গ্রিসের জন্য আর্থিক সহায়তার পথ প্রশস্ত হলো
২৬ মার্চ ২০১০সহায়তার রূপরেখা
শেষ পর্যন্ত সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না৷ নিয়ম ভেঙে সরাসরি সাহায্যের পথে না গিয়েও চরম দুর্দিনে গ্রিসের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হল৷ এই আপোশ সমাধানসূত্রের মূল হোতা জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি৷ ইউরো এলাকার নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে তাঁদের প্রস্তাব মেনে নিল বাকি দেশগুলি৷ এই রফা অনুযায়ী ইউরো এলাকার কোনো দেশ যদি ব্যাপক ঋণের বেড়াজালে আটকে পড়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের মত তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল৷ ইউরো এলাকার দেশগুলিও নিয়ম বাঁচিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরে আংশিক সাহায্য করতে পারবে৷ তবে একেবারে চরম পরিস্থিতি না দেখা দিলে এমন সহায়তার প্রশ্ন উঠবে না৷
সহায়তার অঙ্ক
গ্রিসের বর্তমান সঙ্কটের ক্ষেত্রে এই সহায়তার রূপরেখা হবে এরকম৷ ধারণা করা হচ্ছে, সঙ্কট কাটাতে গ্রিসের ২,২০০ থেকে ৩,০০০ কোটি ইউরো প্রয়োজন হবে৷ এর মধ্যে আইএমএফ বড়জোর ১,০০০ থেকে ১,২০০ কোটি ইউরো যোগান দিতে পারে৷ অর্থাৎ ইউরো এলাকার দেশগুলিকে বাকি ২,০০০ কোটি ইউরো দিতে হবে৷ ইউরো এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে জার্মানিকেই এই বকেয়া অর্থের সিংহভাগ বহন করতে হবে – এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷
সহায়তার পরিণতি
এতো গেল আর্থিক সাহায্যের রূপরেখার কথা৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, গ্রিসের জন্য এই সাহায্যের পরিণতি কী হবে? গ্রিস কি আদৌ বাইরে থেকে এই সাহায্য নিতে চাইবে? জার্মান সরকার শুরু থেকেই এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে আসছে৷ অর্থাৎ আপদকালীন এই সাহায্য প্রস্তুত রাখা হলেও গ্রিসকে হয়তো বাস্তবে এই সাহায্য নিতে হবে না৷ নিজস্ব নীতি ও পদক্ষেপের মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসবে সেদেশ৷ কিন্তু গ্রিস যদি এই আর্থিক সাহায্য বা তার অংশবিশেষ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, সেক্ষেত্রেও অনেক শর্ত মেনে চলতে হবে৷ তাছাড়া ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ইউরো এলাকার ১৬টি দেশ একযোগে সিদ্ধান্ত নিলে তবেই ইউরোপীয় স্তরে গ্রিসের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া যাবে৷
ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা
আপাতত গ্রিসের সঙ্কট না হয় কোন না কোন ভাবে দূর করা সম্ভব হল, কিন্তু এই দৃষ্টান্ত থেকে উৎসাহ পেয়ে ভবিষ্যতে ইউরো এলাকার অন্য কোন দেশ যদি নিয়ম ভেঙে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে চলে, সেই বিপদ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? চলতি বছরের শেষের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের এক কমিটি সেক্ষেত্রে আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা ও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেবে৷ তাছাড়া জাতীয় বাজেটের উপর আরও উন্নত নজরদারি সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখে গোটা কাঠামো ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও শোনা যাচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম