‘চিলড্রেন অফ ওয়ার’
২৯ মে ২০১৪
আমার ব্লগে নিজের লেখার শিরোনাম নিয়ে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন আসিফ খান অভি৷ শিরোনাম ‘চিলড্রেন অফ ওয়ার: একটি ভারতীয় সিনেমা’-এ ‘একটি ভারতীয় সিনেমা’ অংশটি নিয়েই যে তাঁর অস্বস্তি, তা লেখা পড়েই বোঝা যায়৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতে নির্মিত ছবিতে ইতিহাস এবং বাংলাদেশের মানুষদের আবেগ অনেক সময়ই যথোপযুক্ত গুরুত্ব পায়নি৷ আমার ব্লগের ব্লগার সেদিকেই দৃকপাত করে ক্ষমা চাইতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এ রকম শিরোনাম করার জন্য, কেননা, সিনেমাটা বানানো হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটা স্পর্শকাতর দিক, আমাদের বীরঙ্গনাদের নিয়ে, যে দিকটা আমরা বাংলাদেশি হিসেবে একটা সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে পারি নাই, সেই সেটাই তারা করে দেখিয়েছে৷ কিন্তু তারপরও কোনো দেশের আবেগ সেই দেশের নাগরিকরা ছাড়া আর কে ভালো বোঝে? যে ভুক্তভুগী সেই তো পারে তার আবেগগুলো সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে৷ এই একটি কারণেই সিনেমাটা মর্মস্পর্শীয় কম, বাণিজ্যিক বেশি হয়েছে৷ এ কারণেই ওই শিরোনামের অবতারণা৷’’
তারপর মুনমুন সেন তনয়া রাইমা সেন এবং তিলোত্তমা সোম, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ফারুক শেখ, ঋদ্ধি সেন ও ভিক্টর ব্যানার্জি প্রমুখ অভিনীত মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতর পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশের এই প্রয়াসের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের চেষ্টাও করেছেন আসিফ খান অভি৷ এ ছবি নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ কিছু রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে৷ ফলে ছবিটি যাঁরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে এখনো দেখেননি, তাঁরাও জেনে গেছেন কাহিনি৷ মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে বীথিকা ধরা পড়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে৷ বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে তাঁকে ধর্ষণ করতে থাকে পাকসেনারা৷ যন্ত্রণায় গোঙাতে থাকে বীথিকা৷ এক সময় তাঁকে গ্রাস করে বোধহীন নিস্তব্ধতা৷ ছবির শেষদিকে পাক সেনাদের শিবিরে বন্দি আরেক নারী ফিদার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বীথিকা৷ এক নারীর অবর্ণনীয় লাঞ্চনার অবসান হয় মৃত্যুতে৷ কাহিনিটা মোটামুটি এমন৷
ইতিহাসনির্ভর একটি ছবির সমালোচনা মূল উপজীব্য হলেও, এ লেখার শেষে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার হওয়া অসংখ্য নারীর প্রতি রাষ্ট্র যে আজও যথাযথ সম্মান দেখায়নি – এ নিয়েও আক্ষেপ করেছেন অভি৷ লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি প্রত্যেক বীরাঙ্গনার একজন মুক্তিযোদ্ধার সমান মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত৷ কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা তার কিছুই দিতে পারিনি৷ এটাকে আমি আমাদের সীমাবদ্ধতা বলবো না, আমাদের ব্যর্থতাই বলবো৷ আমরা ক্ষমাপ্রার্থী৷’’
আমার ব্লগে মো. নাসিরের লেখাটিও শিরোনাম গুণেই নজর কাড়ার মতো৷ নিজেকে স্কুল শিক্ষকের সন্তান হিসেবে উপস্থাপন করে নাসির বেশ মর্মস্পর্শী লেখাটির শিরোনাম দিয়েছেন, ‘‘ক্ষুদ্রাকার তেলাপোকা ও পণ্ডিতমশাইয়ের পাটিগনিত’’৷ শিক্ষকদের অতি কষ্টে টিকে থাকা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জগতে অতিকায় হস্তি লোপ পায়, ক্ষুদ্রাকার তেলাপোকা ঠিকই থাকে৷ পণ্ডিতমশাইরাও কালে কালে ক্ষুদ্রাকার তেলাপোকা হয়ে টিকে থাকে এবং সহজ পাটিগনিতকে দু’চোখের জল দিয়ে গুলিয়ে ফেলে৷ অমানুষ হওয়ার সব ক’টা ধাপ পেরিয়ে পণ্ডিতমশাইরা কালে কালে আমাদের জ্ঞান দীক্ষা দিয়ে যান৷ আমরাও অমূল্য শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে দণ্ড নিয়ে খড়গহস্তে নেমে পড়ি৷ বিদ্যার উপযুক্ত দাম মেটাতে বিদেশ থেকে আনা পিপার স্প্রে দিয়ে অমূল্য শিক্ষকদের বরণ করি৷ তারপর প্রিয় ব্যক্তিত্বের জায়গায় কোনো এক শিক্ষকের নাম বসিয়ে আবেগী দু’চার পৃষ্ঠা লিখে পুরস্কার উঁচিয়ে ধরে শিক্ষকের শ্রাদ্ধ সারি৷’’
এ লেখায় সন্তান হয়ে প্রয়াত পিতার প্রতি নিজেও যে খুব সুবিচার করতে পারেননি তা স্বীকার করেছেন মো. নাসির৷শেষের অংশটুকুতে রয়েছে শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং শিক্ষামন্ত্রীর বিমাতাসুলভ আচরণের সমালোচনা৷ শেষ তিনটি বাক্য এরকম, ‘‘একদিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ জিডিপি, মাথাপিছু আয় ফুলে ফেঁপে উঠছে, অন্যদিকে পণ্ডিতমশাইরা পাটিগনিতকে কঠিন করে তুলছে৷ এমন বেমক্কা পণ্ডিতমশাইদের উপযুক্ত শিক্ষা না দিলে জাতির অবনমন কিছুতেই আটকানো যাবে না৷ এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে শেষ করছি৷’’
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ