চাইলেও যায় না পাওয়া
২১ জুন ২০১৩এভাবেই পশ্চিমের অনুকরণে ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত করে নাগরিকদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হতো তত্কালীন পূর্ব জার্মানিতে৷
জিনস
জিনসকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতীক বলে মনে করা হতো কমিউনিস্ট দেশগুলিতে৷ তবুও তত্কালীন পূর্ব জার্মান সরকার ১৯৭৮ সালে ১০ লক্ষ জিনসের ট্রাউজার বাজারে ছেড়েছিল আর মানুষ সে সব কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল৷ অন্যদিকে জিডিআর-এর ‘জিনস’ ‘ভিসেন্ট’ কিংবা ‘শ্যান্টি’ অনাদরে পড়ে থাকতো দোকানে৷ সেই জিনসগুলিকে আসল বলে মনেই হতো না৷
নাইলন
সাবেক জিডিআর-এ তৈরি আর একটি পদার্থের নাম ডেডেরোন৷ এটি দিয়ে জামা-কাপড়, পাতলা মোজা, অ্যাপ্রোন ইত্যাদি তৈরি করা হতো৷ রাসায়নিক দিক দিয়ে পশ্চিমের নাইলনের মতো পদার্থ এটি৷ কিন্তু সাবেক জিডিআর কর্তৃপক্ষ নাইলনের বদলে তাদের সমাজতান্ত্রিক বিকল্পটিকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু পশ্চিমের নাইলনের মোজাই ছিল সেখানে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷
কোকাকোলা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির নাগরিকরা তাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারতেন কোকাকোলা দিয়ে৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও জিডিআর কর্তৃপক্ষ তাঁদের সমাজতান্ত্রিক বিকল্প উপস্থাপন করেন৷ সেগুলির নাম ছিল ‘ক্লাবকোলা’ ও ‘ভিটাকোলা’৷ পশ্চিমের কোকাকোলার মতোই স্বাদ হতে হবে এই পানীয়গুলির, এমনটাই আশা ছিল উত্পাদকদের৷ কিন্তু চির প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসিকোলার মতোই কোকাকোলার কাছে হার মানতে হয় এইগুলির৷ বিশেষ করে ভিটাকোলার তিক্ত স্বাদ পশ্চিমের পর্যটকদের মোটেও ভালো লাগতো না৷
হ্যামবার্গার
১৯৮২ সালে গ্রিলেটার সঙ্গে পরিচিত হয় তৎকালীন পূর্ব জার্মানির মানুষ৷ পশ্চিমের হামবার্গারের অনুকরণে তৈরি এক খাদ্য৷ রেসিপিটা পরিচিত৷ একটি বন রুটির মাঝখানে কেটে দুই ফালি করা হয়৷ তারপর একটি মাংসের কিমা মাখা চ্যাপটা করে এই দুই ভাগের মধ্যে রেখে কিছু কেচাপ দিয়ে চেপে দেওয়া৷ ব্যস হয় গেল গ্রিলেটা৷ কিন্তু সাবেক পূর্ব জার্মানিতে কেচাপ ছিল দুর্লভ বস্তু৷ তাই এর বিকল্প এক ধরনের সস দিয়ে কাজ চালানো হতো৷
চকলেট
জিডিআর-এর চকলেটের স্বাদও ছিল কিছুটা ভিন্নরকম৷ চকলেটের বারে কোকোর ভাগ থাকতো মাত্র ৭ শতাংশ৷ আর সেই অভাব পূরণ করার জন্য চিনি, তৈলাক্ত পদার্থ, বাদামের ম্যাশ, মটরশুটি ব্যবহার করা হতো৷
সংগীত
শিল্প ও সংস্কৃতির দিক দিয়েও এই ধরনের অনুকরণ প্রবণতা অব্যাহত ছিল৷ বিটলস সংগীতকে ‘নোংরা’ বলে অভিহিত করলেও পশ্চিমের এই ধরনের কিছু সংগীত নিজেদের রেকর্ড কোম্পানির নামে বের করে পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ মূলের এক দুর্বল সংস্করণ বলা যায় এই সব সংগীতকে৷ এই কারণে পূর্ব জার্মানির কালো বাজারে আসল পশ্চিমা সংগীতের রেকর্ডের ধুম পড়ে গিয়েছিল৷
অ্যারোবিক
১৯৮০ এর দশকে পশ্চিমের অ্যারোবিকের ঢেউ পুবেও এসে পড়ে৷ কিন্তু অ্যারোবিক কথাটিতেও পুঁজিবাদের গন্ধ খুঁজে পান পুব কর্তৃপক্ষ৷ তাই অন্য একটি নাম দেন নৃত্যের তালে তালে করা জিমনাস্টিককে, আর তা হলো ‘পপজিমন্যাস্টিক’৷ পশ্চিম জার্মান টিভির অ্যারোবিক প্রোগ্রামের অনুকরণে পুবেও একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু হয়৷
কম্পিউটার
কম্পিউটারের উন্নয়নের দিক দিয়েও অনেকটা পিছিয়ে ছিল জিডিআর৷ আর তাই পুর্ব জার্মানির ইঞ্জিনিয়াররা পশ্চিমের মডেলকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন৷ ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের অল্প আগে কম্পিউটারের সিরিজ উত্পাদন শুরু হয়৷ কিন্তু তারপর সেগুলি পশ্চিমের কপি হিসাবে দোকানেই পড়ে থাকে৷
আজ আবার সাবেক জিডিআর-এর সামগ্রী ভালো বিক্রি হচ্ছে৷ জিডিআর-এর প্রতি নস্টালজিক বা স্মৃতিকাতর হয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন এই সব পণ্যের দিকে৷ তবে অনেক জিনিসই আর পুরোপুরি আগের মতো নয়৷ শুধু পুবের মোড়কটা জড়ানো থাকে ওপরে – এই যা৷ যেমন, সেই সময়কার পূর্ব জার্মান চকলেটে কোকোর পরিমাণ এখন চার গুণ বেড়েছে৷