‘নেৎস’এর অন্যতম কর্মকর্তা ইঙো রিৎসছবি: DW

বাংলাদেশ থেকে আনা চাল, ডাল, কারুকার্য করা সাইকেল-রিক্সার অংশ, ধূপকাঠি, কাস্তে, সুতির শাড়ি, কলসি, ঘড়া, হাত পাখা দিয়ে সাজানো সেই সেমিনার ঘরে তাই সেদিন সত্যিই যেন হাট বসেছিল৷ হাট বসেছিল যেন প্রাচীন এবং নতুন প্রজন্মের৷ আমরা, যারা বাঙালি৷ যারা বাংলাদেশের মানুষ, তারা তো বাংলাদেশের জন্য করবোই৷ দেশের জন্য তাদের মন তো কাঁদবেই৷ কিন্তু, এই যে সব জার্মানরা – যাঁরা নিজের স্বার্থ, সুবিধা-অসুবিধাকে ভুলে গিয়ে দিনের পর দিন বাংলাদেশের মাটিতে, বাংলাদেশের জন্য, সেখানকার মানুষের জন্য কাজ করে করেছে, করছে – তাদের সাধুবাদ না জানিয়ে কি পারা যায় ?

Debarati Guha
চাল, ডাল, সাইকেল-রিক্সার অংশ, ধূপকাঠি, কাস্তে, শাড়ি, কলসি, ঘড়া, হাত পাখা দিয়ে সাজানো সেমিনার ঘরছবি: DW

চাকরি, অর্থ বা কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়৷ শুধুমাত্র বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশকে ভালোবেসে যাঁরা আমাদের ভাই-বোনের মুখে তুলে দিয়েছে অন্ন, যাঁরা নিজেকে উৎসর্গ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে তুলে দিয়েছে স্লেট-পেনসিল অথবা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য যাঁরা তাদের শিখিয়েছে পাটের কাজ বা দিয়েছে লেখাপড়ার প্রথম পাঠ – তাঁদেরকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে যে আমার উপায় ছিল না৷

তাই ধন্যবাদ তো তাঁদেরই প্রাপ্য৷ আমার নয়, কখনও নয়৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক