1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানদের ভাগ্যচক্রে বিশ্বাস

১৮ জানুয়ারি ২০১১

বছর শেষে ও নতুন বছরের শুরুতে গণক ও ভবিষ্যৎবক্তাদের রমরমা জার্মানিতে৷ গত বছরটি কেমন গেল, নতুন বছর কী বয়ে আনবে, স্বাস্থ্য, অর্থ, প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে কেমন অবস্থা হবে, তা জানতে গণকের কাছে যাতায়াত বেড়ে যায় মানুষের৷

https://p.dw.com/p/zz1B
হাতের তালুতেই কী লেখা থাকে ভাগ্য?ছবি: Fotolia/Helder Almeida

ভিনফ্রিড ফন থেলেন একজন গণক৷ তাস দেখে মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ বলতে পারেন তিনি৷ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান গণক থেলেন এভাবে, ‘‘অনেকেই আমার কাছে আসেন, জানতে চান চাকরি, প্রেম ভালবাসা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে৷ নতুন বছর কী বয়ে আনবে সে সম্পর্কে ভয় ভীতিও থাকে অনেকের মনে৷''

ভিনফ্রিড একজন অভিজ্ঞ গণক৷ ১৫ বছর ধরে তিনি তাসের মাধ্যমে মানুষের অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন৷ একজনের ভাগ্য গণনা করতে গিয়ে থেলেন বলেন, ‘‘এখানে দেখছি সূর্যের চিহ্ন৷ এটা আসলে ভবিষ্যৎ, উষ্ণ ও আরামদায়ক৷ নতুন কারো সঙ্গে সম্পর্ক হবে আপনার এবং তা হবে গ্রীষ্মকালে৷ তবে আপনাকে একটু সতর্ক থাকতে হবে৷ কেননা এখানে একটা তোরণও দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ গোলমালের সম্ভাবনা৷ সেজন্য ব্যক্তিটিকে আপনার ভালভাবে লক্ষ্য করতে হবে৷''

গণক থেলেনের বাসাটি দেখলে মনে হবে আর দশটা সাধারণ মানুষের বাসার মতই৷ কোথাও রহস্যজনক বা যাদুকরি জিনিস নেই৷ বসার ঘরে তাসগুলি রাখা৷ গণনা করার কাজটা করেন তিনি সেখানেই৷ আধঘন্টার গণনার খরচ ২০ ইউরো ৷ খুব বেশি নয়৷ গণক ও ভবিষৎ বক্তাদের বাজারে দামের বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়৷ কয়েক শ ইউরো পর্যন্ত উঠতে পারে তা৷ ৫০ বছর বয়সি থেলেন নিতান্ত খেলাচ্ছলে শুরু করেছিলেন তাস দিয়ে গণনা করার কাজটা, অর্থোপার্জনের জন্য নয়৷ থেলেন বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই শুরু করি এটা৷ ১৬ বছর আগে আমি নিজেই গিয়েছিলাম গণকের কাছে৷ তারপর থেকে বিষয়টি সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে উঠি এবং তাস দেখে গণনা শুরু করি৷ লক্ষ্য করে দেখি অনেক কিছু মিলেও যাচ্ছে৷ মনে হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে একটা কিছু আছে৷ তারপর থেকে এই বিষয়টিতে একেবারে নিবেদিত করি নিজেকে৷''

Kultur-Projekt Megacities Was ist meine Zukunft?
ভারতেও শুধুমাত্র তাস বা হাত দেখে মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ বলতে পারেন অনেকেইছবি: DW

শুধু তাসের নয় এসোটেরিক বা অতীন্দ্রিয়বাদের অন্যান্য দিকও ফুলে ফেঁপে উঠছে জার্মানিতে৷ যেমন স্বপ্ন বা হস্তরেখার ব্যাখ্যা, রাশিচক্রের গণনা, আলো দিয়ে বা স্পর্শ করে রোগ বালাই সারানো, হোয়াইট ম্যাজিক ইত্যাদি৷ যে কোনো সমস্যারই উত্তর পাওয়া যাবে এসোটেরিকের জগতে৷ তবে এই পেশায় আসতে হলে নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষা বা যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না৷ প্যারাবিজ্ঞান গবেষক ব্যার্ন্ড হাডের বলেন, ‘‘অজানাকে জানার একটা আকাঙ্খা থাকে মানুষের মনে৷ আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যা ক্রমেই জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে৷ এসোটেরিকের মাধ্যমে কিছুটা উষ্ণতা পাওয়া যায়৷ কেননা এখানে অনেক জটিল প্রশ্নেরও সহজ উত্তর পাওয়া যায়৷''

বছরের শুরুতে এসোটেরিকের দোকানগুলিতেও পাওয়া যাচ্ছে নানান জিনিসপত্র৷ দেহ ও মনের প্রশান্তির জন্য রয়েছে নানা সুরের সিডি ও অডিও৷ ক্লাউডিয়া বেটনারের এসোটেরিকের দোকানটিতে এখন ক্রেতার কোনো অভাব নেই৷ ভাগ্য ফেরানোর জন্য নানা রঙের পাথর বা লকেট, দেবদূতের ছবিঅলা কার্ড, ধূপকাঠি ইত্যাদি অনেক কিছুর দিকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা৷ ক্লাউডিয়া বেটনার বলেন, ‘‘এখানে রয়েছে যাদুকরি তাস, এই সব তাসের ব্যাখ্যাসহ বইও রয়েছে৷ নতুন বছরে কী ঘটবে, তা জানতে পারবে মানুষ৷ ঐখানে দেখা যাচ্ছে আলোর থেরাপির উপকরণ, যা শান্তির দিক নির্দেশ দিচ্ছে৷ এসব কিছুই সিরিয়াস জিনিসপত্র৷ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেয়া ঠিক নয়৷''

Wahrsager in Thailand
যে কোনো সমস্যারই উত্তর পাওয়া যেতে পারে এই এসোটেরিকের জগতে...থাইল্যান্ডও তার ব্যাতিক্রম নয়ছবি: AP

বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক প্রফেসর গ্যুন্টার এভাল্ড এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন বেশ কিছুদিন ধরে৷ বিশেষ করে বিজ্ঞানের সঙ্গে দর্শন ও ধর্মের সংযোগ নিয়েই তাঁর আগ্রহ৷ প্রফেসর এভাল্ডের মতে, ‘‘এমন কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে, গতানুগতিক পদার্থ বিজ্ঞান দিয়ে যার ব্যাখ্যা দেয়া যায় না৷ যা নতুন ও অজানা এক জগৎ৷''

প্যারাবিজ্ঞানের গবেষক ব্যার্ন্ড হাডের অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রতি দশ বছর পর পর এই রকম একটা ঢেউ আসে৷ বইএর দোকানগুলি এসোটেরিকের নানা রকমের জিনিসে ভরে যায়৷ পাওয়া যায় ভবিষ্যদ্বাণী, মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডারসহ আরো কত কিছু৷ ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ভবিষ্যব্দাণীটা অনেকেই এখন বিশ্বাস করছেন না৷ এর পর নতুন একটা তারিখ নিয়ে জল্পনা কল্পনা করা হবে হয়তো৷''

সবশেষে বলা যায়, একটুখানি যাদু, একটু আশা ও বিশ্বাস নিয়ে জীবনটাকে যদি খানিকটা সুমধর করা যায়, তাহলে ক্ষতি কী?

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ