1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে অবসাদের প্রবণতা বাড়ছে

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১

বিষণ্ণতা একটি রোগ৷ জার্মান সমাজে এই রোগটি ধীরে ধীরে ডানা মেলে ধরছে৷ কিন্তু কেউই তা প্রকাশ করছে না, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/10KzP
বিষণ্ণতা একটি রোগছবি: fotolia/Kwest

২০০৯ সালে জার্মানির জনপ্রিয় ফুটবল তারকা রবার্ট এনকে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন৷ ক্যারিয়ার, কন্যা সন্তানের মৃত্যু সবকিছু মিলে বিষণ্ণতা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল৷ জার্মান সমাজে মানসিক অবসাদের প্রভাব কতটুকু ?

‘জার্মানরা হাসতে জানে না, সারাক্ষণই গম্ভীর হয়ে থাকে' – এমন একটা ধারণা চালু আছে৷ কথাটা কিন্তু একেবারে ভুল নয়৷ সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল একবার বলেছিলেন, জার্মানরা হাসতে এতই ভয় পায় যে তারা হাসি লুকাতে বাড়ির বেসমেন্টে চলে যায়৷

হাসি ফোটানোর উদ্যোগ

তবে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে চান বাভারিয়া রাজ্যের ৫০ বছর বয়স্ক অধ্যাপক রাইনার উবার৷ তিনি একটি হাসির স্কুল খুলেছেন মিউনিখে৷ সেখানে মানুষদের হাসতে উদ্বুদ্ধ করা হয়৷ চাকরি চলে গেছে? কোন সমস্যা নেই, প্রাণ খুলে হাসো৷ বান্ধবী ছেড়ে চলে গেছে? আনন্দ করো৷ পরীক্ষায় ফেল করেছো? হাসতে হাসতে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো৷ কিন্তু যত সহজে এসব বলা যায়, তত সহজে আসলে কি আর সব কিছু করা সম্ভব? সম্ভব নয়৷ প্রতিটি পেশায় থাকে এক ধরণের চাপ৷ কখনো তা শারীরিক, কখনো তা মানসিক৷ খেলোয়াড়, চিকিৎসক, সাংবাদিক, গায়ক-নায়ক – কোন পেশাই ব্যতিক্রম নয়৷

রবার্ট এনকে'র করুণ পরিণতি

ফিরে তাকাচ্ছি ২০০৯ সালের দিকে৷ নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা রবার্ট এনকে৷ আত্মহত্যা করেন তিনি৷ কারণ হিসেবে জানা যায় তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ অর্থাৎ খেলাধুলার মত প্রাণান্তকর একটি পেশাও বিষণ্ণতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি রবার্ট এনকেকে৷ কেন?

Emotionen Einsamkeit Verzweiflung Trauer Alleine Depression Mann Meer
জার্মান সমাজে বিষণ্ণতা ধীরে ধীরে ডানা মেলছেছবি: Fotolia/david harding

রবার্ট এনকের মৃত্যুর পর জার্মানির পেশাদার খেলোয়াড়দের সংগঠনের প্রধান উল্ফ বারনভস্কি পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ফুটবল খেলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবার স্বার্থে গত কয়েক বছর ধরেই তাদের মানসিক দিকটির দিকে নজর রাখছি৷ মনোবিজ্ঞানী এবং মনস্তত্ত্ববিদ নিয়োগ করা হয়েছে খেলোয়াড়দের স্বার্থে৷ কিন্তু রবার্ট এনকের মৃত্যুর পর এই ধরণের সহায়তার চাহিদা ছাড়াও বিভিন্ন দিকে আরো সূক্ষ্মভাবে নজর দেওয়ার ওপর জোর দাবি উঠেছে৷''

খেলোয়াড়দের উপর চাপ

প্রশ্ন হলো, খেলোয়াড়দের উপর কোন ধরণের চাপ থাকে? মাঠে তাদের ওপর থাকে হাজার হাজার মানুষের দৃষ্টি৷ এবং এরা সবাই হল সমর্থক৷ ভুল করলে সবাই তা মনে রাখবে, ভাল খেললে তাও ভোলা হবে না৷ ভাল না খেললেও ক্ষতি নেই – এই বোধটি কখনোই কোন খেলোয়াড়কে বোঝানো হয় না, জানানো হয় না৷ খারাপ পারফরমেন্স মানে ক্যারিয়ারের শেষ সেখানেই৷ জার্মান ফুটবল খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ থেকে রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন স্টেফান গ্রাভ৷ তিনি আক্ষেপের সঙ্গে জানান, রবার্ট এনকের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়৷ অনেক খেলোয়াড় খুব ভাল খেলে, বাইরে তারা প্রচণ্ড শক্তিশালী কিন্তু ভেতরে ভেতরে হয়তো প্রচণ্ড দূর্বল৷ অথচ তা জানার কোন উপায়ই নেই৷ এদের সাহায্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি৷ তিনি বললেন, ‘‘কোন খেলোয়াড়কেই আমি কোন ধরণের প্রতিশ্রুতি দেব না বা তার উপর জোর খাটাবো না৷ এটা আমার পেশার বাইরে, আমার ক্যারিয়ারের বাইরে৷ আমি দেখেছি অনেক খেলোয়াড় মাঠে, অন্যদের সামনে নিজেদের বেশ ভালভাবে রক্ষা করতে পারে৷ তারা বেশ ভাল খেলে৷ নিজের ভেতরে কী চলছে, তা তারা নিজেদের মধ্যেই রাখে৷ অথচ তা পুরোটাই এক ধরণের মুখোশ৷ আমাদের সমাজও তা-ই দেখতে চায়৷ অনেকেই নিজেদের সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ায়৷ আর এরাই আমার কাছে আসে, আমাকে বলে – যা দেখেছো, দেখছো তা ভুল৷ তখন তারা আমাকে তাদের মানসিক চাপ এবং অবসাদের কথা বলে৷ ''

প্রতিটি খেলোয়াড়কে বলা আছে, যখনই কোন ধরণের সমস্যা হবে সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে৷ সেটা ইমেল, এসএমএস বা টেলিফোনের মাধ্যমে হোক না কেন৷ কে ফোন করেছে, কেন করছে তা কখনোই অন্যদের জানানো হয় না৷

মানসিকভাবে যে কোন মানুষকে সুস্থ রাখা প্রয়োজন৷ কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি মানুষেরই কথা বলার জন্য, কথা শোনার জন্য কাউকে প্রয়োজন৷ বিষণ্ণতা আলাদা কোন রোগ নয়৷ এর চিকিৎসা আছে৷ চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে প্রতিটি পেশার মানুষকে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন