1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভুয়া জঙ্গি’ থেকে আরো সাবধান!

২৬ অক্টোবর ২০১৬

এক বন্ধু বলছিলেন, ‘‘পোশাক শ্রমিক সারা মাস খেটে পায় পাঁচ হাজার আর কেউ জঙ্গি হলেই পাবে পাঁচ লাখ টাকা?'' বিষয়টি অন্য একটি আশঙ্কারও জন্ম দিয়েছে- টাকার লোভে জঙ্গি সাজার ধুম পড়বে না তো?

https://p.dw.com/p/2Rijy
Bangladesh Extremisten werden von Sicherheitskräfte getötet
ছবি: picture-alliance/AP Photo

একসময় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়ির গেটে লেখা থাকতো, ‘কুকুর হইতে সাবধান’৷ পাড়ায় পাড়ায় দেখা যেতো এমন গেট৷ হালে কুকুর, বিড়াল পোষার প্রবণতা কমেছে৷ ফলে ‘কুকুর হইতে সাবধান’ হওয়ার আর খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা৷ এখন বরং ‘ক্ষতিকর মানুষ’ হইতে সাবধান হওয়াই বেশি জরুরি৷

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিকর, সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল জঙ্গিরা৷ বেশ কিছু সফল অভিযানের পর দৃশ্যত দেশে জঙ্গি তৎপরতা আপাতত বন্ধ৷ আবার যাতে শুরু না হয়, সে জন্য বিকল্প পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে৷ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস সেরকমই এক পদক্ষেপ৷ কোনো জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে ৫ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে কয়েকজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে ৫ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেছেন৷

আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা জঙ্গিবাদ-বিরোধী সুধী সমাবেশে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অনুশোচনা নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিরা দল বেঁধে আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করছে৷''

সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা সত্যিই কমেছে৷ সেই সুবাদে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে৷ কিন্তু অভিযানে কিছু জঙ্গি নিহত হলে বা কয়েকজন আত্মসমর্পণ করলেই কি জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে যায়? জঙ্গিবাদ তো যতটা না সাংগঠনিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক৷ মানসিকতা থেকে ওই বিষ দূর না করলে সমাজকে বিষমুক্ত করা কি সম্ভব?

জঙ্গি পরিবারের সদস্য বা আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের পুনর্বাসনের যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেই৷

সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে চোখে পড়ার মতো জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা নেই৷ কয়েকজন জঙ্গি হত্যা করে এবং ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কিছু জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করালেই জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারবে কিনা এ প্রশ্নটি তাই থেকেই যাচ্ছে৷ পাশাপাশি অন্য যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তা হলো, টাকার লোভে অনেকে আবার জঙ্গি সাজতে শুরু করবে না তো?

প্রতারণার অনেক বড় বড় দৃষ্টান্তই তো আমরা দেখেছি৷ দেখেছি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়া একজনকে রানা প্লাজার আহত উদ্ধারকারী সেজে কোটি টাকা কামিয়ে নিতে

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের ইউনুস আলী সর্দার নামের এক ব্যক্তির রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমেও এসেছে৷ দেরিতে হলেও সবাই জানতে পেরেছেন রানা প্লাজা ধসের ঘটনার আহত উদ্ধারকারী পরিচয় দিয়ে ইউনুস আলী সর্দার ওরফে ইউসুফ ১৬ কোটি মানুষের সহানূভুতি আদায়ের পর কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানও আদায় করেছেন৷ প্রতারণা করে জমানো টাকার হিসাব করতে হিসাবরক্ষকও রেখেছেন তিনি৷

আমরা ‘ভুয়া পুলিশ’, ‘ভুয়া মেজর’সহ অনেক ধরণের প্রতারকই দেখেছি৷

দেশে ‘ভুয়া সাংবাদিক'ও কম নেই৷ এক পরিবারের ‘তিন ভাই ভুয়া সাংবাদিক’ এমন খবর পড়েও আমরা আর আজকাল বিস্মিত হইনা৷

কয়েকদিন ধরে দেশে এমন অনেক ভুয়া গরিবও দেখা যাচ্ছে, যারা অসৎ কিছু লোকের সহায়তায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ১০ টাকার চাল ঘরে তুলছে৷ সেই ভুয়া গরিবদের একজন আবার এমনই সম্পদশালী যে তার ঘরের সামনের গেটটি তৈরি করতেই খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা৷

বলতে গেলে সব রকমের ভুয়াই আমাদের দেখা হয়ে গেছে৷ কিন্তু ভুয়া জঙ্গিও দেখতে হোক তা আমরা একেবারেই চাইনা৷ অথচ সেই আশঙ্কা উড়িয়েও দেয়া যায় না৷ ১০ টাকার চালের লোভে বড় লোক হতদরিদ্র হয়ে যেতে পারলে, ৫ লাখ টাকার লোভে মানুষ জঙ্গিও সাজতেই পারে৷ 

সুতরাং জঙ্গি হইতে সাবধান, ভুয়া জঙ্গি হইতে আরো সাবধান!

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য