‘শেক ইট’ শাকিরা
কলম্বিয়ার পপ গায়িকা শাকিরার বাবা আরব বংশোদ্ভূত, তাই শাকিরার নাচে বেলি-ড্যান্সিং-এর ছোঁয়া পাওয়া যায়, যেমন তাঁর গানে থাকে প্রাচ্যের হিল্লোল৷
কেন এত জনপ্রিয়?
কলম্বিয়ান এই সঙ্গীত তারকা শুধু গান নয়, তাঁর নাচের জন্যও বিখ্যাত৷ কণ্ঠেও আছে ভিন্নতা৷ সব মিলিয়ে তিনি একজন টোটাল পারফরমার৷
কলম্বিয়ার সুপারস্টার
১৯৭৭ সালের দোসরা ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বারাঙ্কিলায় এক পরিবারের আট সন্তানের কনিষ্ঠতম হিসেবে শাকিরার জন্ম৷ শাকিরা চিরকালের সফলতম লাতিন শিল্পীদের অন্যতম৷ তাঁর প্রথম অ্যালবাম বেরোয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে, কিন্তু তিনি নাম করেন তাঁর তৃতীয় গানের রেকর্ড ‘পিয়েস দিয়েসকালসস’ বা ‘খালি-পা’ দিয়ে৷ সেটা ছিল ১৯৯৬ সালে৷ ১৯৯৭-তে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে গিয়ে প্রযোজক এমিলিও এস্তেফানের সহযোগিতায় বিশ্বখ্যাত হন৷
উত্তর ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার মধ্যে সংযোগসূত্র
শাকিরা তাঁর প্রথম গ্র্যামি পান ২০০০ সালে, সেরা ল্যাটিন পপ অ্যালবামের জন্য৷ ২০০১ সালে বেরোয় তাঁর প্রথম ইংরেজি ভাষার অ্যালবাম ‘লন্ড্রি সার্ভিস’ এবং সেটা সোজা বিলবোর্ড চার্টের তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যায়৷ ২০০৬ সালে আসে শাকিরার দ্বিতীয় গ্র্যামি, এবার ল্যাটিন রক/অল্টারনেটিভ বিভাগে৷ সে বছরই তাঁর ‘হিপস ডোন্ট লাই’ গানটি সেরা গান হিসেবে এমটিভি’র ল্যাটিন অ্যামেরিকান অ্যাওয়ার্ড পায়৷
‘... মিথ্যে বলে না’
২০০৬ সালের গ্র্যামি জেতা ‘ওরাল ফিক্সেশন’ অ্যালবামটি থেকে ‘হিপস ডোন্ট লাই’ গানটি শাকিরার সেরা হিট গানগুলোর অন্যতম৷ মাত্র পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি লম্বা শাকিরার নাচে ও গানে তাঁর কলম্বিয়ান, স্প্যানিশ, ইটালীয় ও লেবাননী বংশধারার ছাপ পাওয়া যায়৷
শাকিরা ও ফুটবল
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফুটবল বিশ্বকাপের কথা ভাবলেই মনে পড়বে ‘ওয়াকা ওয়াকা’৷ শাকিরার গানটি ছিল টুর্নামেন্টের থিম সং; ইউটিউবে একশ’ কোটিবার দেখা হয়েছে গানের ভিডিওটি৷ সে বছরই বাজারে আসে শাকিরার প্রথম সেন্ট, যার নাম রাখেন ‘এস’৷
পুরাতন প্রেমিক
প্রায় দশ বছর ধরে শাকিরার জীবনে যে পুরুষটি ছিলেন, তাঁর নাম আন্তোনিও দে লা রুয়া, আর্জেন্টিনার এক সাবেক প্রেসিডেন্টের পুত্র৷ ২০০১ সালে শাকিরা দে লা রুয়া’র বাগদত্তাও হন৷ কিন্তু দু’জনার ছাড়ছাড়ি হয়ে যায় ২০১০ সালে৷ দে লা রুয়া শাকিরার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা করেন৷ তিনি নাকি শাকিরার ক্যারিয়ার ম্যানেজ করতেন৷ শেষমেশ মামলা খারিজ হয়ে যায়৷ ছবিতে দু’জনকে দেখা যাচ্ছে লাস ভেগাসে, ২০০৭ সালে৷
ফুটবলার সঙ্গি
স্পেনের ফুটবল খেলোয়াড় জেরার্ড পিকে’র সঙ্গে শাকিরার সম্পর্কে জড়ান ২০১০ সালে৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের সময় থেকেই নাকি দু’জনের ঘনিষ্ঠতা৷ শাকিরার চেয়ে তিনি ঠিক দশ বছরের ছোট৷ তবে দু’জনের জন্ম একই দিনে৷ তাঁদের দুই ছেলে মিলান আর সাশার জন্ম ২০১৩ আর ২০১৫ সালে৷ ২০২২ সালে তারা সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসেন৷
ওয়াক অফ ফেম
শাকিরা হলিউডের ওয়াক অফ ফেম-এ স্থান পান ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে৷ শাকিরার নিজের বাড়ি আছে মায়ামিতে, বাহামায়, তাঁর জন্মের শহর বারাঙ্কিলায় আর বার্সেলোনাতে৷
বেয়ারফুট ফাউন্ডেশন
শাকিরা খালি পায়ে নাচতে ভালোবাসেন; তাই নিজের চ্যারিটির নাম রেখেছেন পিয়েস দিয়েসকালসস নিধি বা বেয়ারফুট ফাউন্ডেশন৷ এই সংগঠনের উদ্দেশ্য তাঁর স্বদেশ কলম্বিয়ার শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা৷ ছবিতে শাকিরাকে কলম্বিয়ার কার্তাজেনা দে ইন্দিয়াস শহরে একটি স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে৷
‘দ্য ভয়েস’
মার্কিন এনবিসি টেলিভিশনের ‘দ্য ভয়েস’ টিভি শো-তে শাকিরা জুরির সদস্য হন ২০১৩ সালে৷ তাঁর সঙ্গে জুরিতে ছিলেন আরঅ্যান্ডবি আর্টিস্ট আশার-এর মতো শিল্পী৷ সেটা ছিল চতুর্থ সিজন৷ তারপর পঞ্চম সিজন বাদ দিয়ে শাকিরা আবার ষষ্ঠ সিজনে ‘দ্য ভয়েস’-এর জুরি হয়েছেন৷
চপলা হরিণ
অ্যানিমেটেড অর্থাৎ কার্টুন ছবি ‘জুটোপিয়া’-য় ‘গ্যাজেল’ অর্থাৎ হরিণের চরিত্রটিতে কণ্ঠ দেন শাকিরা, যেমন তার ইংরেজি, তেমন তার স্প্যানিশ সংস্করণে৷ ছবিটিতে তিনি ‘ট্রাই এভরিথিং’ শীর্ষক গানটি গান৷ ‘জুটোপিয়া’ সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম হিসেবে একটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’ জয় করে৷
ইউনিসেফের গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর
শাকিরা ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর৷ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ডাভোসের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে গিয়েছিলেন শিক্ষার জন্য প্রাচারণা করতে৷ এখানে তিনি শোয়াব ফাউন্ডেশনের ক্রিস্টাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন: এই পুরস্কার সেই সব শিল্পীকে দেওয়া হয়, যাঁরা বিশ্বের উন্নতির জন্য সচেষ্ট৷
প্রতিবেদন: কেট ম্যুজার/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী