1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চোখ দিয়ে শোনা : শ্রবণ শক্তি নিয়ে নতুন সমীক্ষা

১৩ এপ্রিল ২০১১

যে সব মানুষ কানে কম শোনেন বা বধির, তাদের চোখে দেখার ক্ষমতাটা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি৷ লিপ রিডিং থেকে বা হিয়ারিং এইড লাগিয়ে কথা বুঝতে পারেন অনেকে৷ তবে তা তেমন স্পষ্ট নয়৷ এ সমস্যার সমাধানে চিন্তা ভাবনা করছেন এখন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/10sDy
চোখ, শোনা, শ্রবণ, শক্তি, নতুন, সমীক্ষা, Science, Hearing, Eye, Ear, Man, Look, Hear, Research, Health, Lip, বধির, দৃষ্টি, দেখা, স্বাস্থ্য,
ছবি: Fotolia

কখলেয়া'র কার্যকারিতা

মানুষের কানের ভেতরের অংশ বা অন্তঃকর্ণের আকার অনেকটা শামুকের মত দেখতে, যাকে ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় কখলেয়া৷ শ্রুতি প্রতিবন্ধীদের শোনায় সাহায্য করার জন্য যে যন্ত্রটি অন্তঃকর্ণে প্রতিস্থাপন করা হয়, তার নামও দেয়া হয়েছে কখলেয়া৷ কিন্তু এই যন্ত্রটি শোনার জন্য মস্তিষ্কে যে তথ্য পাঠায়, তা স্পষ্ট নয়৷ সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, কী ভাবে কখলেয়াকে আরো কার্যকর করে তোলা যায় ৷

লিপরিডিংও সহায়তা করে

শ্রবণশক্তি হারালে মানুষের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে৷ যেমন লিপ রিডিং বা ঠোঁট নাড়া দেখে ৩০ শতাংশ শব্দ ও বাক্য পড়তে বা বুঝতে পারেন শ্রুতি প্রতিবন্ধীরা৷ এছাড়া কোনো বাক্যের অর্থ বুঝতে হলে আশেপাশে কী ঘটছে, সেটাও লক্ষ্য করতে পারেন তারা অতি দ্রুত৷ অর্থাৎ দৃষ্টিকে তারা ভালভাবে কাজে লাগান৷ এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগের পাসকাল বারোন বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, মস্তিষ্কে শোনার সংকেত গ্রহণের প্রক্রিয়াটা দৃষ্টি দিয়ে অনেকটা পূরণ করা যায়৷ কোনো বধিরকে লিপ রিডিং বা ঠোঁট নাড়া দেখে কোন বাক্যের অর্থ বুঝতে দিলে মস্তিষ্কে শ্রবণের স্নায়ুগুলিও সক্রিয় হয়৷ লক্ষণীয় যে কখলেয়া প্রতিস্থাপন করলে লিপ রিডিং করার ক্ষমতা সে ভাবে সক্রিয় থাকে না৷''

তবে কখলেয়ার মাধ্যমে শোনা শব্দগুলি স্পষ্ট হয় না৷ কিন্তু শব্দের অর্থটা জানা থাকলে, বুঝতে সুবিধা হয়৷ তখন শ্রুতি প্রতিবন্ধীরা কখলেয়ার সাহায্যে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা চালাতে পারেন৷ পাসকাল জানান, ‘‘তারা অস্পষ্ট শব্দেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন এবং বুঝতেও পারেন৷ ফলাফল সত্যিই চমৎকার৷''

যন্ত্র এবং লিপরিডিং এক সঙ্গে ভাল কাজ করতে পারে

বিজ্ঞানী পাসকাল লক্ষ্য করেছেন, কখলেয়া প্রতিস্থাপন করলেও শ্রুতি প্রতিবন্ধীরা ঠোঁট নাড়া দেখে কথাবার্তা বুঝতে পারেন৷ অর্থাৎ চোখ দিয়ে শুনতে পারেন তারা৷ পাসকাল বারোনের ভাষায়, ‘‘ইমপ্ল্যান্টের সাহায্যে কিছু তথ্য শোনা গেলে বাকিটা ঠোঁট নাড়া দেখে বুঝতে পারেন রোগীরা৷ আমাদের প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীরা ইমপ্ল্যান্টের সাহায্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ শব্দ ঠিকমত বুঝতে পারেন৷ তার ওপর লিপ রিডিং করতে পারলে ১০০ ভাগই বুঝতে পারেন তারা৷''

কখলেয়া প্রতিস্থাপন করার পর মস্তিষ্কে শোনার প্রক্রিয়াটা আবার সক্রিয় হয়৷ চোখের সাহায্যে তথ্য গ্রহণ করার ক্ষমতাটা হ্রাস পায় তবে একেবারে বিলীন হয়ে যায় না৷ এই ক্ষমতাকে আবার উজ্জীবিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা৷ পাসকাল বারোন জানান, ‘‘আমরা মনে করি শ্রুতিহীন রোগীদের দৃষ্টিশক্তিরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷ এর ফলে শোনার ক্ষমতাটাও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে৷ কর্ণ এবং চক্ষু এই দুই ইন্দ্রিয় পরস্পরের কাছে থেকে লাভবান হবে৷''

প্রশিক্ষণ নিতে হবে অল্পবয়স থেকে

তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই সব রোগীই উপকৃত হবেন, যারা বড় হয়ে শ্রবণশক্তি হারান, যেমন কোনো দুর্ঘটনায়, অসুখ বিসুখে বা বয়স হওয়ার কারণে৷ যে সব বাচ্চা জন্ম থেকেই বধির তাদের কানে খুব অল্প বয়সেই কখলেয়া প্রতিস্থাপন করা উচিত৷

অ্যামেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অনু শর্মা এ বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা এক হাজার বাচ্চাকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি৷ তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, যেসব শিশুর কানে সাড়ে তিন বছর বয়সের আগে কখলেয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তারা ভাষার দিক দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়ে উঠেছে৷ সাত বছর বয়স হয়ে গেলে কখলেয়া প্রতিস্থাপন করেও আর লাভ হয় না৷ জন্ম থেকেই বধির বলে তাদের মস্তিষ্ক আওয়াজ নিয়ে কাজ করতে অক্ষম হয়ে যায়৷''

অনু শর্মা আরো জানান, ‘‘দেরিতে কখলেয়া প্রতিস্থাপন করা বাচ্চারা কোনো আওয়াজ জোরে বা আস্তে হলে হাত তুলে আমাদের জানাতে পারে৷ কিন্তু অর্থ বুঝতে পারেনা৷ সম্ভবত শ্রবণের স্নায়ুর সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ হারিয়ে যায় বলেই এরকমটি হয়ে থাকে৷''

অনু শর্মা এবং পাসকাল বারোনের সমীক্ষার ফলাফল থেকেই এটাই স্পষ্ট হয় যে, আমরা কান দিয়ে শুনি, মাঝে মাঝে আবার চোখ দিয়েও৷ তবে বোঝার প্রক্রিয়াটা ঘটে মস্তিষ্কে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী