জমি অধিগ্রহণ বিল পাস, শিল্পায়নে প্রভাব
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩বহু-প্রতীক্ষিত খাদ্য সুরক্ষা বিল সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস করানোর পর, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মনমোহন সিং সরকার সংসদে পাস করিয়ে নিল জমি অধিগ্রহণের মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল৷ দুটি বিল যে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে যথেষ্ট সাহায্য করবে, সেবিষয়ে সন্দেহ নেই৷ বিরোধীদের রাজি করিয়ে দুটি বিল পাস করানোর কৃতিত্ব কংগ্রেস একাই দাবি করবে৷ কৃতিত্বের ভাগিদার হতে বিরোধীদল বিজেপি এবং অন্যান্য দল সংশোধনের দাবি ছাড়া সরাসরি বিলে আপত্তি করেনি৷ অর্থাৎ, বিজেপি দেখাতে চায় যে তারাও কৃষকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে নয়, এমনটা অনেকেই মনে করছেন৷
জমি বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিল্পায়নের জন্য জমি নিতে গেলে ৮০ শতাংশ জমি-মালিকের পূর্ব-সম্মতি নিতে হবে৷ অবশিষ্ট ২০ শতাংশের জন্য দরকার হলে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ তফশিলি উপজাতি এলাকায় জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা গ্রামসভার অনুমতি বাধ্যতামূলক৷ রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো, রেল, প্রতিরক্ষা ইত্যাদির মতো ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ প্রকল্পের জন্য ৭০ শতাংশ জমি-মালিকের সম্মতি লাগবে৷ আর জনস্বার্থে সরকারি প্রকল্পের জন্য সরকার নিজেই জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে৷
এরপর আছে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন, তথা প্রতিস্থাপনের প্রশ্ন৷ শহরাঞ্চলে জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাজার দামের চারগুণ এবং গ্রামাঞ্চলের জমির জন্য বাজার দামের দ্বিগুণ৷ বিলে জমি মালিকদের জন্য রাখা হয়েছে উপযুক্ত পুনর্বাসন ও প্রতিস্থাপন সংস্থান৷ পুনর্বাসনের আগে জমি মালিকদের উচ্ছেদ করা যাবে না৷ একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে, তা নাহলে জমি চলে যাবে ল্যান্ড-ব্যাংকে৷ এছাড়া, বহু-ফসলি জমি কতটা নেয়া যাবে তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার৷
শিল্পমহল জমি বিলকে মোটামুটি স্বাগত জানিয়েছে৷ তাদের মতে, জমি নিয়ে জমি মালিক ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ কমবে৷ জমি জট খুলে যাওয়ায় শিল্পায়নে গতি আসবে৷ পাশাপাশি তাঁদের আশঙ্কা, এতে শিল্পস্থাপনের খরচের পরিমাণ অনেক বাড়বে৷ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া জটিলতর হবে৷ অনেক ক্ষেত্রে শিল্পস্থাপন আর্থিক দিক থেকে লাভজনক নাও হতে পারে৷ আবাসন প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত৷ সরকারের আশা, বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির অন্যতম জমি সংস্কার বিল৷ এরফলে ভোটের আগে বিনিয়োগ তথা প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে৷ প্রশ্ন উঠেছে, বিলে কার স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে? কৃষক না শিল্প? তৃণমুল কংগ্রেস বিলের বিরোধীতা করলেও নিরপেক্ষ মতে, দুই-এর মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে জমি অধিগ্রহণ বিলে সংশোধনের প্রস্তাব এনেছিল, কিন্তু সংসদে পাস করাতে পারেনি পূর্বতন কংগ্রেস-জোট সরকার৷ এবার ১১৯ বছর আগেকার ব্রিটিশ আমলের জমি বিলটি একেবারে বাতিল করে বিরোধীদের ১৩টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে তা পাস করানো হয়৷ যদিও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তা পাস করাতে হবে৷