1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তনে স্যামন মাছের জীবন যাচ্ছে বদলে

২৯ অক্টোবর ২০১০

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন- ‘স্বদেশের প্রেম যত সেই মাত্র অবগত/ বিদেশেতে অধিবাস যার’ কবিতাটি তিনি কার বা কাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন সে প্রশ্নে গেলাম না, তবে প্রাণীকুলের মধ্যে স্যামন মাছ, তাদের সঙ্গে কিন্তু কথাটা মিলে যায়৷

https://p.dw.com/p/Psl9
আটলান্টিকের পানিতে স্যামন মাছছবি: AP

জার্মান ভাষায় স্যামনের নাম লাক্স, অদ্ভুত এদের জীবন চক্র৷ জন্ম নেয় নদীর মিঠা পানিতে, তারপর চলে যায় সাগরের নোনা জলে৷ সেখানে জীবনের পাঁচ পাঁচটি বছর কাটিয়ে শুরু হয় স্যামনের নতুন অভিযাত্রা৷ নিজের জন্মপানিতে ফিরে আসার জন্য শুরু হয় সাগর থেকে নদীর দিকে যাত্রা৷ কয়েক'শ, কখনোবা কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত পথ পাড়ি দিয়ে ঠিকই আবার ফেরত আসে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তাদের জীবন, সেখানে৷ এই যাত্রাকালে তাদের বিপদ সবখানে৷ মানুষ ধরছে, রয়েছে সেই বিপদ৷ নানা প্রাণীর খাদ্য হিসাবেও স্যামনের জুড়ি নেই, রয়েছে সেই বিপদও৷ তাই বাড়ি ফেরার পথে ধরা খেয়ে জীবনের শেষ হতে দেখা যায় এই মাছের অনেকাংশকেই৷

Essen Gericht Lachsfilet gegrillt mit Spargel
মানুষসহ নানা প্রাণীর খাদ্য হিসাবেও স্যামনের জুড়ি নেইছবি: Fotolia/robynmac

ডিসকাভারি চ্যানেলের সংবাদিক ব্যাক গ্রুলভ কয়েকদিন আগে এমনই এক ছবি দেখিয়ে ছিলেন৷

নদী পথে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন স্যামনের খোঁজে৷ কখনো নৌকায়৷ কখনো হেঁটে চলছিলো তার যাত্রা৷ পাহাড়ি একটি ছোট্ট নদীর কাছে এসে থেমে গেলেন তিনি৷ বললেন, ‘দেখো দেখো, মৃত স্যামন! ঐ যে ওখানেও কয়েকটি৷ আরে ও তো শত শত৷ এখানেই প্রমাণিত হচ্ছে স্যামনেরা যেখানে জন্ম নেয়, উজানে সাঁতার কেটে আসে, ডিম ছাড়ে তারপর মারা যায়৷ একেই হয়তো বলে প্রকৃতির খেয়াল৷'

নদীর উদ্দেশে ফিরতি যাত্রায় বিশ্রামহীন প্যাসিফিক স্যামন দৈনিক ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ সাঁতার কেটে অতিক্রম করে৷ জন্মস্থানের জলে এরা ডিম পাড়ে; ডিম পাড়ার পর এদের বেশির ভাগই মারা যায় সেখানকার মিঠাপানিতেই৷

অনেক বছর সাগরে কাটানোর পর কীভাবে এরা জন্মস্থানকে চিনে নেয় এবং ঠিক সেখানটাতেই ফেরত আসে? গবেষকদের মতে, স্যামন যখন জন্মনদীর আশেপাশে চলে আসে, তখন এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব এদের ঘ্রাণইন্দ্রিয় টের পায়৷ শৈশবে নদী থেকে সাগরে প্রথমবার দেশান্তরী হবার যাত্রাচিহ্ন এদের মস্তিষ্কে হয়ত থেকে যায়৷ যৌবনে ফিরতি যাত্রায় তা কাজে লাগে৷

আবার কেউ কেউ মনে করেন, প্যাসিফিক স্যামনের রয়েছে বিশেষ ধরনের স্নায়ু ইন্দ্রিয় যা সাগরের স্রোতের প্রবাহের ধরণ অনুযায়ী সাড়া দেয় এবং এদের উপকূলে পৌঁছাতে সাহায্য করে৷ আবার কারও কারও মত প্যাসিফিক স্যামন ভূ-পৃষ্ঠের চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিন্নতা টের পেতে সক্ষম এবং সে তথ্য এরা উপকূলমুখী যাত্রাতে কাজে লাগায়৷

তবে সে যাইহোক না কেন মৎসকুলের এই সদস্যটির জীবনে বিশাল পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ স্যামনের বংশবৃদ্ধির হার কমে এসেছে৷ এই কঠোর কিন্তু বাস্তব চিত্রটি দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের নদীগুলোতে জন্ম নেয়া স্যামন মাছের বেলায়৷ মানুষও নাকি এ জন্য দায়ী৷ তবে বেশি দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন৷

এদিকে, নদীতে বিদেশি প্রজাতির মাছের অস্তিত্বও স্পেনের স্যামনদের বংশ বিস্তারে প্রচন্ড বাধা সৃষ্টি করছে৷ এছাড়া জলের পরিবেশ ভিন্ন হয়ে যাবার কারণে সেখানে ফিরে আসা এবং ডিম পাড়ায় বাধা পড়ছে৷

পৃথিবীর পানিতে হাজার হাজার বছর ধরে বিচরণকারী স্যামন মাছকে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা ঈশ্বর বলেই মেনে এসেছেন৷ স্যামন মাছের জীবনচক্র অনুযায়ী তারা নিজেদের জীবন সাজান৷ ‘স্যামন মানব' বলে নিজেদের তারা পরিচয় দিতেও ভালবাসেন৷ প্রকৃতির অসামান্য অবদান, সেই স্যামনকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন চলছে আন্দোলন৷ পরিবেশ রক্ষা করে, জলবায়ুকে পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করে মাছের এ প্রজাতিকে রক্ষা করাই সকলের উদ্দেশ্য৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক