জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
যুদ্ধাপরাধের মামলায় বিচার হয়ে কয়েক শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াতের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে দলটির অতীতের কথাও৷
জামায়াতের ইতিহাস
১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা শুরু হয়৷ দলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী৷ এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর গঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান৷ বাংলাদেশ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী, যার প্রধান ছিলেন গোলাম আযম৷ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে কয়েকমাস পরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল৷
সুবিধাবাদী দল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মামুন আল মোস্তফা সম্প্রতি এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘১৯৪১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুবিধা পেলেই বদলে ফেলেছে জামায়াত৷’’ তিনি বলেন, অন্য অনেক দলের মতোই যেখানে লাভ দেখেছে, বিনা দ্বিধায় সে পথে গেছে দলটি৷ ‘‘জামায়াত পাকিস্তানের বিরোধিতা করলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব পাকিস্তানে চলে যায়৷’’ আরও জানতে ক্লিক ‘+’৷
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জাময়াতে ইসলামী৷ শুধু বিরোধিতা নয়, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে৷
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, তারপর আবার...
স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়৷ ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সুযোগ করে দিলে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে জামায়াত কাজ শুরু করে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে কাজ শুরু করে৷
নির্বাচনি রাজনীতিতে জামায়াত
জামায়াত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে৷ সেই বার তারা ১০টি আসন পায়৷ এরপর ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ১৭টি আর ২০০৮ সালে দু’টি আসন লাভ করে৷ এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতের দু’জন নেতা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠন
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২৫শে মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার৷ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াত নেতাদের দণ্ড ছাড়াও দলটিকেও যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷
মীর কাসেমের ফাঁসি বড় ধাক্কা
যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত সবসময়ই সক্রিয় ছিল৷ এ লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ খরচ করে বিচার বন্ধ ও জামায়াত নেতাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা হয়৷ এই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন মীর কাসেম আলী৷ তিনি মূলত জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন৷ মীর কাসেম আলির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, দল নয়
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ ফলে দলটি এখন আর দলীয়ভাবে এবং দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না৷ তবে দল হিসেবে জামায়াত এখনও বৈধ একটি রাজনৈতিক সংগঠন৷
নতুন আমির কে হচ্ছেন?
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ বর্তমানে মকবুল আহমেদই দলটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন৷