জার্মানিতে বিদেশি
১৫ জুন ২০১৩ছবিটির নাম ‘‘অন দ্য রান'', অর্থাৎ ‘পলাতক'৷ ছবির সূচনায় পর্দায় কোনো ছবি নেই, শুধু শোনা যাচ্ছে নানা উকিল, উদ্বাস্তু দপ্তরের কর্মকর্তা ও যুব দপ্তরের কর্মকর্তাদের কণ্ঠ৷ যে সব কিশোর-কিশোরীরা জার্মানিতে এসে পৌঁছায় এখানে আশ্রয়ের আশায়, তাদের এখানে কি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়, সেটাই বোঝানো হচ্ছে এই সব নেপথ্য সংলাপে৷
এই কিশোর-কিশোরীরা কারা? সরকারি পরিভাষায় এদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘‘অভিভাবকের সঙ্গবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক উদ্বাস্তু'' বা জার্মানে, ইউএমএফ৷ ইতিমধ্যে জার্মানিতে আট থেকে নয় হাজার ইউএমএফ-এর বাস৷ তাদের কাহিনিই বলার চেষ্টা করা হয়েছে মেহেরদাদ রাজি ও আর্জং ওমরানির ছবিটিতে৷
ছবিটিতে এক সূচনায় ছাড়া শুধু উদ্বাস্তু কিশোর-কিশোরীদের কণ্ঠই আছে৷ তারাই তাদের নিজের কাহিনি বলেছে৷ এরা সব একা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে৷ কয়েকজনের বাবা-মা আগেই নিহত হয়েছিলেন৷ অন্যদের ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনরা তাদের নিরাপত্তা কি মঙ্গলের জন্য তাদের দূরদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন৷
সে যাত্রাও এক বিভীষণ যাত্রা৷ লুকিয়ে সীমান্তের নদী পার হওয়া; লরি অথবা ট্রাকের মধ্যে লুকিয়ে জার্মানিতে ঢোকা৷ ইরান কি আফগানিস্তান থেকে জার্মানি পৌঁছতে পৌঁছতে বেশ কিছু শিশু-কিশোর পথেই আটকে থাকে, এমনকি প্রাণ হারায়৷ ‘পলাতক' ছবিতে এই সব দৃশ্যগুলো তোলা হয়েছে জার্মানির রাস্তাঘাটে, সুখি মানুষের ভিড়ে, যা-তে দর্শকরা বুঝতে পারেন, এই দুই বাস্তবের মধ্যে ফারাক ঠিক কতখানি৷
এখানেও এক রূঢ় বাস্তব
জার্মানিতেও এই সব কিশোর-কিশোরীদের জন্য অন্য এক ধরনের রূঢ় বাস্তব অপেক্ষা করছে: তাদের বয়স নির্ধারণ করার জন্য হাতের হাড়ের এক্সরে করা হয়, যা বস্তুত কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নয় বলেই অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করেন৷ এমনকি যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করে দেখার ঘটনাও বিরল নয়৷ অপরদিকে জার্মান কর্মকর্তাদের বক্তব্য: ১৮ বছরের ওপরে হলে বহিষ্কারের সম্ভাবনা আছে বলে অনেক উদ্বাস্তুই নিজেদের অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে চালাবার চেষ্টা করে৷ একবার নাকি এক ২৬ বছরের তরুণও সেই প্রচেষ্টা করেছিল৷
জাতিসংঘের চুক্তি অনুযায়ী, জার্মানিতে এই উদ্বাস্তু শিশু-কিশোরদের অধিকারগুলো বিশেষভাবে সুরক্ষিত: তাদের স্কুলে পাঠাতে হবে; সমবয়সীদের সঙ্গে যুব আবাসে রাখতে হবে – রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসে রাখলে চলবে না৷ সব মিলিয়ে ‘ইউএমএফ'-দের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতেই যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা-তে কর্মকর্তাদের দ্বিধার কারণটা বোধগম্য৷
সব অপমান-অবমাননার চেয়ে এই উদ্বাস্তু কিশোর-কিশোরীদের যে অভিজ্ঞতাটা তাদের সবচেয়ে কষ্ট দেয়, সেটা হলো এই অনুভূতি যে, এখানে কেউ তাদের চায় না, তারা এখানে অনাকাঙ্খিত৷ তাদের কথা কেউ জানে না, বোঝে না, শুনতে চায় না৷
‘পলাতক' ছবিটি সেই অভাবই কিছুটা পূরণ করার চেষ্টা করেছে৷