1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাম্বিয়ার গ্রামে চিকিৎসা করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার

১৬ নভেম্বর ২০১০

আফ্রিকায় প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ মারা যায় নানা অসুখে৷ ডাক্তার, হাসপাতাল ও ওষুধপত্রের অভাবে অনেক রোগের চিকিৎসা সম্ভব হয়না৷ তবে জাম্বিয়ার মাচা গ্রামের মানুষরা এখন ইন্টারনেটের দৌলতে কিছুটা সুচিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/QA96
জাম্বিয়ার মাচা গ্রামের হাসপাতালে এসে গেছে আধুনিক প্রযুক্তিছবি: DW

জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকা থেকে তিনশ কিলোমিটার দূরে মাচা গ্রামটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে আর দশটা গ্রামের মতই৷ তবু সেখানে বসবাস করতে ও কাজ করতে আগ্রহী এখন অনেকে৷ তরুণ চিকিৎসক জনাথন সিটালি সম্প্রতি মাচা গ্রামে চাকরি নিয়ে এসেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনও শুধু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাইনি৷ আরো পড়াশোনা করতে চেয়েছি৷ ২০০৬ সালে ই-লার্নিং'এর কথা জানতে পারি৷ তখন থেকে আমি এমন একটি হাসপাতালে কাজ খুঁজেছি, যেখানে সহজে ও সস্তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যায়৷''

Macha Bank Container
মাচা গ্রামে ব্যাঙ্কিং’এর ক্ষেত্রেও এসে পড়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাছবি: DW

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায় মাচা৷ বিশেষ করে চিকিৎসাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে এখানে দিন দিন৷ বলা যায় ইন্টারনেটকে মাচার জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়েছে৷ মাচার ৩০ হাজার বাসিন্দা এখন জাম্বিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন৷

ডাঃ জনাথন সিটালি তাঞ্জানিয়া, নাইজেরিয়া, গ্রেট ব্রিটেন ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে লিভারপুল ইউনিভার্সিটিতে ইন্টরনেটের মাধ্যমে হেল্থ ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স ডিগ্রির কোর্স করছেন৷ পরীক্ষা সামনেই৷ সেবাসার্ভিসের প্রধান এডগার সুসিকুও ইন্টারনেটের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন৷ আল্ট্রা সোনোগ্রামের ওপর পড়াশোনা করছেন তিনি৷ জাম্বিয়াতে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই৷ তাই দান হিসাবে পাওয়া যন্ত্রপাতিগুলো কয়েক বছর ধরে এমনিতেই পড়ে আছে৷ সুসিকু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি এখন ক্যানাডার ব্যারন ইন্সটিটিউটে একটি অনলাইন কোর্স করছি৷ পরীক্ষাগুলিও আমি অনলাইনের মাধ্যমেই দেব, ফলাফলও পাওয়া যাবে অনলাইনে৷ এটা একটা বিরাট সুবিধা৷''

Macha Satellitenschüssel
স্যাটেলাইট সংযোগ মাচা গ্রামকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছেছবি: DW

২০০৪ সাল থেকে মাচা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে৷ সূচনা হয় মাচার হাসপাতাল থেকে৷ হাসপাতালের ম্যালেরিয়া গবেষণা ইন্সটিটিউটটি অ্যামেরিকার জন্স-হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে৷ এই ইনস্টিটিউটে কাজ করতে এসেছিলেন হল্যান্ড থেকে ডাঃ ইয়ানেকে ফান ডিয়েক ২০০৩ সালে৷ চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রচণ্ড দুরবস্থার সম্মুখীন হন তিনি৷ অ্যামেরিকার সহকর্মীদের সঙ্গে কাজকর্মের সুবিধার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দেন ডাঃ ফান ডিয়েক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন এখানে এসেছিলাম, তখন আধুনিক যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাই ছিলনা, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন কিছুই না৷ একধরনের টেলিগ্রাফ দিয়ে ছোটখাট খবরাখবর আদানপ্রদান করা হত৷ কিন্তু গবেষণার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্যের আদান প্রদানের সুযোগ সুবিধা৷ আর এসবের জন্য ইন্টারনেটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷''

ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই সব খবরাখবর জানা যায়৷ নতুন নতুন গবেষণার ফলাফল, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রকল্পের অর্থের জন্য আবেদন করা এ সবই ইন্টারনেটের সাহায্যে সম্ভব৷ এক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন মাচাবাসীরা৷ অচিরেই রোগীদের ব্যবস্থাপনাও ডিজিটাল করা হবে৷ রোগীরা একধরনের চিপকার্ড সঙ্গে বহন করবেন, যাতে ওষুধের প্রেসক্রিপশন, গবেষণাগারের ফলাফল এসব সেভ করা থাকবে৷ বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই ধরনের চিপকার্ড খুবই জরুরি৷ কিন্তু এই চিপকার্ড চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি যন্ত্রপাতি যেমন রিডারের অভাব রয়েছে এখনও৷ এ প্রসঙ্গে ডাঃ সিটালি বলেন, ‘‘একজন রোগীর কার্ডটা পড়েই বোঝা যাবে, এতদিন তাঁর কোথায় চিকিৎসা হয়েছে, শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলই বা কী? আমরা সাথে সাথে তথ্যগুলি হালনাগাদ করতে পারব৷''

আফ্রিকায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সময় লাগে অনেক, কারিগরি ব্যবস্থাপনাও অপ্রতুল৷ তাই ইন্টারনেটের সাহায্যে এখানে মূল্যবান সময় বাঁচানো যেতে পারে৷ অনেক মারাত্মক অসুখেরও সুচিকিৎসা সম্ভব, যদি টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করা যায়৷ এটা হল অডিও এবং ভিডিও মাধ্যমে রোগী, ডাক্তার, ওষুধের দোকান ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা ও দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা৷ ফলে চিকিৎসাও দ্রুত করা সম্ভব, যাতায়াতের সময়টাও বাঁচে৷ তবে মাচার হাসপাতালে যাতে ভাল চিকিৎসকরা চাররি করতে আগ্রহী হন, সে দিকটাতেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ ডাঃ জনাথন সিটালি অবশ্য অন্যরকম চিন্তাভাবনা করছেন৷ স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি একটি ক্লিনিক খুলতে চান৷ খুব সম্ভবত রাজধানী লুসাকায়, যেখানে ভাল অর্থ উপার্জন করা যায়৷ পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই মাচা ছাড়বেন ডাঃ সিটালি৷ বলা যায় কোনো কোনো বাধা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক