জাতিসংঘের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবের দশ বছর
২০ নভেম্বর ২০১০জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ২০০০ সালে৷ প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য - বিভিন্ন ধরণের সংঘাত এবং সংঘর্ষ মোকাবিলায় নারীদের সক্রিয় করা৷ যে সব নারী এসব সংঘর্ষের শিকার তাদের সমাজে একাত্ম করা, তাদের সমস্যার আলোকে সামাধান খুঁজে বের করা৷ এছাড়া শান্তি রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগেও নারীদের সম্পৃক্ত করা৷ একারণেই জাতিসংঘের দাবি ছিল, সদস্যদেশগুলো এই প্রস্তাব অনুযায়ী নিজ নিজ দেশে কাজ করবে৷ এবং জাতিসংঘে প্রতিবছর সে বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাবে৷
কিন্তু সব দেশ যে প্রস্তাব মেনে কাজ করে যাচ্ছে তা নয়৷ এক্ষেত্রে জার্মানির দিক থেকেও তেমন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ বেশ কিছু সংগঠন জার্মানিতে রয়েছে যারা শান্তি রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেশ সক্রিয়ভাবেই কাজ করছে৷ এসব সংগঠন এই প্রশ্নে সরকারের খোলাখুলি সমালোচনা করেছে৷ শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন উটে শয়েব৷ তাঁর দাবি, জার্মানি যে সব দেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করছে অর্থাৎ বিভিন্ন ‘পিস মিশন'-এ লোক পাঠাচ্ছে সেখানে বেশি করে নারীদের নিয়োগ করা উচিৎ৷ নারী নিরাপত্তা পরিষদ প্রসঙ্গে তিনি জানান,‘‘ ২০০৩ সালে নারী নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হয়৷ এর সঙ্গে অন্য কোন সংস্থা বা সংগঠনের সম্পর্ক নেই৷ সংগঠনটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে৷ আমরা নিজেদের দেখছি এমন একটি সংগঠন হিসেবে যে সংগঠনটি ১৩২৫ প্রস্তাবটি কার্যকর করা হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখবে৷ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের প্রস্তবটি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে আমরা তা জানতে চাই৷ সামরিক বা বেসামরিক শান্তি রক্ষী মিশনগুলোতে কতজন নারী নিয়োগ করা হয়েছে তা জানতে চাই৷''
গত সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মার্গট ওয়ালস্ট্রম ‘নারী এবং যুদ্ধ' নামক একটি সম্মেলনে নারীর ওপর অত্যাচারের বেশ কিছু দিক তুলে ধরেন৷ এর মধ্যে ছিল যুদ্ধাবস্থায় অল্পবয়স্ক মেয়ে এবং মহিলাদের ধর্ষণের কথা৷ আক্ষেপের সঙ্গে তিনি জানান,‘‘আমি প্রায়ই শুনি সংঘাত বা যুদ্ধের সময় একটি মেয়েকে বা বেশ কিছু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে– এটা যেন খুবই স্বাভাবিক৷ এটা যেন যুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির একটি অংশ হিসেবে ধরতে হবে৷''
বেশ জোর দিয়েই তিনি বলেন, ‘‘ব্যাপারটা আর এত সহজে আমরা মেনে নেব না৷ কারণ যুদ্ধের সময় এ ধরণের ঘটনা ঘটানো অন্যায়৷ মানবাধিকারের চরম লংঘন এটি৷ এর সঙ্গে সংস্কার, ঐতিহ্য বা একটি মেয়েকে ভাললাগা বা ভালবাসা জড়িত নয়৷ এটি অমানবিক, পাশবিক৷ ''
বাস্তব সত্য হল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় দশ বছর সময় লেগেছে যুদ্ধাবস্থায় ‘ধর্ষণ গ্রহণযোগ্য নয়' এই কথাটি নির্দিষ্ট করতে৷
জার্মানির বিভিন্ন শান্তি রক্ষী মিশনে সামরিক এবং বেসামরিক মানুষ কাজ করছে৷ এর মধ্যে সেনা থেকে শুরু করে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষও রয়েছে৷ কসোভোয় রয়েছে ১৫ জন মহিলা পুলিশ, তারা কাজ করছে জাতিসংঘের শান্তি মিশন উনমিকে৷ বসনিয়ায় মাত্র তিনজন এবং লাইবেরিয়ায় কয়েকজন মহিলা পুলিশ কর্মরত৷ এসব মিশনের জন্য লোক নিয়োগ করতে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের৷ জার্মান সরকার এই খাতে বাজেট বাড়াতে নারাজ৷ তবে অন্য খাতে জার্মান সরকার অর্থ খরচ করতে কার্পণ্য করেনি৷ জানান ক্ষমতাসীন জোটের বড় শরিক সিডিইউ-র সাংসদ পেটার বায়ার৷ পেটার বললেন,‘‘ জাতিসংঘের মহিলাদের সংস্থা ইউএন ওম্যান প্রতিষ্ঠিত করতে জার্মানি প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে৷ আগামী বছরের শুরুতে এই সংস্থা কাজ শুরু করবে৷ নারী অধিকার আদায়ে এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ জার্মানি শুরু থেকেই এই সংস্থাকে সমর্থন করে আসছে৷''
সারা বিশ্বে জাতিসংঘের প্রায় ১ লক্ষ কুড়ি হাজার মনুষ বিভিন্ন শান্তি মিশনে কাজ করছে৷ এর মধ্যে নারী-পুরষ মিলিয়ে জার্মানির মাত্র ২৬২ জন সেনা রয়েছে৷ আর বেসামরিক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ২৫৯ জন৷ এত অল্প সংখ্যক মানুষ কাজ করছে এর মূল কারণ হল অর্থ সংকট৷ শান্তি মিশনে বাজেট কমিয়েছে জার্মান সরকার৷ এর তীব্র সমালোচনা করেন বামপন্থী ডি লিংকে'র কাটরিন ফলগার৷ কাটরিন ফলগারের ক্ষোভ,‘‘ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বা সংঘর্ষে জর্জরিত দেশে যে কোন মেয়েকে রক্ষা করার মূলমন্ত্র হল যুদ্ধ-সংঘাত-সংঘর্ষ রোধে কাজ করা৷ অথচ সরকার তেমন কিছুই করছে না৷ সংঘাত এবং সংঘর্ষ রোধের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর বাজেট কমানো হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ৷ অন্যদিকে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য প্রায় চারশো মিলিয়ন ইউরো ধার্য করা হয়েছে৷ এটা একটি চরম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই না৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক