1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনবার গ্রামের স্কেটিং পার্ক

২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

মধ্য ভারতের ছোট্ট একটি গ্রামে হঠাৎ একটি স্কেটিং পার্ক গড়ে উঠল কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে যেতে হবে পান্না জেলার জনবার গ্রামে, যেখানে জার্মানির উলরিকে রাইনহার্ড এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন৷

https://p.dw.com/p/2UlwX
বিভিন্ন রকম স্কেটবোর্ড
ছবি: Irwin Loy

না আছে ট্রেনার, না আছে বিশেষ ট্রেনিং, তা সত্ত্বেও বাচ্চারা চমৎকার স্কেটবোর্ডিং করতে পারে৷ ভারতের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝখানে এই স্কেটিং পার্ক, যার নাম ‘জনবার ক্যাসল'৷ এই স্কেটিং পার্ক তৈরি হয়েছে এক জার্মান মহিলার প্রচেষ্টায়৷ উলরিকে রাইনহার্ড মধ্য ভারতের জনবার গ্রামের বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য এই স্কেটিং পার্কটি তৈরি করান একটি সামাজিক এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে৷

উলরিকে বললেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে যে, ছোটরা এখন আগের চাইতে অনেক কম লাজুক৷ ওদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, ওরা যেন ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে – বলেছেন এক শিক্ষক৷ স্কুলে না গেলে স্কেটবোর্ডিং-ও করতে পারবে না – আমরা এই রুল চালু করার পর থেকে বাচ্চারা আগের চেয়ে অনেক বেশি নিয়মিতভাবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে৷''

দুই বিদেশি ভলান্টিয়ার গ্যারি আর ইসাবেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ তারা এই চার সপ্তাহে ২৫ জন বাচ্চার দেখাশোনা করবে৷

স্কেটিং পার্কের সঙ্গে গ্রামের বাকি দৃশ্যটা যেন ঠিক মিল খায় না৷ দিন শুরু হয় বাচ্চাদের পিটি, মানে ব্যায়াম দিয়ে৷ স্কেটিং পার্ক দেখে গ্রামবাসীরাও  গোড়ায় হতভম্ব! জনবার গ্রামের বাসিন্দা রোশন লাল জানালেন, ‘‘ওরা যখন এটা তৈরি করতে শুরু করে তখন আমি সেখানে ছিলাম, ওদের সাথে কাজও করেছিলাম৷ জিনিসটা সম্পর্কে গোড়ায় আমার কোনো ধারণাই ছিল না, কিছুই জানতাম না৷ তৈরির সময়েও অনেক খটকা লাগত৷ ভেবেছিলাম, এর পরে হয়ত ওপরের ছাদ তৈরি হবে৷ শেষমেষ সব কিছু তৈরি হয়ে যাওয়ার পর উনি এখানে এসে খানিকটা স্কেটবোর্ডিং করলেন৷ তখন আমরা বুঝলাম যে, এটা একটা স্কেটিং পার্ক৷ উনি আমাদের বলেছিলেন যে, বাচ্চারা এখানে এলে তারা আরো ভালো করে পড়াশোনো করবে৷''

স্কেটিং পার্কের মটো হলো: গার্লস ফার্স্ট৷ প্রত্যেক সকালে তারাই প্রথম ‘মাঠে নামে'৷ উলরিকে এভাবে ছোটদের মধ্যে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বোধটা জাগিয়ে তুলতে চান৷ মেয়েরা যখন স্কেটবোর্ডিং করে, তখন তাদের কেউ ডিসটার্ব করে না৷ হয় তারা অন্য কোনো মেয়ের সাহায্য নেয়, নয়ত নিজেরাই শিখে নেয়৷ ভলান্টিয়ার ইসাবেল বললেন, ‘‘আশ্চর্য, তাই না? ছোট ছোট চার বছরের বাচ্চারা যেভাবে তাদের দ্বিগুণ উচ্চতা থেকে স্কেটবোর্ড করে নামে৷ ওদের কোনো ভয় নেই, ছোটরা অত ভাবে-টাবে না, কাজটা করে ফেলে৷ কেননা ওদের ভয় নেই৷''

দেখা থেকে করা

জনবারের কিশোরী পিঙ্কি জানাল, ‘‘আমার এ-বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না৷ একবার শুধু টেলিভিশনে দেখেছিলাম৷ ভাবলাম, আমিও একদিন করব৷ বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কত খরচ পড়বে৷ বাবা বলল, অনেক৷''

ছেলেরা তখন বাঁশের স্কুলবাড়িতে বসে গ্যারির কাছ থেকে ইংরেজি শিখছে৷

জনবার স্কুলের শিক্ষক ঈশ্বরদীন সাধু জানালেন, ‘‘মেয়েরা আগের চাইতে অনেক বেশি নিয়মিতভাবে স্কুলে আসে৷ ওদের শৃঙ্খলা আছে আর ওরা পড়াশুনো সম্পর্কেও অনেক বেশি আন্তরিক৷''

জনবার এমন একটি জায়গা, যেখানে আগের প্রজন্মের মানুষজন নিরক্ষর৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবর্তন আসছে, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে৷ তারা নিজেদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি আস্থা রাখে৷

জনবার স্কুলের ছাত্রী পুজা খুশওয়াহা বলল, ‘‘আমি আরো পড়াশুনো করার জন্য পান্নায় যাব৷ আমার বাড়ির লোক আমি যেখানে পড়তে যেতে চাই, আমাকে সেখানেই পাঠাবে৷''

জনবারের একশ'র বেশি বাসিন্দারা একটা বিশাল পরিবর্তন দেখছেন৷ মহিলা হওয়ার অর্থ আর শুধু চাষবাস বা রান্নার কাজ নয়৷

জনবারের বাসিন্দা পান্না দেবী বললেন, ‘‘ছোটদের আচার-ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে৷ তারা এখন স্কুলে যাচ্ছে৷ আগে তারা সারাদিন মাঠেঘাটে খেলে বেড়াত৷ আজ তারা স্কুলে যাচ্ছে৷ ওদের কথাবার্তাও অনেক ভালো হয়েছে৷''

ক্রাউড ফান্ডিং ছাড়াও প্রখ্যাত চীনা শিল্পী আই ওয়ে ওয়ের মতো শিল্পীরাও উলরিকেকে তাঁর স্কেটিং পার্ক প্রকল্প সমাপ্ত করতে সাহায্য করেছেন৷ এখন স্থানীয় সরকারও উলরিকেকে এলাকার অন্যান্য গ্রামে এই ধরনের প্রকল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করতে চান৷

ওংকার সিং জানোটি/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান