1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চেরনোবিল বিপর্যয়ের ২৫ বছর পর হিসেব-নিকেশের পালা

২২ এপ্রিল ২০১১

১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা পরমাণু শক্তির বিপদ সম্পর্কে মানুষের ধারণা রাতারাতি বদলে দিয়েছিল৷ দুর্ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পর জাপানের ফুকুশিমায় ঘটলো আরেক ভয়ংকর বিপর্যয়৷

https://p.dw.com/p/112Iu
ছবি: AP

পরমাণু বনাম বিকল্প শক্তি

পরমাণু শক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ? এই প্রশ্ন প্রথম থেকেই মানুষকে ভাবাচ্ছে৷ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক নিরাপদ হয়ে গেছে, অন্যদিকে চেরনোবিল বা ফুকুশিমার মতো ঘটনা এই প্রযুক্তির বিশাল ঝুঁকির দিকটিও তুলে ধরছে৷ সেইসঙ্গে চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলির জ্বালানির চাহিদা হু হু করে বাড়ছে৷ এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পরমাণু বিদ্যুতের কোনো নির্ভরযোগ্য বিকল্প আছে কি? নাকি তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে? দুর্ঘটনার ঝুঁকি সত্ত্বেও ততদিন পর্যন্ত পরমাণু বিদ্যুৎ ছাড়া গতি নেই৷ তাছাড়া কয়লা বা জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানির মতো এক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সমস্যাও নেই৷ বিকল্প জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের পথে এখনো নানা বাধা বিপত্তি রয়েছে৷ অর্থাৎ পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির অভাব নেই৷

চেরনোবিলের বিপদ

এমনই এক প্রেক্ষাপটে জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনের চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিটিকে ঘিরে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷ ২৫ বছর আগে দুর্ঘটনার পর চুল্লিটিকে কার্যত সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল৷ এতদিনে সেই আস্তরণে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ ফলে নতুন করে চুল্লিটি ঢেকে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দাতা দেশগুলি এই কাজে ৫৫ কোটি ইউরো দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে৷ সম্মেলনের এই সাফল্য সম্পর্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বলেন, ‘‘অতীতের যে কোনো সম্মেলনের তুলনায় এবার আমরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি৷ আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে আমরা চেরনোবিল প্রকল্পের জন্য ৫৫ কোটি ইউরো সংগ্রহ করতে পেরেছি৷ তবে এই অঙ্কই চূড়ান্ত নয় – ইউক্রেন এই কাজে আরও ২ কোটি ৯০ লক্ষ ইউরো ব্যয় করবে৷''

একটি মাত্র পরমাণু দুর্ঘটনার পরিণতি যে কতটা সুদূরপ্রসারী ও ব্যয়বহুল হতে পারে, চেরনোবিল তার জ্বলন্ত উদাহরণ৷ চেরনোবিলের ৪ নম্বর চুল্লি সুরক্ষিত রাখার কাজ আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল৷ প্রায় ২৯,০০০ টন ভারি আস্তরণ দিয়ে চুল্লিটি আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত ঢেকে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এই কাজ কতটা কঠিন হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সেইসঙ্গে ব্যবহৃত ফুয়েল রডগুলির সংরক্ষণের জন্য গুদাম তৈরি করা হচ্ছে৷ এই সব প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৬০ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

ঝুঁকির মুখে ব্যাপক এলাকা

আন্তর্জাতিক স্তরে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার এমন সদিচ্ছার সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার নিরাপত্তার প্রশ্ন৷ দুর্ঘটনার ২৫ বছর পরেও এই চুল্লি ব্যাপক ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রাখে৷ যেমন ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয়ের আঁচ জার্মানির মানুষও টের পেয়েছিলেন৷ কিয়েভে সম্মেলনে উপস্থিত জার্মান পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইয়ুর্গেন বেকার বলেন, ‘‘চেরনোবিলের সুরক্ষার জন্য জার্মানি আগামী বছরগুলিতে বাড়তি প্রায় ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ইউরো ব্যয় করতে চায়৷''

চেরনোবিলের চুল্লি থেকে এখনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বন্ধ হয় নি৷ তাছাড়া চুল্লির ভিতরে যে কী ঘটছে, তা কারো জানা নেই৷ বর্তমান আস্তরণের ফাটল থেকে সেখানে বৃষ্টি ও বরফ গলা জল প্রবেশ করছে৷

ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা

চেরনোবিলের এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে গোটা বিশ্ব কতটা শিক্ষা নিয়েছে? সোভিয়েত জমানায় তৈরি এই কেন্দ্রের নিরাপত্তায় যে শুরু থেকেই গাফিলতি ছিল, এবিষয়ে তেমন কোনো সন্দেহ নেই৷ পরমাণু শক্তির প্রবক্তারা তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন, যদিও জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা তাদের দাবিকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে৷ খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ পরমাণু শক্তির ব্যবহার চালিয়ে যেতে চান৷ তিনি বললেন, ‘‘পরমাণু শক্তির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার যে দাবি উঠছে, তার অর্থ হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি স্তব্ধ করে দেওয়া৷ সত্যি করে বলতে গেলে এমন স্বপ্ন সম্পূর্ণ অর্থহীন৷ বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো সঙ্গতি নেই৷''

জার্মানি পরমাণু শক্তির পথ থেকে পুরোপুরি সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বাকি দেশগুলিকেও এবিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক