লাশ ফেরত দিল হাসপাতাল
১৮ আগস্ট ২০১৪সমঝোতা হয়েছে পুলিশের মধ্যস্থতায়৷ ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে৷
ঢাকার মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ আসলামকে (৫৪) গত ৩ জুলাই ফুসফুসে সমস্যাজনিত কারণে ঐ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান৷ তাঁর চিকিৎসা বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে প্রায় ৩১ লাখ টাকার একটি বিল দেন৷ স্বজনরা প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরে পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন৷ কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা না পেলে লাশ দেবে না বলে স্বজনদের সাফ জানিয়ে দেয়৷
তখন উপায় না দেখে সংবাদ মাধ্যমের শরণাপন্ন হন মৃতের পরিবারের সদস্যরা৷ রবিবার দেশের প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমে পুরো বিল না দেয়ায় লাশ আটকে রাখার খবর প্রকাশিত হয়৷ এতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মানবিক কারণে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে বলেন৷ অতঃপর রবিবার সন্ধ্যায় শর্তসাপেক্ষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘‘আসলামের চিকিৎসা বাবদ ৩১ লাখ ৮২ হাজার টাকা বিল এসেছে৷ তাঁর স্বজনেরা আগেই ১২ লাখ টাকা শোধ করেছেন৷ মানবিক বিবেচনায় বাকি প্রায় ১৯ লাখ টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা কমিয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রবিবার তাঁরা লাশ নেয়ার সময় আরো ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন৷ বাকি ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঁচ মাসে শোধ করবেন বলে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেছেন৷''
আসলামের মেয়ে সাদিয়া বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বাবার লাশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ জানুয়ারির মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়েছে তারা, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও শর্তে রয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘জানি না, কিভাবে আমরা এত টাকা শোধ করব৷ বাবার চিকিৎসায় সহায়তা চেয়ে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম৷ হাসপাতালের বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আবারও আমরা দেশবাসীর কাছে সাহায্য চাচ্ছি৷''
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘‘মৃতের পরিবার ছয় কিস্তিতে জানুয়ারির মধ্যে বকেয়া টাকা শোধ করবে, সে বিষয়ে দু'পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে৷'' চুক্তির সময় পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান৷
হাসপাতালের অর্থ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক কাজী মো. সেলিম দাবি করেন, ‘‘তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আগেই বলা হয়েছিল, আসলামের শারীরিক অনেক সমস্যা আছে৷ তাঁর দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা দরকার৷ খরচও অনেক হবে৷ আসলামের স্বজনেরা এতে রাজি হওয়ায় আসলামকে ভর্তি করা হয়৷''
এদিকে হাসপাতালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘রোগীর স্বজনদের দ্বারা সৃষ্ট পরিস্থিতি আমাদের আস্থায় ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে৷ মুমূর্ষু রোগীকে সারিয়ে তোলাটাই আমাদের মুখ্য কাজ৷ টাকা আদায় করে চিকিৎসা দেওয়া নয়৷ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বিল দেওয়া হয়৷ বিলের ব্যাপারে শুরু থেকেই আসলামের স্বজনেরা হাসপাতালকে আশ্বস্ত করেছিলেন৷''
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা আসলাম শেয়ার ব্যবসা করতেন৷ ব্যবসায় ধস নামার পর তাঁর অর্থনেতিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়৷ তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন৷