জার্মানিতে ফ্ল্যাট ভাড়া
জার্মানির ৪৮ শতাংশ মানুষ ভাড়া করা বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বাস করেন, যা কিনা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি৷ জার্মানিতে ফ্ল্যাট ভাড়া করতে গেলে কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার জানা থাকা দরকার৷
‘পায়রার খোপ’
বার্লিনের সারির পর সারি ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে এককালে অসংখ্য ভাড়াটে গা ঘেঁষাঘেষি করে থাকতেন৷ এক অথবা দুই কামরার ফ্ল্যাটে বড় একটা পরিবারের বাসও কিছু আশ্চর্য ছিল না৷ এই পুরনো বাড়িগুলোকে বলা হয় ‘আল্টবাউ’৷ এগুলোর এখন আবার খুব চল হয়েছে৷ বার্লিনের প্রেনৎসলাউয়ারব্যার্গ এলাকার ভাঙাচোরা পুরনো ফ্ল্যাটবাড়িগুলো এখন মহার্ঘ৷
‘প্লাটেনবাউ’
‘প্লাটে’ বলতে বোঝায় কংক্রিটের প্রিফ্যাব দেয়াল, যা দিয়ে পূর্ব বার্লিন জুড়ে পূর্ব জার্মানির কম্যুনিস্ট সরকার একের পর এক বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ি খাড়া করেছিলেন সস্তার আবাসন হিসেবে৷ কিন্তু এই নয়া ফ্ল্যাটগুলো পেলে পূর্ব জার্মানির লোক বর্তে যেতেন, কেননা এগুলো ‘আল্টবাউ’-এর চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক সুযোগসুবিধা যুক্ত ছিল: যেমন ফুটো ছাড়া জলের পাইপ, ইলেকট্রিকের নতুন সার্কিট-সুইচবোর্ড কিংবা গরম পানির গেইজার৷
ঝোলা বারান্দা
ফ্ল্যাটবাড়িতে যে সব জার্মানদের বাস, তাদের ‘বাগান’ হলো ঝোলা বারান্দা৷ বারান্দায় বসা যায়, বার্বেকিউ করা যায় – অন্যরা টবে ফুলগাছ থেকে শুরু করে টমেটোগাছ অবধি যা প্রাণ চায় লাগিয়ে বাগান করার শখ মিটিয়ে নেন৷
উঠোন, নাকি আঙিনা?
বার্লিনের ফ্ল্যাটবাড়িগুলো আসলে একটা নয়, দু’টো বাড়ি৷ রাস্তার উপর যে বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে, তার মাঝখানের গেট দিয়ে পিছনের আঙিনায় ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যাবে ‘ভিতরের বাড়ি’ – এটাও ফ্ল্যাটবাড়ি৷ এই মাঝের আঙিনাটা কারো নয়, আবার সবার বটে৷ ভাড়াটেরা এখানে তাদের সাইকেল রাখেন; ময়লা ফেলার ‘বিন’-গুলোও এখানেই রাখা হয়৷
নম্বর নয়, নেমপ্লেট
নেমপ্লেট বললে বেশি বলা হয়ে যাবে৷ আসলে প্রত্যেক ফ্ল্যাটের কলিং বেল-এর পাশে সেই ফ্ল্যাটের ভাড়াটের নাম লেখা থাকে৷ লেটারবক্সের ওপরেও ভাড়াটের নাম লেখা থাকে, ফ্ল্যাটের নম্বর নয়৷ তাই পিয়ন নাম না পড়তে পারলে উদোর চিঠি বুধোর কাছে চলে যাবার শঙ্কা থাকে৷
ফ্ল্যাট শেয়ারিং
এর জার্মান নামটা একটু খটমটে: ‘ভোনগেমাইনশাফ্ট’ বা ‘আবাসিক সম্প্রদায়’, সংক্ষেপে ‘ভে.গে.’৷ ‘ভে.গে.’ আর কিছু নয়, ইংরেজিতে যাকে ‘চামারি ’ বলা হতো, অথবা বাংলায় মেস৷ অর্থাৎ যেখানে একাধিক জন মিলে একটি ফ্ল্যাট শেয়ার করেন৷ বার্লিনের মতো শহরে, যেখানে ছাত্রছাত্রী, শিল্পী, নতুন চাকুরে, এ ধরনের হাজারটা একলা মানুষ থাকার জায়গা খুঁজছেন, ওদিকে ফ্ল্যাটের ভাড়া বেড়েই চলেছে – সেখানে ‘ভে.গে.’ অগতির গতি৷
ফ্ল্যাট ছাড়বার আগে চুনকাম করতে হবে
জার্মানিতে ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে সাধারণত তা সারিয়ে-সুরিয়ে, চুনকাম করে, বাসযোগ্য করে দিয়ে যেতে হয়৷ এর সুবিধেটা ভোগ করেন পরের ভাড়াটে, যতক্ষণ না তাঁর নিজের ফ্ল্যাট ছাড়ার সময় আসে৷ ফ্ল্যাটের চুনকাম, মেরামতি কখন হবে, কিভাবে হবে, কে করবে বা করাবে – এর খানিকটা লেখা থাকে ভাড়ার চুক্তিপত্রে; বাকিটার নিষ্পত্তির জন্য আছে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন-কানুন৷
কিচেনের কি হবে?
জার্মানিতে বাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে রান্নাঘরের ক্ষেত্রে তিনটি পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে: (১) ফ্ল্যাটের সঙ্গে সাজানো-গোছানো, ফ্রিজ-কুকিং রেঞ্জ-ডিপ ফ্রিজ সুদ্ধু কিচেন আছে (এটা সাধারণত একেবারে নতুন ফ্ল্যাটে); (২) খালি রান্নাঘর, সাজ-সরঞ্জাম সব নিজেকে কিনে নিতে হবে; (৩) আগের ভাড়াটিয়াকে কিছু নগদ ধরে দিয়ে তার কিচেনের জিনিসপত্র ‘কিনে’ নেওয়া যাবে – যা সাধারণত ঘটে থাকে৷
পুরনো বাড়ি হলে বাথরুমটা দেখে নেবেন
তার কারণটা খুব সহজ: সে আমলের – মানে শ’খানেক বছর আগে তৈরি ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে বাথরুম-টয়লেটের ছড়াছড়ি ছিল না; কয়েকটি পরিবার মিলে হয়ত একই বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার করতেন৷ পরে এই বাড়িগুলোকে যখন ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে নেওয়া হলো, তখন যেখানে সম্ভব বাথরুম-টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ ফলে বাথরুম-টয়লেট একটা শোয়া কি বসবার ঘরের মতো বড় হতে পারে, আবার টেলিফোন বুথের মতো ছোট হতে পারে!
সব ঘরই কিন্তু শোয়ার ঘর নয়!
জার্মানিতে ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপনে কোন ঘর কত বর্গমিটার, সেটা বলে দেওয়া থাকে আর কিচেন-বাথরুম আলাদা করে দেখানো থাকে৷ নয়ত ভাড়াটিয়া কোন ঘরটাকে বেডরুম, আর কোন ঘরটাকে বসবার কিংবা পড়ার ঘর করবেন, সেটা তার নিজের মর্জি৷ আসল কথা হলো ফ্ল্যাটের সাইজ৷ জার্মানির যে তিনটি শহরে বাড়িভাড়া সবচেয়ে বেশি, সেগুলি হলো মিউনিখ (বর্গমিটার প্রতি ১৬ ইউরোর বেশি), ফ্রাংকফুর্ট (১৩ ইউরোর কিছু বেশি) ও স্টুটগার্ট (প্রায় ১৩ ইউরো)৷