জার্মানির গর্ব ‘অটোবান’
জার্মানি হলো দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে মোটরওয়েতে কোনো স্পিড লিমিট নেই - যদি না আলাদা কোনো নির্দেশনা থাকে৷
নাম ‘অটোবান’
অটোবানে শুধু গাড়ি চলতে পারে৷ অটোবানে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের নীচে গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই (যদি না নির্দেশ দেওয়া থাকে)৷ অটোবানে সাইকেল, মোপেড বা ট্রাক্টর চালানো নিষেধ৷ এবং স্বভাবতই অটোবানে কোনো ট্রাফিক লাইট থাকে না৷
প্রথম অটোবান
কোলন আর বন শহরের মধ্যে ‘এ ৫৫৫’ অটোবানটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে৷ কোলনের মেয়র কনরাড আডেনাউয়ার তা উদ্বোধন করেন ১৯৩২ সালে৷ ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় এসে দাবি করেন, অটোবান তৈরির পরিকল্পনা তাঁর মাথাতেই প্রথম এসেছিল৷
কোনো গতিসীমা নেই
জার্মানি বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানকার মোটরওয়ের একটা বড় অংশে কোনো গতিসীমা নেই৷ তবে সাধারণভাবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়৷ অটোবান মেরামতি, অটোবানে ঢোকা কিংবা বেরনোর রাস্তা, দুর্ঘটনা ঘটার বর্ধিত আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে অবশ্য কিছুক্ষেত্রে গতিসীমা নির্ধারিতও থাকে৷
১৩,০০০ কিলোমিটার অটোবান
জার্মানির সব অটোবান জোড়া দিলে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো থেকে জার্মানির হামবুর্গ অবধি রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে৷ জার্মানিতে ‘এ ৭’ অর্থাৎ সাত নম্বর অটোবানই সবচেয়ে দীর্ঘ, মোট ৯৬৩ কিলোমিটার৷
নামের আগে ‘এ’
‘এ’ হলো অটোবান কথাটির আদ্যক্ষর৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয় একটি সংখ্যা, এই দু’য়ে মিলে অটোবানের নাম, যেমন ‘এ ৮’৷ আন্তঃ-জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ অটোবানগুলির নম্বর ১ থেকে ৯-এর মধ্যে হয়; আঞ্চলিক অটোবানগুলি দুই সংখ্যার, যেমন বার্লিন আর হামবুর্গের মধ্যে ‘এ ২৪’৷ আরো ছোট অটোবানগুলি তিন সংখ্যারও হতে পারে৷ উত্তর-দক্ষিণ অটোবানগুলি সাধারণত বেজোড় আর পশ্চিম-পুবেরগুলি জোড় সংখ্যার হয়ে থাকে৷
মোটরওয়ে, না রানওয়ে?
পরিভাষায় বলে হাইওয়ে স্ট্রিপ, অর্থাৎ দূরপাল্লার রাস্তার এমন একটা অংশ, যেখানে ছোটখাট বিমান অবতরণ করতে পারে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোবানকে এভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল; ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আমলে উভয় জার্মানিতেই এ ধরনের অটোবান ল্যান্ডিং স্ট্রিপ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷
যানচলাচল বাড়া মানেই যানজট
জার্মান অটোমোবাইল ক্লাব এডিএসি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জার্মানির অটোবানগুলিতে ৫,৬৮,০০০ যানজট হয়, যার মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১১ লাখ কিলোমিটার৷ জ্যামে আটকা পড়ে মানুষজনের ৩,৪১,০০০ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়৷
অটোবানে গাড়ি দুর্ঘটনা মানে...
...একাধিক গাড়ির পর পর এসে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা৷ এ ধরনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে, যখন ঘন কুয়াশার মধ্যে ১৭০টি গাড়ির ‘পাইল-আপ’ হয়: প্রাণ হারান দশজন, আহত হন ১২৩ জন৷ ২০০৯ সালেও ২৫৯টি গাড়ির এভাবে একসঙ্গে ধাক্কা লাগে, কিন্তু আশ্চর্য, সেবার কেউ প্রাণে মারা যাননি৷
টোল ট্যাক্স
২০০৫ সাল থেকে জার্মানিতে ভারী লরি ও ট্রাকের জন্য ‘টোল’ আদায় করা শুরু হয়েছে৷ ইউরোপের নানান দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ট্রাক জার্মানির অটোবান হয়ে ট্রানজিট করে, যার ফলে জার্মান অটোবানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ে৷ সেটা উশুল করার জন্য ‘টোল’ বসানোর সিদ্ধান্ত নেন জার্মান সরকার৷
অটোবানের সুবিধা
মুখ্য চ্যানেলগুলোর পাশে বিপদে-আপদে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা থাকে৷ কয়েক কিলোমিটার পর পর থাকে এমার্জেন্সি টেলিফোন৷ প্রত্যেক ২০ থেকে ৪৫ মিনিট ড্রাইভের পর পাওয়া যায় (অটোবানের লাগোয়া) একটি পেট্রোল পাম্প, যেখানে টয়লেট, মোটেল ও রেস্টুরেন্টেরও ব্যবস্থা থাকে৷