চোখের ইশারাতেই এবার চলবে গাড়ি
১০ মে ২০১০এটাও কি সম্ভব? হ্যা, জার্মানির কিছু গবেষক এবার সেই ধরণের গাড়িই নিয়ে আসছেন৷
চোখের ইশারায় ড্রাইভিং
গাড়িটির নাম স্পিরিট অফ বার্লিন, কারণ এই গাড়িতে যে নতুনত্ব সংযোজন করা হয়েছে তার পেছনে রয়েছেন বার্লিনের বেশ কিছু মেধাবী এবং করিৎকর্মা গবেষক৷ তাঁরা কাজ করছেন ইন্সটিটিউট অফ কম্পিউটার সায়েন্স এর অধ্যাপক ড. রাউল রোহাসের অধীনে৷ গত মাসে তাঁরা তাদের নতুন গবেষণার ফল তুলে ধরেন গণমাধ্যমের সামনে৷
কি আছে তাদের গবেষণায়? ধারণাটি একেবারে নতুন না হলেও এটা এতদিন ধরে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি, অর্থাৎ কেবল চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করেই চলবে মোটর গাড়ি৷ নাইট রাইডার সিরিয়াল তো সবারই মনে আছে, যেখানে নায়কের মুখের কথা শুনেই গাড়িটি ভিলেনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতো৷ এবার স্পিরিট অব বার্লিন চলেছে গবেষকদের চোখের দৃষ্টি দেখে৷ অর্থাৎ ড্রাইভার কি চাচ্ছেন সেটা গাড়ি বুঝতে পারছে তার চোখের দিকে নজর রেখেই৷
নতুন সফটওয়্যার আইড্রাইভার
কিন্তু কীভাবে সম্ভব হল এটি? এজন্য অবশ্যই প্রযুক্তির কাছেই দ্বারস্থ হতে হয়েছে গবেষকদের৷ নতুন একটি সফটওয়্যার আবিষ্কার করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে আইড্রাইভার৷ মূলত এই সফটওয়্যারটিই মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে৷ গাড়িটির ড্রাইভারের মাথায় পরানো থাকবে একটি বিশেষ ধরণের হেলমেট৷ বাইসাইকেল চালকরা যে ধরণের হেলমেট পরে থাকে এটা দেখতে সেরকমই৷ এতে রয়েছে দুইটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা এবং একটি ইনফ্রারেড এলইডি৷ এই হেলমেটটির সঙ্গে সংযুক্ত বিশেষ সফটওয়্যার সম্বলিত একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার৷ হেলমেটের একটি ক্যামেরা থাকছে সামনের দিকে, এটি হচ্ছে সিন ক্যামেরা৷ আর অন্যটির থাকছে ড্রাইভারের একটি চোখের দিকে তাক করা যার নাম আই ক্যামেরা৷ এই আই ক্যামেরার মাধ্যমেই চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করা হবে৷ এই ক্যামেরা থেকে ইনফ্রারেড এলইডি আলো ড্রাইভারের চোখের ওপর পড়ে, তবে তাতে ড্রাইভারের কোন সমস্যা হয়না৷
এই হেলমেট পরা অবস্থায় ড্রাইভারের কাছে দুইটি অপশন থাকে, সেগুলো হল ফ্রি রাইড এবং রুটিং অপশন৷ ফ্রি রাইড অপশনে ড্রাইভার ডানে তাকাচ্ছে নাকি বাঁয়ে তাকাচ্ছে সেটি বুঝে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলও ডানে বাঁয়ে ঘুরবে৷ গাড়ির গতি আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে, অবস্থা বুঝে তার কিছুটা গতি এদিক সেদিক হতে পারে৷ কিন্তু ধরুন, সারাক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বেচারা ড্রাইভারের যদি ঘুম পেয়ে যায়, তাহলে? তাহলেও কোন সমস্যা নেই, চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলে গাড়ি আপনা আপনিই ব্রেক কষে থেমে যাবে৷ তাই দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকছে না৷
অন্য যে অপশনটি থাকছে সেটি হচ্ছে রুটিং অপশন৷ অর্থাৎ কোন মোড়ে পৌঁছার আগে গাড়িটি ড্রাইভারের হেলমেটে সঙ্কেত পাঠাবে৷ এসময় ড্রাইভার যেদিকে মোড় নিতে চান সেদিকে কমপক্ষে তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হবে, তাহলেই গাড়িটি বুঝে ফেলবে তাকে কোনদিকে মোড় নিতে হবে৷ আর ড্রাইভার যদি সামনেই তাকিয়ে থাকেন তাহলে গাড়িটি সোজা চলে যাবে৷ অন্য কোন গাড়ি অনুসরণ করার ক্ষেত্রেও এই নতুন পদ্ধতি দারুণ কাজ দেবে৷ এক্ষেত্রে ড্রাইভারকে বেশি কিছু না করে কেবল সামনের গাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে, বাকি কাজ করবে আইড্রাইভার নামে নতুন সফটওয়্যারটি৷
বদলে যাবে সাধারণ একটি গাড়ি
নতুন এই গবেষণার পেছনে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছে ড. রাউল রোহাসের নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটি৷ তাদের উদ্ভাবিত স্পিরিট অব বার্লিন গাড়িটি দেখতে আর অন্য দশটা গাড়ির মতই৷ কিন্তু এই গাড়িটিকেই পাল্টে দিয়েছে কিছু সেন্সর, কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং ড্রাইভিং হেলমেটটি৷ গবেষক দলের এই গবেষণায় সহায়তা করছে সেন্সোমোটোরিক ইন্সট্রুমেন্ট নামে একটি কোম্পানি৷ এর আগে আরেক গবেষক টিনোশ গানজিনেহ এবং মিয়াও ওয়াং আইড্রাইভার নামে আরও একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন৷ এটি ব্যবহার করে আইপডের মাধ্যমেই গাড়ি চালানো যেত৷ তবে বার্লিনের গবেষকদের উদ্ভাবন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে৷
কিন্তু এভাবে বসে থেকে শুধু চোখের ইশারা দিয়ে গাড়ি চালাতে কি রাজি হবেন কেউ? কারণ ড্রাইভিং এর মজাই যে অন্যরকম৷ এভাবে প্রযুক্তি যদি মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে থাকে তাহলে এক সময় যে গোটা দেহই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক